সোমবার ● ৬ মে ২০১৯
প্রথম পাতা » অপরাধ » যৌতুকের দাবিতে ঝিনাইদেহে গৃহবধুকে হত্যা
যৌতুকের দাবিতে ঝিনাইদেহে গৃহবধুকে হত্যা
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: ঝিনাইদেহের শৈলকুপায় আবারো যৌতুকের টাকার দাবিতে এক গৃহবধুকে হত্যা অভিযোগ উঠেছে। ঝিনাইদহ শহরের পুরাতন হাটখোলা পাড়ার বাবুল মোল্লার মেয়ে ও এক সন্তানের জননী রুমকি খাতুন (২৪) কে মধ্যযুগীয় কাইদায় যৌতুকের টাকার দাবিতে নির্যাতন করে ওড়নায় ফাঁস দিয়ে লাগাইয়া ঝুলাইয়া হত্যা করে গৃহবধু রুমকি খাতুনের স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন। ঘটনাটি ঘটেছে ৪ই মে শনিবার শৈলকুপা থানার ভাটই বাজার সংলগ্ন ভগবান নগর গ্রামে। ঘটনার পর থেকেই আসামীরা সবাই পলাতক রয়েছে। এ বিষয়ে শৈলকুপা থানায় একটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০(সংশধোন ২০০৩) এর ১১(ক)/৩০ রুজু করা হয়েছে। যার মামলা নং ০৪, তারিখ ০৪/০৫/২০১৯ ইং। কিন্তু দুইদিন হয়ে গেলে ও আসামী গ্রেফতার না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছে নিহতের পরিবার। মামলার এজাহার সুত্রে জানাগেছে, শৈলকুপা থানার ভগবান নগর গ্রামের আসামী ১। জাকির হোসেন মোল্লা (৩৫), পিতা-হারুন মোল্লা, ২। হারুন মোল্লা (৫৫), পিতা মৃত. বারাক আলী মোল্লা। ৩। মোছা: ডালিম বেগম (৫০), স্বামী - মো: হারুন মোল্লা ৪। মো: ফজলুর রহমান মোল্লা (৫০), পিতা মৃত-মনির উদ্দিন মোল্লা সহ অজ্ঞত নামা আরও ২/৩ জনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০(সংশধোন ২০০৩) এর ১১(ক)/৩০ রুজু করা হয়েছে। উপরোক্ত ১নং আসামীর সহিত প্রায় ৭ বছর পূর্বে বাবুল মোল্লার মেয়ে রুমকি খাতুন (২৪) এর বিবাহ হয়। সাংসারিক জীবনে তাদের একটি ৩ বছরের ছেলে সন্তান আছে, যার নাম জিহাদ মোল্লা। বিবাহের সময় রুমকি খাতুনের সাংসারের কথা চিন্তা ভাবনা করে বাবুল মোল্লা ২টি সোনার চেইন যার ওজন ২ভরি মূল্য আনুমানিক ৮৮,০০০ হাজার টাকা, নগদ ৫০,০০০ টাকা, একটি আংটি ওজন অনুমান ৮ আনা মূল্য ২২,০০০ টাকা, ১ জোড়া কানের দুল ওজন ১ ভরি মুল্য ৪৪,০০০ টাকা সর্ব মোট ২,০৪০০০ টাকার মালামাল সহ ঘর গোছানোর জন্য যাবতিয় মালামাল প্রদান করে। বিবাহের কিছুদিন পর হতেই ১নং আসামী অন্যান্য আসামীদের কুপরামর্শে পুনরায় রুমকি খাতুনের নিকট ৪০,০০০ টাকা দাবী করিতে থাকে। আসামীদের দাবী কৃত যৌতুকের টাকা রুমকি খাতুন দিতে অস্বিকার করলে আসামীগন রুমকি খাতুনকে শারীরিক নির্যাতন করিতে থাকে এবং তাকে খুন করিয়া ফেলিবে মর্মে হুমকি প্রদান করে। ৪ই মে/২০১৯ তারিখ শনিবার সকাল অনুমান ৯.০০ ঘটিকার সময় উপরোক্ত আসামীরা রুমকি খাতুনের নিকট যৌতুকের টাকা দাবী করিলে সে যৌতুকের টাকা দিতে অস্বিকার করিলে উপরোক্ত আসামীরা তাহাদের বসত বাড়ীতে রুমকি খাতুনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ভাবে মারপিট করিয়া ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। ঐদিন সকালে আসামীদের প্রতিবেশী জনৈক সাথী খাতুন (২৫), স্বামী মো: জনী, তার মোবাইল নং ০১৪০৩৮৫২৪৫৩ হতে বাবুল মোল্লার মোবাইল ০১৭৪২৭৩৪৯১১ তে কল করে বলে যে, বাবুল মোল্লা তোমার মেয়ে রুমকি খাতুন মারা গেছে। সে সময় বাবুল মোল্লার উক্ত সংবাদ পেয়ে সে সহ নিজ পাড়া ঝিনাইদহ শহরের পুরাতন হাটখোলা পাড়ার স্বাক্ষী ১। মোছা: মনজিলা খাতুন (৪০) স্বামী-মো: বাবুল মোল্লা ২। আমিরুল ইসলাম (৩৫) পিতা মৃত. খলিল শেখ ৩। উজ্জল শেখ (৫৫) পিতা মৃত. মুনতাজ শেখ সহ সবাইকে নিয়ে আসামীদের বাড়িতে গিয়ে দেখতে পায় যে, বাবুল মোল্লার মেয়ে রুমকি খাতুন ১নং আসামীর বসত ঘরের পাশের রুমে আড়ার সহিত ঝুলন্ত অবস্থায় এবং রুমকি খাতুনের বাম পায়ের হাটুর নিচে ডান হাতে ব্যাপক আঘাতের চিহ্ন আছে। আসামীগন পরষ্পর যোগসাজোসে যৌতুকের টাকার দাবিতে তাকে হত্যা করেছে। আসামীরা উক্ত হত্যা কান্ডকে আত্মহত্যা বলে ধামা চাপা দেওয়ার জন্য রুমকি খাতুনের মৃত দেহ ১নং আসামীর বসত বাড়ির রুমের আড়ার সাথে গলায় ওড়না দ্বারা ফাঁস লাগিয়ে ঝুলিয়ে রাখে। এ বিষয়ে (শৈলকুপা সার্কেল) সিনিয়র এসপি তারেক আল্ মেহেদী সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনায় শৈলকুপা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০(সংশধোন ২০০৩) এর ১১(ক)/৩০ ধারায় একটি মামলা হয়েছে। ভিকটিমের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন আছে, তারপরেও পোষ্ট মর্টেম রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত আসামীদের গ্রেফতার করা হবে না।
উল্লেখ্য, গত এপ্রিল মাসে/২০১৯ ইং শৈলকুপা উপজেলার গোয়াল খালি গ্রামে স্বামী-শ্বাশুড়ীর বিরুদ্ধে গৃহবধুকে হত্যার অভিযোগে লাশ নিয়ে সড়ক অবরোধ করেছে ও ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বাসীদেবপুর গ্রামে গৃহবধু শাপলার লাশ নিয়ে বিক্ষোভ ও মানব বন্ধন করেছে নিহতের পরিবার ও আত্বীয় স্বজন। এদিকে সুশিল সমাজ ও স্থানীয়রা এ ধরনের হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
ঝিনাইদহে ব্যাঙের ছাতার মতো অটিস্টিক স্কুল প্রতিষ্ঠার হিড়িক: শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বানিজ্য তুঙ্গে
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: ঝিনাইদহে প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয় গড়ে তুলতে কোন নিয়মনীতির মানা হচ্ছে না। ফলে জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে যত্রত্তত্র গড়ে উঠছে এই স্কুল। কাড়ি কাড়ি টাকা দিয়ে বেকরা যুবক যুবতীরা চাকরী নিচ্ছে এ সব স্কুলে। এদিকে ব্যাক ডেটে স্কুল প্রতিষ্ঠার এই প্রতিযোগতার মধ্যে ঝিনাইদহ সমাজসেবা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কর্তৃক তালিকাভুক্ত একজন রাজাকারের নামেও স্কুল তৈরী করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই স্কুলটি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের একটি ইউনিয়নে অবস্থিত। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অটিস্টিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নেই কোন প্রশিক্ষণ বা গারিগরী জ্ঞান। ফলে অটিজম কিংবা প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। মুলত বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কৌশল হিসাবে এ সব প্রতিবন্ধি স্কুল ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। তবুও মানহীন স্কুলগুলো বন্ধে নেই কোন পদক্ষেপ। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি উপজেলায় একটি করে প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা থাকলেও ঝিনাইদহে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গড়ে উঠেছে ২১ প্রতিবন্ধি স্কুল। এর ৯৫ ভাগ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নেই কোন বিএসএড (শিশুর জন্য বিশেষ শিক্ষাদান প্রশিক্ষণ) প্রশিক্ষণ। ফলে প্রচলিত পদ্ধতিতেই এসব শিশুদের পাঠদান করা হচ্ছে। স্থানীয় কিছু ব্যক্তিদের মাধ্যমে কমিটি গঠন করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে দেওয়া হচ্ছে শিক্ষক নিয়োগ। কোন কোন প্রতিষ্ঠান আবার পরিত্যাক্ত বিদ্যালয়ের ভবন ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে। কিছু এনজিও এগুলোর পিছনে কাজ করছে। সরেজমিন পরিদর্শন করে জানা দেখা গেছ, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার যাত্রাপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যাক্ত স্কুলে ২০১৫ সাল থেকে চলছে জহুরা বেগম অটিস্টিক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। এই অটিস্টিক বিদ্যালয়ের নেই অধিকাংশ ক্লাস রুমে জানালা-দরজা। হাজী আমজাদ আলী অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের ১৬ জন শিক্ষকের মাত্র ৫ জনের রয়েছে মাত্র এক মাসের নিউরো ঢেভেলপমেন্টালী ডিজএ্যাবিলিটি প্রশিক্ষণ। এই প্রশিক্ষণ দিয়েছে রান ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি নামের একটি এনজিও। অন্যদের কোন প্রশিক্ষণই নেই। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলেন, আমাদের কোন প্রশিক্ষণ নেই, তবে প্রশিক্ষণ নেওয়ার চেষ্টা করছি। সদর উপজেলার হলিধানী মো: আ: রশিদ মিয়া বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য মনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের নিজস্ব কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়। কোন টাকা নেওয়া হয়না, ঝিনাইদহ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কনক কান্তি দাস বলেন, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে কাজ করে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। কাজেই সেই সুনাম ধরে রাখতে এবং শিক্ষার সঠিক মান নিশ্চিতে রাতারাতি গড়ে ওঠা এসব ভুইফোড় অটিস্টিক বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ঝিনাইদহ সমাজ সেবা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক জাহিদুল আলম বলেন, ঝিনাইদহের ৬ উপজেলায় ২৬ হাজার ৯ শ’ ৮ জন প্রতিবন্ধ শিশু রয়েছে। যার মধ্যে অটিস্টিক শিশু রয়েছে ৩৩৫ জন। তিনি বলেন, যত্রতত্র প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়গুলো সমাজ কল্যাণ মন্ত্রনালয় থেকে অনুমোদন নিয়ে কার্যক্রম চালায়। মন্ত্রনালয়ের চাহিদার প্রেক্ষিতে আমরা এর সঠিক প্রতিবেদন দিই। কিন্তু এগুলো বন্ধ বা ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব আমাদের না। ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, বিধিমালা অনুযামী প্রতিটি উপজেলায় একটি করে অটিস্টিক বিদ্যালয় থাকার কথা। কিন্তু কিছু মানুষ ব্যক্তিগত স্বার্থে টাকার বিনিময়ে এগুলো করছে। প্রতিবন্ধী বা অটিস্টিক শিশুদের শিক্ষার মান নিশ্চিতে করতে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে শতভাগ সাফল্য
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় (২০১৯) শতভাগ জিপিএ-৫ পেয়েছে। সোমবার যশোর শিক্ষা বোর্ড থেকে এ ফলাফল ঘোষনা করা হয়। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় ৫৫ জন ক্যাডেট অংশ গ্রহন করে সকলেই জিপিএ-৫ পেয়েছে। ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো: আতিকুর রহমান জানান, প্রতিবারের ন্যায় এবারের এসএসসি পরীক্ষায় ৫৫ জন অংশ গ্রহন করে সবাই জিপিএ-৫ পেয়েছে। এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে ক্যাডেট কলেজের মনোরম পরিবেশ, শিক্ষার্থীদের অধ্যবসায়, সন্তানদের প্রতি অভিভাবকদের সচেতনতা আর শিক্ষকদের একান্ত প্রচেষ্টাই ভাল ফলাফলের মূল কারন বলে তিনি জানান।