সোমবার ● ২০ মে ২০১৯
প্রথম পাতা » কুষ্টিয়া » কুষ্টিয়ার রানা’র ১৯ বছরে ৪ বিয়ে
কুষ্টিয়ার রানা’র ১৯ বছরে ৪ বিয়ে
আব্দুল মুনিব, কুষ্টিয়া :: মাত্র ১৯ বছর বয়সে ৪টি বিয়ে করে এলাকায় রীতিমত আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন রানা নামের এক যুবক। তবে আগের তিনটি স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন তিনি। এরপর সর্বশেষ ২০ জুলাই স্কুল পড়ুয়া এক মেয়েকে বিয়ে করেছে সে।
নিজের বয়স ১৯ বছর হলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সনদ জালিয়াতি করে বয়স বাড়িয়ে একের পর এক বিয়ে করছেন। এ নিয়ে বিচার-শালিসও হয়েছে। নাবালক ছেলেকে বারবার বিয়ে দেওয়ায় বাবা রাশেদ মন্ডলকে আটক করেছে পুলিশ। জেলার মিরপুর উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া গ্রামের রাশেদুল ইসলামের ছেলে আলোচিত এই রানা।
রানার গ্রামে তার পরিবার ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রানা রাজমিস্ত্রির কাজ করে। ২০১৭ সালের জানুযারি মাসে সে ভেড়ামারা উপজেলায় প্রথম বিয়ে করে রানা। বিয়ের কয়েক মাস পর প্রথম সংসার ভেঙ্গে যায়। এরপর মিরপুর উপজেলার কচুবাড়িয়ায় দ্বিতীয় বিয়ে করে। সেই স্ত্রীও নানা কারনে চলে যায় ৫ মাস পর।
এরপর কয়েকমাস পর ফের দৌলতপুর উপজেলার খলিসাকুন্ডিতে সে তৃতীয় বিয়ে করে। সে সংসারও টেকেনি। এরপর সর্বশেষ চলতি মাসের ২০ জুলাই ভেড়ামারায় মৌসুমী নামের এক স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে বিয়ে করে রানা।
এলাকার মাতবর ও ইউয়িন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আলী আসমত জানান, এর আগে বিয়ে নিয়ে বেশ কয়েকবার বিচার-শালিস হয়েছে। তারপরও এ কাজ চলছেই। তারা কাউকে না জানিয়ে একের পর নাবলক ছেলেকে বিয়ে দিচ্ছে। জন্ম নিবন্ধন জালিয়াতি করে এ কাজ করে আসছে পরিবারটি।
ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন থেকে ২০১৬ সালের ২৭ জুলাই একটি জন্ম নিবন্ধন নেন রানা মন্ডল। সেই জন্ম নিবন্ধনে বয়স দেখানো হয়েছে ২১ বছর। তবে বয়স প্রমানের জন্য কোন কিছূ জমা দেয়া হয়নি ইউনিয়নে। ইউনিয়নের তৎকালিন চেয়ারম্যন খন্দকার টিপু সুলতান ও সচিবের অনুরোধে ইউনিয়ন পরিষদের ইউসিডি কর্মি এ জন্ম নিবন্ধন রানার নামে ইস্যু করেন।
এ জন্ম নিবন্ধন সব বিয়েতে ব্যবহার করেছে সে। রানার বাবা কৃষি শ্রমিক রাশেদ মন্ডল বলেন, ছেলের জন্ম তারিখ আমার মনে নেই। তবে আমার মেয়ের বয়স বর্তমানে ১১ বছর। মেয়ের থেকে ছেলের বয়স ৮ থেকে ৯ বছর ্েবশি। গত দেড় বছরে ছেলে ৪টি বিয়ে করেছে জানিয়ে বলেন, প্রথম দুই বউ চলে যাওয়ার পর আমি বিয়ে দিতে চাইনি। তার মায়ের পিড়াপিড়িতে বিয়ে দিয়েছি। বিয়ের আগে ইউনিয়ন সচিবের মাধ্যমে সনদটি নিয়েছেন বলে জানান।
রানা মন্ডলের মা রেহেনা খাতুন রেনু বলেন, আমার ছেলের বিয়ে আমি দেব তাতে আপনানের সমস্যা কোথায়। ছেলে বিয়ে করতে চাই বিয়ে দিয়েছি এখানে বাইরের লোকের এত মাথা ব্যাথা কেন।
ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম বলেন, আমার সময়ে এ কাজ হয়নি। আগের চেয়ারম্যানের সময় সনদ জালিয়াতি করে কাজটি করেছে রানার পরিবার। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে বয়স না হওয়ায় ছেলেকে একাধিক বিয়ে দেওয়ায় রানার পিতা রাশেদ মন্ডলকে পুলিশ আটক করেছে। ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে রানা মন্ডল।
মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জামাল আহমেদ বলেন, বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। দেড় বছরে একটি ছেলে ৪টি বিয়ে করেছে, তার তার বয়স কুড়ির নিচে। খুবই গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি দেখা হচ্ছে।
সনদ জালিয়াতি করলে সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তার বাড়ি থেকে ছেলের বয়স ২১ বছরের বেশির কথা বলা হলেও কেন সেই জাতীয় নাগরিক সনদ করেনি সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমার উপজেলার বাইরে সে ৩টি বিয়ে করেছে। আর একটি বিয়ে করেছে আমার উপজেলার মধ্যে।