শুক্রবার ● ৫ জুলাই ২০১৯
প্রথম পাতা » অপরাধ » সৎ মেয়েকে ধর্ষণ ও গর্ভপাতের দায়ে বাবার বিরুদ্ধে চার্জশীট
সৎ মেয়েকে ধর্ষণ ও গর্ভপাতের দায়ে বাবার বিরুদ্ধে চার্জশীট
গাইবান্ধা প্রতিনিধি :: গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে সৎ মেয়েকে ধর্ষণ ও গর্ভপাতের ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তে বাবার বিরুদ্ধে উঠা ধর্ষণের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। তদন্ত শেষে মামলার একমাত্র আসামি সৎ বাবা ইদ্রিস আলী ওরফে চেংটু মেম্বারকে (৪৮) অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র (চার্জশীট) চুড়ান্ত করেছে পুলিশ। খুব শিগগরিই তদন্তকারী কর্মকর্তা চার্জশীট আদালতে জমা দিবেন বলে সিএইচটি মিডিয়া প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন সাদুল্লাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি, তদন্ত) মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
চুড়ান্ত তথ্য নিশ্চিত করে মোস্তাফিজুর রহমান মামলার অভিযোগ ও তদন্তের বরাত দিয়ে বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনায় ভিকটিম আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। মামলায় ভিকটিমের উল্লেখ করা লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সুষ্ঠভাবে তদন্ত কার্যক্রম চালানো হয়। তদন্তে স্থানীয় ছাড়াও মামলার একাধিক স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। ডাক্তারী পরীক্ষাতেও অপ্রাপ্ত বয়সের কিশোরীকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। পুরো ঘটনাটি তদন্ত, আলামত, ডাক্তারী পরীক্ষা ও স্বাক্ষীর ভিত্তিতে ধর্ষণ ঘটনার সঙ্গে প্রাথমিকভাবে আসামি ইদ্রিস আলী ওরফে চেংটু মেম্বারের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ইদ্রিস আলী ওরফে চেংটুকে একমাত্র অভিযুক্ত আসামি করে অভিযোগপত্র (চার্জশীট) প্রস্তুত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সাদুল্লাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরশেদুল হক বলেন, ‘ভিকটিমের অভিযোগে আসামিকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর থেকেই আসামি কারাগারে রয়েছে। ভিকটিম নিজেই বাদি হয়ে গত ৩ মে নারী নির্যাতন ও শিশু দমন আইনে সৎ বাবা ইদ্রিস আলীকে আসামি করে মামলা করে। মামলার দুই মাসের মধ্যে গুরুত্ব ও সর্তকতার সাথে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করা হয়। তদন্তে সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত বিশ্লোষনে অভিযুক্ত আসামি সৎ বাবার বিরুদ্ধে ‘অপ্রাপ্ত বয়সের কিশোরীকে’ ধর্ষণের সত্যতা পাওয়া গেছে। এছাড়া কিশোরীর দায়ের করা প্রতিবেশী দক্ষিণ সন্তোলা গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে মাসুদ মিয়ার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অপর মামলাটির তদন্ত কার্যক্রমও শেষের দিকে।
উল্লেখ্য, ইদ্রিস আলী ওরফে চেংটুর ভাতগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের একজন সদস্য। স্ত্রী, সন্তান থাকার পরেও ২০১৮ সালের প্রথমের দিকে শিউলী বেগম নামে এক নারীকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। শিউলী বেগমের পূর্বে বিবাহ হয়েছিল। ১৫ বছরের এক কন্যাকে নিয়ে দ্বিতীয় স্বামী চেংটু মেম্বারের টিয়াগাছা গ্রামের বাড়িতে উঠেন শিউলী। সংসার করার এক পর্যায়ে কিশোরীর (সৎ মেয়ে) উপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে চেংটুর। সুযোগ বুঝে চেংটু বিভিন্ন ভয় দেখিয়ে প্রায়ই তাকে ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে দুই মাসের অন্তসত্তা হয়ে পড়লে কিশোরীকে কৌশলে কবিরাজের ঔষধ খাইয়ে গর্ভপাত ঘটায় চেংটু। এরমধ্যে ঘটনা জেনে প্রতিবেশি মাসুদ মিযাও কিশোরীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করে আসছিল। এতে করে আবারও কিশোরী আন্তসত্তা হয়ে পড়ে। অন্তসত্তা হওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিশোরীকে নানাভাবে বুঝিয়ে মাসুদ মিয়ার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে।
নিজের অপরাধ গোপন করে মাসুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে কিশোরীকে সঙ্গে নিয়ে গত ৩ মে থানায় আসেন চেংটু মেম্বার। এসময় থানার ওসি আরশেদুল হক নির্যাতিত কিশোরীকে নানাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া নানা চাঞ্চল্যকর সত্য ঘটনার কথা অকপটে স্বীকার করে কিশোরী। ঘটনার সত্যতা পেয়ে কিশোরীর সঙ্গে আলোচনা করে মামলার সিদ্ধান্ত নেয় পরিবারের লোকজন। পরে নির্যাতিত ঔই কিশোরী নিজেই বাদি হয়ে সৎ বাবা ইদ্রিস আলী ওরফে চেংটু ও মাসুদ মিয়ার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করে। এসময় পুলিশ অভিযুক্ত সৎ বাবা ও প্রতিবেশি মাসুদকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠায়।