সোমবার ● ৬ মে ২০১৯
প্রথম পাতা » অপরাধ » ৮০ বছরের বৃদ্ধা মা’কে হালুয়াঘাট থেকে এনে রাস্তায় ফেলে গেলো মেয়ে
৮০ বছরের বৃদ্ধা মা’কে হালুয়াঘাট থেকে এনে রাস্তায় ফেলে গেলো মেয়ে
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি :: ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থেকে ৮০ বছরের বৃদ্ধা মাকে এনে ময়মনসিংহ নগরীর রাস্তায় ফেলে গেলো তারই মেয়ে। ‘বাবা আমার একটা ব্যবস্থা কইরা দেন, আমি কই যামু, রাতে চোখে দেহি না, আমার কেউ নাই’ অঝরে কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন রাস্তার পাশে পড়ে থাকা ৮০ বছরের বৃদ্ধা হামিদা খাতুন। বৃদ্ধা মহিলার কান্না দেখে এ ব্যাপারে প্রশাসনের সহায়তা কামনা করেছেন স্থানীয়রা।
বিলাপের সুরে বৃদ্ধা হামিদা খাতুন বলতে থাকেন, রবিবার ৫ মে সকালে উঠে হাত মুখ ধোয়ার পর একটা রুটি খাওয়াইছে। এরপর বলে চল, আজকে তরে থইয়াইব (রেখে আসব)। আইজ তরে মমসিং (ময়মনসিংহ) থইয়া আসব।
তিনি আরো বলেন, আগে আমারে অনেক দেখছে, ইদানীং কের লাইগা আমার লগে এমডা লাগাইছে। সে কয় তুই আমার মা না, আমি তোর মাইয়া না। আমারে কয় এইহানে বইয়া বইয়া খাস, তোর বাপ দাদার কামাই? কিছু দিছস আমারে? এই কয়ে আমারে গাড়িত তুলে এইহানে রাইখা চইলা গেছে। যাওয়ার সময় আমি কইছি আমারে খাওয়ার কিছু দিয়া যা, রাও করল না, দৌড়ইয়া গেছে গা।’
স্থানীয় পান দোকানি সুজনের চোখে পড়ে রবিবার সকালের এ নিষ্ঠুর ঘটনা। তিনি বলেন, মধ্যবয়সী এক নারী একটি অটোরিকশায় ওই বৃদ্ধাকে এনে এখানে ফেলে রেখে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা হলেও কেউ নিতে আসেনি।
জানা যায়,এই নারীর স্বামী নঈমুল্লা। এক সময় ময়মনসিংহ শহরের সি.কে. ঘোষ রোড এলাকায় পান সিগারেটের ব্যবসা করতেন। তিনি মারা গেছেন প্রায় এক যুগ আগে। এরপর থেকে স্বামীর মতো তিনিও ওই এলাকার একটি মার্কেটের সামনে সিগারেট বিক্রি করতেন। বছর পাঁচেক আগে বার্ধক্যের ভারে আশ্রয় মেলে বড় মেয়ে পলির কাছে। সেখানে লাঞ্ছনা, অপমান আর মারধর ছিল নিত্যদিনের ঘটনা।
ছোট মেয়ে মলি। সেও খবর নেয় না। রবিবার সকালে বড় মেয়ে পলি একটি অটোরিকশায় করে হালুয়াঘাট থেকে এনে সি.কে. ঘোষ রোডের একটি মার্কেটের সামনে ফেলে রেখে যায়।সন্ধ্যার পরও রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় কয়েকজনের সহায়তায় প্রেসক্লাব মার্কেটের পরিছন্নতাকর্মী আঁখির তত্ত্বাবধানের সাময়িকভাবে তুলে দেয়া হয় হামিদাকে।
আখি বলেন, আমারও বাবা মা আছেন। একজন বৃদ্ধা এভাবে রাস্তায় পড়ে থাকবে, এটা আমার কাছে খারাপ লাগছে। তাই বিবেকের তাড়নায় আমার বাসায় নিয়ে যাচ্ছি। তাকে আমি আগে থেকেই চিনি। নানি বলে ডাকি।
প্রেসক্লাবের এমএলএসএস শহীদ বলেন, এই নারীকে অনেক দিন ধরে চিনি। তার স্বামী মারা যাওয়ার পর আমি একটি বাক্স দোকান বানিয়ে দিয়েছিলাম। সেখানে সে সিগারেট বিক্রি করত। আর রাতে আবাসনে একজনের ঘরে আশ্রিতা হিসেবে থাকতো।