সোমবার ● ১৫ জুলাই ২০১৯
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » টানা বর্ষনে কাউখালী উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা
টানা বর্ষনে কাউখালী উপজেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা
কাউখালী প্রতিনিধি :: পার্বত্য জেলা রাঙামাটির কাউখালী উপজেলায় সাম্প্রতিক কালে টানা বর্ষনের ফলে সৃষ্ঠ পাহাড় ধ্বস ও পাহাড়ী ঢলে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে রাস্তাঘাট, চাষের জমি,কালভার্ট,বিভিন্ন সৃজিত বাগান,বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা যায়।
সুত্র জানায়, বেশ কিছুদিন যাবত থেমে থেমে টানা বর্ষনের ফলে উপজেলার চারটি ইউনিয়নেরই ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। তার মধ্যে ১নং বেতবুনিয়া মডেল ইউনিয়নের সুগার মিল ডাক বাংলো মঈনুল উলুম রেজভীয়া মাদ্রাসার পিছনে খালের ভাংগনে ব্যাপক ক্ষতি হয়। বর্তমানে মাদ্রাসার কোটি টাকার দোতলা ভবনটি ঝুকিঁপুর্ন অবস্থায় রয়েছে সেখানে একটি রিটার্নিং ওয়াল নির্মান করেন। পোয়াপাড়া এলাকায় গতকাল রাত্রে পাহাড় ধ্বসে এক ভিডিপি সদস্যর ঘর সম্পুর্ন ভেংগে যায় পরে খবর পেয়ে স্থানীয় ভিডিপি সদস্যরা তাৎক্ষনিকভাবে মাটি সরিয়ে পরিবারের লোকজনকে উদ্বার করেন। বেতবুনিয়া মডেল ইউনিয়ন পরিষদ ভবনটির সামনে মাটি ভেঙে গিয়ে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনটি সম্পুর্ন ঝুকিঁপুর্ন অবস্থায় রয়েছে। কাউখালী হতে বার্মাছড়ি সড়কটির ৬ কিঃ মিটারের মধ্যে প্রায়২/৩ কিঃমিটার ভেঙেঁ গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। সোনাইছড়ি বড়বিলি, হেমন্ত পাড়া,গজালিয়া পাড়ায় পাহাড় ধ্বসে পড়ে রাস্তাঘাট বন্ধ রয়েছে। কলমপতি ইউনিয়নের কাউখালী হতে নাইল্যাছড়ি হয়ে সুগারমিল ১২ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে প্রায় ৫/৭ কিলোমিটার সড়কের পাশে ভেঙে গিয়েছে । তাছাড়া এই ইউনিয়নের অনেক এলাকায় পাহাড় ধ্বসের কারনে ২/৩টি বাড়ি ঘর ভেঙেঁ যায়। কিন্তুু বেতছড়ি নামক স্থানে পাহাড় ধ্বসে ১জন গুরুতর আহত হন বলে জানা যায়। ফটিকছড়ি ইউনিয়নের ডাবুয়া ক্ষিরাম বার্মাছড়ি এলাকায় পাহাঢ় ধ্বসে গ্রামীণ অনেক যোগাযোগের (কাচাঁ পাকা) রাস্তাঘাট সামান্য নষ্ঠহয়েছে। ঘাগড়া ইউনিয়নের কাউখালী পানছড়ি ৮কিলোমিটার সড়ক প্রায় জায়গায় ভেঙেঁ যায়, কাউখালী সদর হতে ঘিলাছড়ি বাঙালী এলাকা সড়কের উপর পাহাড় ভেঙেঁ পড়েন, পরে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় তা সড়ক হতে অপসারন করা হলে সড়কটি বর্তমানে চালু রয়েছে। তা ছাড়া কাউখালী সদর হতে ঘাগড়া সড়ক ৯ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় জায়গায় পাহাড়ী ঢলের কারনে রাস্তা সামান্য ভেঙেঁ যায় । এই ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় পাহাড় ধ্বসে পড়ে বলে জানা যায়। কিন্তু কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনী বলে উপজেলা প্রশাসন সুত্র জানায়।
অপরদিকে সুত্র আরো জানায়, দির্ঘদিন যাবত টানা বর্ষনের ফলে উপজেলার চার ইউনিয়নের প্রায় এলাকায় ফসলি চাষের জমি, পাহাড়ের পাদদেশে থাকা বাড়িঘরের, সৃজিত বিভিন্ন বনজ/ফলজ বাগানের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। এখনো থেমে থেমে ভারী বর্ষন অব্যাহত রয়েছে। অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ খুটি উপরে পড়েন।
সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের কলাবাগান এলাকায় রাস্তা ভেংগে যায় খালের পানির কারনে। যদিও সড়কটি বর্তমানে ঝুঁকিপুর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সড়ক ও জন পথের উদাসিনতার কারনে বর্তমানে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের কলাবাগান এলাকাটি রয়েছে সম্পুর্ন ঝুকিঁপুর্ন অবস্থায়। তাৎক্ষনিকভাবে কাউখালী উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় কলাবাগান রাস্তা ভাংগন রোধে স্থানীয় লোকজন ও রেডক্রিসেন্ট স্বেচ্ছাসেবকরা চেষ্ঠা অব্যাহত রেখেছেন। উপজেলার বেতবুনিয়া সুগারমিল, ডাক বাংলো, হেমন্ত পাড়া, কলমপতি নাইল্যাছড়ি বড়ডুলু পাড়া, তারাবুনিয়া, সুগারমিল, ডাববুনিয়া ছড়া, ঘাগড়া কলাবাগান, ছেলাছড়া, ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়, কাশঁখালী, রাঙীপাড়া হাসপাতাল এলাকা ইছামতি খালের তীর ঘেষে এলাকাগুুলি সরেজমিনে দেখা যায় ছোট ছোট পাহাড় ধ্বসে পড়ে রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা। তা ছাড়া এসব এলাকার বাড়িঘর, কালভার্ট, নিজস্ব উদ্যোগে সৃজিত বিভিন্ন ফলজ,বনজ বাগান বেশ কিছুদিন ধরে টানা বর্ষনের ফলে পাহাড়ী ঢলের কারনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ম্যুখীনের মুখে রয়েছে। তা ছাড়া কাঊখালী হতে রানীর হাট পর্যন্ত ইছামতি খালের দু পাশে বেশ ভাঙনের ফলে বর্তমানে খালের দু পাশের মানুষের বসত বাড়ি,স্কুল, মাদ্রাসা,মসজিদ, বিভিন্ন পীরের মাজার ভবন বর্তমানে ভাঙঁনের হুমকির মুখে রয়েছে। তা ছাড়া কাউখালী কাশখালী হতে রানীর হাট পর্যন্ত ইছামতি খালের দু পাশে বৈধ এবং অবৈধভাবে মেশিনের সাহায্যে বালু তোলার কারনে ইছাঁমতি খালের দু পাশে ভাঙনঁ অব্যাহত থাকায় খালের পাশের রাস্তাঘাট ব্রীজ কালভার্ট গুলি রয়েছে হুমকির মুখে।
অন্যদিকে অব্যাহত টানা বর্ষনের ফলে কাউখালী উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্থ রাস্তাঘাট কালভার্ট ভেঙেঁ যাওয়া প্রসংগে উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী পরিতোষ চন্দ্র দত্ত বলেন, এই বর্ষায় কাউখালী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় যে হারে রাস্তাঘাট,কালভার্ট,ব্রীজ ভেঙেঁ গেছে তাতে ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি জানান। আমাদের উপজেলায় ২টি ঘর সম্পুর্ন ক্ষতিগ্রস্থ হয়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কিছু কিছু ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তার মধ্যে উপজেলার বেশ কিছু কাচাঁ রাস্তা নষ্ট হয়। ইতি মধ্যে সরকারের জিআর হতে ৫ মেট্রিক টন চাল (খাদ্য শষ্য) মজুদ রয়েছে, শুকনো খাবার মজুদ রয়েছে ১৫০ প্যাকেট।
এ প্রসংগে কাউখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শতরুপা তালুকদার বলেন, বেশ কয়েকদিন যাবত টানা প্রবল বর্ষন হয়। কিন্তু এখন যদিওবা টানা বর্ষন অব্যাহত রয়েছে কিন্তু প্রতিদিন থেমে থেমে যেভাবে বর্ষন হচ্ছে তাতে উপজেলার অনেক রাস্তা ঘাট, মানুষের বাড়িঘর, ব্রীজ, কালবার্ট সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তা ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাটের উপর পাহাড় ধ্বসে পড়ার কারনে আমরা স্তানীয় লোকজনের সহযোগিতায় তা সরিয়ে দেওয়র চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি সংগে সংগে এসবের খোজ খবর নিচ্ছি। তারপরেও আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে সার্বক্ষনিক খোজ খবর রাখছি এবং আমরা প্রশাসনের পক্ষ হতে আশ্রয়কেন্দ্র খুলে রেখেছি যাতে মানুষের কোন সমস্যা না হয় এবং আশ্রয় কেন্দ্রগুলিতে মানুষজন আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের উপজেলায় শুধুমাত্র ১জন আহত ছাড়া তেমন কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনী বলে তিনি জানান।
অপরদিকে কাউখালী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শামসু দোহা চৌধুরী বলেন, বেশ কিছুদিন যাবত প্রবল বর্ষনের ফলে কাউখালী উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আমরা উপজেলা পরিষদের পক্ষ হতে সার্বক্ষনিক খোজ খবর রাখছি। বিশেষ করে কলাবাগান এলাকায় রাঙামাটি সড়ক ভেংগে যাওয়ার উপক্রম এবং খুবই ঝুকিঁপুর্ন। আমরা স্থানীয় লোকজন নিয়ে ভাংগন রোধে প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছি।
পরিশেষে বর্তমানে প্রতিদিন যেভাবে থেমে থেমে ভারী বর্ষন হচ্ছে তাতে করে টানা বর্ষনের ফলে ক্ষয় ক্ষতি এখনো অব্যাহত রয়েছে। টানা বর্ষনের সৃষ্ট ক্ষয় ক্ষতি মানুষ এখনো আতংকের মধ্যে রয়েছে। যে হারে এখন প্রবল বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে তাতে করে কাউখালী উপজেলাবাসি ও সংশ্লিষ্ট মহল এখন মনে করেন কাউখালী উপজেলারয় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনার আশংকা প্রকাশ করছেন।