সোমবার ● ১৭ জুন ২০১৯
প্রথম পাতা » অপরাধ » তিন বন্ধু মিলেই ব্যবসায়ীকে খুন
তিন বন্ধু মিলেই ব্যবসায়ীকে খুন
রাউজান (উত্তর) প্রতিনিধি :: গত ৭ জুন রাতে দুই বন্ধু হাত চেপে ধরে, আরেকবন্ধু গলায় ছুরি চালিয়ে হত্যা করেছিল চট্টগ্রামের রাউজানের রাবার ব্যবসায়ী আবু তাহের (৫৫) কে। ঘটনাটি ঘটেছিল ডাবুয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কলমপতি এলাকায়। ঘটনার রাত সাড়ে ১১টায় পুলিশ লাশ উদ্ধারের সময় হত্যার শিকার আবু তাহেরের মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করে। নিহতের মোবাইল ফোনে সর্বশেষ ফোন করা নাম্বারটি সনাক্ত ও মোবাইল ট্রাকিংয়ের মাধ্যমে ধরা হয় মূল পরিকল্পনাকারীকে। মূল পরিকল্পনাকারীর নাম নুরুল আজিম (১৮)। সে রাউজান পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ছিটিয়া পাড়া এলাকার এজাহার মিয়ার পুত্র। আটকের পর চট্টগ্রাম আদালতে সোপর্দ করা হলে রবিবার (১৬ জুন) ম্যাজিষ্ট্রেট শিপলু কুমার মজুমদারের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে খুনের কথা স্বীকার করে। হত্যাকান্ডের সাথে তার দুই বন্ধু জড়িত থাকার কথাও স্বীকার করে সে। নুরুল আজিমের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে তার বন্ধু ও সুলতানপুর গ্রামের জান মোহাম্মদ শাহ বাড়ির আবু জাফর মো. ছাদেকের পুত্র কিবরিয়াকেও আটক করে পুলিশ।
আজ সোমবার ১৭ জুন দুপুরে চট্টগ্রাম আদালতে প্রেরণ করা হয়। রাউজান থানার সেকেন্ড অফিসার নুর নবী বলেন, মামলার আইও এস.আই মেহের আলী নিহত ব্যক্তির মোবাইল নম্বরের কল লিস্টের সূত্র ধরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খুনের পরিকল্পনাকারী নুরুল আজিমকে তার বসতঘর থেকে আটক করে। হত্যার মূল পরিকল্পনা করা নুরুল আজিম আদালতে জবানবন্দীতে বলেন, নিহত আবু তাহের গত কয়েক বছর ধরে তাকে বলৎকার করত। বিনিময়ে টাকাও দিত। এসব তার সহ্য হতো না, তারপরও সে জোড় করে এসব করতো। গত দেড় বছর ধরে নিহত আবু তাহেরের ডাকা সাড়া না দেওয়ায় আবু তাহের বারবার তার বাড়িতে গিয়ে তাকে খোঁজ করত। একসময় নিহত আবু তাহের তার বাড়িতে গিয়ে তার বোনকে মোবাইল নম্বর দিয়ে আসেন। হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী নুরুল আজিম তার বোনের নম্বর হতে তাহেরকে ফোন করলে তাহের সেই নম্বরটি সংরক্ষণ করে আজিমের বোনকে ফোনে বিরক্ত করত। পরে তার বোনের বিয়ে হয়ে যায়। সেখানেও তার বোনকে ফোন করে বিরক্ত করত নিহত বৃদ্ধ তাহের। তার বোন অতিষ্ঠ হয়ে তাকে বলেন লোকটি বার বার তাকে ফোনে বিরক্ত করেন। এতে করে সংসারে ঝামেলা সৃষ্টি হতে পারে। এই বিষয় জানার পর তাকে মারধর করার জন্য তার দুই বন্ধুকে নিয়ে পরিকল্পনা করেন। সেই মতে নুরুল আজিম ফোনে বৃদ্ধ আবু তাহের সমকামীতার কথা বলে তার সাইকেলের পেছনে চড়ে কলমপতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়ে যান। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তাঁর দুইবন্ধু মোটর সাইকেলযোগে সেখানে গিয়ে দুই বন্ধু হাত চেপে ধরে, নুরুল আজিম গলায় ছুরি চালিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে মোটরসাইকেলযোগে তিনজন ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। একটি সূত্র জানিয়েছেন, বৃদ্ধ আবু তাহের প্রতিদিন সন্ধ্যায় মুন্সিরঘাটাস্থ পাকখাইন্যাপুকুর পাড়ে আড্ডা দিতো। পাকখাইন্যা পুকুর পাড়ে ফিরোজা থাই এ্যালুমোনিয়ামের দোকানে কাজ করতো নুরুল আজিম। সেখানে নুরুল আজিমের সাথে পরিচয় হয় বৃদ্ধ আবু তাহেরের। কলমপতি এলাকায় তার রাবার বাগানে নিয়ে গিয়ে নুরুল আজিমকে বলৎকার করতো। বিনিময়ে টাকাও দিতো। গত দেড় বছর ধরে নুরুল আজিম এসব এড়িয়ে চললে তাকে খুব বিরক্ত করে। এর ক্ষোভ থেকে বৃদ্ধ আবু তাহেরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়।
উল্লেখ্য , গত ৭ জুন শুক্রবার রাত ১১টার দিকে উপজেলার ডাবুয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডেও কলমপতি স্কুল সড়কে রহস্যজনকভাবে ছুরিকাঘাতে খুন হন পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দলিলাবাদ এলাকার মৃত দুলা মিয়া চৌধুরীর পুত্র আবু তাহের। ৮ জুন ময়নাতদন্ত শেষে ৮ জুন বিকাল পাঁচটায় নিহতের নিজ বাড়ী সংলগ্ন মাঠে জানাজা শেষে তার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়। ৮ জুন রাতে নিহতের স্ত্রী বাচু আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে ৩০২/৩৪ ধারায় মামলা দায়ের করেন।