বৃহস্পতিবার ● ৭ জানুয়ারী ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » গাজীপুরে কিশোর মজু হত্যাকান্ড, মামলা হলেও গ্রেফতার হয়নি আসামী
গাজীপুরে কিশোর মজু হত্যাকান্ড, মামলা হলেও গ্রেফতার হয়নি আসামী
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: গাজীপুরের টঙ্গীতে কিশোর মোজাম্মেল হক মজু (১২) হত্যাকান্ডের এক দিন পর অবশেষে মামলা নিলেও কোন আসামীকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ৷ মামলায় আওয়ামীলীগ নেত্রী নাসিমা আক্তার নাসরিন, তার স্বামী সুমন মিয়া, তাদের দোকান ম্যানেজার পিচ্চি সুমন ও কর্মচারি মানিককে এজাহারভূক্ত আসামী করা হয়েছে৷ মামলা হওয়ার পরও আওয়ামীলীগ নেত্রী নাসরিনকে সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে এলাকায় একাশ্যে মহরা দিতে দেখা গেছে৷ লাশ নিয়ে মিছিল করায় বসত্মিবাসীদেরকে লাঠিপেটা করার হুমকি দেয়া হচ্ছে৷
স্থানীয় তিসত্মার গেট জিআরপি ব্যারাক সংলগ্ন বসত্মিতে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিবেশীরা নিহত মজুর বাবা-মাকে শানত্মনা দিতে বসত্মিতে ভির করছেন৷ সাংবাদিকদের দেখে হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন মজুর মা বকুল বেগম৷ বিলাপ করে তিনি বলেন, ‘সকালে আমার বাবারে বাসায় রাইখ্যা আমি কামে যাই৷ বিকালে কাম থেইক্যা ফিরার পথে সুমন আমারে কয় তোমার পোলা কই৷ তহনই আমি রাসত্মায় রাইখ্যা আমার বাবারে সব বসত্মি খুঁজি৷ কিন্তু কোথাও পাই নাই৷ আসার সময় দেহি সুমনের দোকান বন্ধ৷ যদি জানতাম আমার বাবারে ভিতরে আইটক্যা রাখছে তাইলে কি আমি ওহান থেইকা আইতাম৷’ ‘আমার বাবা ডরে কইলজ্যা ফাইট্যা মইরা গেছে৷ শুনছি আমার বাবা পানি চাইছিল, তারে পানিও খাইতে দেই নাই৷’
মজুর বাবা জামাল আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি মুহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিককে জানান, তিনি টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশনে একজনের গদিতে জুতায় কালির কাজ করেন৷ মাহাজন (ভাঙ্গারির দোকান মালিক সুমন) মারধর করায় তার ছেলে মজু তিন দিন ধরে অসুস্থ৷ ফলে মজু অসুস্থতার কারণে তিন দিন ধরে সুমনের দোকানে কাজে যাচ্ছিল না৷ সোমবার সকালে সুমন ও তার স্ত্রী নাসরিনের নির্দেশে তাদের কর্মচারি পিচ্চি সুমন খালি বাসা থেকে মজুকে ধরে নিয়ে যায়৷ এর পর দোকানের ভেতর মজুকে শিকল দিয়ে বেঁধে সুমন, নাসরিন ও তাদের কর্মচারিরা শারীরিক নির্যাতন চালায়৷ মজুর কান্নার আওয়াজ যাতে কেউ না শুনতে পায় সেজন্য উচ্চ স্বরে সাউন্ড বঙ্ েগান বাজানো হয়৷ নির্যাতনের এক পর্যায়ে মজুর মৃত্যু হলে তারা দোকানের ভেতর লাশ ফাঁসির মত ঝুলিয়ে রেখে বাহির দিক থেকে তালা দিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালায়৷
ইতিমধ্যে ঘটনা ফাঁস হয়ে গেলে স্থানীয়দের মাধ্যমে পুলিশ খবর পেয়ে দোকানের তালা ভেঙ্গে মজুর ঝুলনত্ম লাশ উদ্ধার করে৷
এদিকে কিশোর মজু হত্যাকান্ডের পর আওয়ামীলীগ নেত্রী নাসরিন ও তার স্বামী সুমনের বিরম্নদ্ধে মুখ খুলতে শুরম্ন করেছেন স্থানীয় বসত্মিবাসীরাও৷ মজু হত্যাকান্ডের সংবাদ প্রকাশের পর বিভিন্ন মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিকরা এলাকায় গেলে বসত্মিবাসীরা নেত্রী নাসরিন ও তার স্বামী সুমনের নানা অপকর্মের চিত্র তুলে ধরেন৷
তারা আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি মুহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিককে জানান, বসত্মির অসহায় দরিদ্র মানুষগুলোকে জোরপূর্বক নাসরিনের ভাঙ্গারির দোকানে কাজ করতে বাধ্য করা হতো৷ অপরদিকে নেত্রী নাসরিন মিথ্যা প্রলোভনে ফেলে অথবা জোরপূর্বক বসত্মির সুন্দরী মেয়েদেরকে নেতাদের মনোরঞ্জনের জন্য বাধ্য করতো৷ কেউ রাজি না হলে তাকে ইয়াবা ট্যাবলেট দিয়ে ডিবি পুলিশে দেওয়ার হুমকি দেয়া হতো৷ তার দোকানে কাজ করতে রাজি না হওয়ায় মজু হত্যাকান্ডের তিন দিন আগে মজুর খালা রেনু ও খালু আব্দুল বারেককে বসত্মি থেকে ধরে নিয়ে দোকানে শিকল দিয়ে বেঁধে দিনভর নির্যাতন করা হয়৷ একইভাবে বসত্মির আরেক মহিলা রাবিয়াকে দোকানে আটকে মারধর করে দাঁত ভেঙ্গে দেয়া হয়৷ রাবেয়ার ছেলে সুজনকেও জোরপূর্বক কাজ করতে বাধ্য করা হয়৷ নির্যাতনের কারণে সুজন দোকানে যেতে রাজি না হওয়ায় তাকেও দোকানের ভেতর বেঁধে বেদড়ক পিটুনী দেয়া হয়৷ এ ঘটনার পর গত এক মাস ধরে সুজনকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে রাবেয়া অভিযোগ করেন৷
উলেস্নখ্য, ৪ জানুয়ারি সোমবার টঙ্গীর ফাইসন্স রোডের তিসত্মার গেইট এলাকায় স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয় সংলগ্ন ভাঙ্গারির দোকানে কিশোর মোজাম্মেল হক মজুকে হত্যার পর লাশ দোকানের ভেতর ঝুলিয়ে রাখা হয়৷ এব্যপারে টঙ্গী থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই হাসানুজ্জামান জানান, মামলা হয়েছে৷ আসামি গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে৷