শনিবার ● ১৮ মে ২০১৯
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » তীব্র পানি সংকটে আলীকদমের জনগণ
তীব্র পানি সংকটে আলীকদমের জনগণ
আলীকদম (বান্দরবান) প্রতিনিধি :: ভোর বেলা এসে কলসি নিয়ে লাইনে দাঁড়াই, সিরিয়াল পেতে পেতে বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা। ততক্ষনে হয়ত টিউবওয়েলের পানি শেষ। কোন রকম এক কলসি পানি পেলে খাবার পানির বিষয়টা মিটিয়ে নিই। এবাবে চলছে আমাদের জীবন। এভাবেই পানি সংকটের কথা বর্ণনা করলেন উপজেলার ভারতমোহন পাড়ার জনৈক চাকমা গৃহীনি। বান্দরবানের আলীকদমে নিরাপদ পানির অভাবে জর্জরিত জনজীবন। পানীয় ও ব্যবহার্য জলের জন্য হাহাকার নেমে এসেছে আলীকদমের কয়েক হাজার পরিবারের মধ্যে। শত শত রিংওয়েল আর নলকূপ থাকা সত্বেও পানির সংকট কাটিয়ে উঠতে পারছেনা এলাকার লোকজন। কেউ এক কলসি আর কেউ আদা কলসি। এই নিয়ে চলে রোজকার পানিভিত্তিক কর্মযগ্য।
হাস্যকর হলেও সত্যি যে, পান বাজার এলাকার জনৈক ব্যক্তি বর্ণনা করেন যে, তিনি গভির রাতে হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে দেখতে পান তার পাশে বিছানায় তার বৌ নেই। তিনি চুপচাপ অনেক খোঁজাখুজি করার পর না পেয়ে এলাকা বাসীকে জানাতে বাধ্য হলেন। এই নিয়ে এলাকায় হৈ চৈ পড়ে যায়। অবশেষে দেখা যায় রাতে আঁধারে তার বৌ এক কলসি পানি আনার জন্য ছুটে যায় টিউবওয়েলের দিকে।
আলীকদম উপজেলা যুবলীগ নেতা মোঃ নুর আলমকে সাথে নিয়ে এপ্রতিনিধি সরেজমিনে ঘুরে দেখেন উপজেলার বেশ কিছু এলাকা। উপজেলার নয়াপাড়া, থানা পাড়া, ছাবের মিয়া পাড়া, পানবাজার, উত্তর পালং পাড়া, ভারত মোহনপাড়া, মহলুপাড়া, পূর্ব সিলেটি পাড়া, রোয়াম্ভূ, পালংপাড়া, দক্ষিণ পূর্ব পালংপাড়া, রেপারপাড়াসহ এসব এলাকায় রয়েছে শত শত রিংওয়েল, নলকুপ ইত্যাদি। তার মধ্যে হাতে গোনা দুএকটি রিংওয়েল ছাড়া সবগুলোই অকেজো। তবুও কেন এত পানি সংকট তা নিয়ে জনমনে রয়েছে ক্ষোভ। যুবলীগ নেতা নুর আলম জানায় প্রতি বছর যেসব রিংওয়েল বরাদ্ধ আসে তা সময় মত স্থাপন না করে। বর্ষা মৌসুমকেই বেছে নেয়া হয়। কারণ বর্ষা মৌসুমে মাটি ভেজা থাকার কারণে সামান্য পরিমানে খোদাই করলেই পানি পাওয়া যায়। কিন্তু সেই রিংওয়েলগুলো শুকনো মৌসুম এলেই শুকিয়ে যায়।
উপজেলার পান বাজার এলাকায় ব্যবসায়ীরা জানায় বড়জোর দুএকশ লিটার পানি বিক্রয় করলেও এলাকায় পানি সংকটের কারণে তারা বিক্রয় করেন কায়েক হাজার লিটার পানি। বাজার থেকে পানি ক্রয় করতে না পারলে হয়ত অনেকের ইফতারটাও ভালভাবে করা হয়না। সফুর গোনার এলাকার এক পরিবার প্রধান জানায় আমরা যে পানি দিয়ে চাউল এবং শাক-সবজি পরিষ্কার করি সেই পানি আমরা ফেলে দিই না, সেই পানি দিবাচ্চাদের গোশল আর ধোয়ামোছার কাজ এমনকি টয়লেটের কাজও সারতে হয়।
উপজেলা পানির এমন সংকটের কথা জানতে চাইলে আলীকদম উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মোঃ মনির আঙ্গুল তুললেন উপজেলা স্থানীয় সরকারী প্রকৌশলী (এলজিইডি)র দিকে। তিনি বলেন যেসব রিংওয়েলগুলোতে পানি পাওয়া যাচ্ছেনা সেগুলো সবই আমাদের নয়। এর মধ্যে এনজিও, এলজিইডি এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে করাও আছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সারাদেশে গ্রীষ্ম মৌসুমে পানির লেয়ার অনেক নিচে নেমে গেছে। আমরা নিজেরাও পানির জন্য সমস্যায় আছি।