বৃহস্পতিবার ● ১৮ জুলাই ২০১৯
প্রথম পাতা » গাইবান্ধা » রুট পরিবর্তন করে রেল যোগাযোগ চালু
রুট পরিবর্তন করে রেল যোগাযোগ চালু
গাইবান্ধা প্রতিনিধি :: টানা বৃষ্টি আর উজানের পানিতে বাঁধভাঙ্গা বন্যায় গাইবান্ধায় রেললাইন ডুবে যাওয়ায় বুধবার (১৭ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ঢাকার সঙ্গে গাইবান্ধা, রংপুর, দিনাজপুর ও লালমনিহাটের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তবে বিকল্প ব্যবস্থায় বুধবার সন্ধ্যা থেকে কাউনিয়া-সান্তাহার সেকশনে আবারও ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
গতকাল বুধবার রেলওয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে পরবর্তী ঘোষনা না দেয়া পর্যন্ত কাউনিয়া-সান্তাহার সেকশনে ট্রেন চলাচলের নতুন রুট সম্পর্কে জানানো হয়। করতোয়া এক্সপ্রেস ট্রেনটি সান্তাহার থেকে বোনারপাড়া এবং বোনারপাড়া থেকে সান্তাহার পর্যন্ত চলাচল করবে। এছাড়া দোলনচাঁপা এক্সপ্রেস ট্রেনটি দিনাজপুর থেকে গাইবান্ধা এবং গাইবান্ধা থেকে দিনাজপুর, ৭ আপ /৮ ডাউন মেইল ট্রেন পঞ্চগড় থেকে গাইবান্ধা এবং গাইবান্ধা থেকে পঞ্চগড় ও সান্তাহার থেকে বোনারপাড়া এবং বোনারপাড়া থেকে সান্তাহার চলাচল করবে। এদিকে ১৯/২০ বগুড়া এবং পদ্মরাগ চলাচল করবে না। এছাড়া, রংপুর ও লালমনিরহাট এক্সপ্রেস কাউনিয়া-পার্বতীপুর-সান্তাহার রুট ব্যবহার করে ঢাকা চলাচল করবে। রেল যাত্রীদের সাময়িক অসুবিধার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। বন্যার পানি কমে আসলে বাদিয়াখালী সেকশনে রেললাইন মেরামতের কাজ শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে।
এরআগে গাইবান্ধা সদর উপজেলার বাদিয়াখালি ইউনিয়নে বাদিয়াখালী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন চেয়ারম্যানবাড়ী মিয়াপাড়া রেলগেট এলাকায় প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রেললাইনে পানি ওঠায় এবং তীব্র স্রোতে রেললাইনের স্লিপার, মাটি ও পাথর সরে যাওয়ায় ট্রেন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। রেললাইনের চার থেকে ছয় ইঞ্চি ওপর দিয়ে এই পানি তীব্রবেগে প্রবাহিত হওয়ার ফলে কিছু কিছু জায়গায় রেললাইনের নিচের মাটি, পাথর ও স্লিপার ধ্বসে যায়। এসময় সান্তাহার থেকে দিনাজপুরগামী পদ্মরাগ এক্সপ্রেস ট্রেনটি স্টেশন সংলগ্ন মিয়াপাড়া রেলগেট এলাকায় আটকা পড়ে। এ অবস্থায় বুধবার (১৭ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ট্রেন চালানো বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে গাইবান্ধাসহ উত্তরের চার জেলার সাথে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
চারটি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন : বাঁধ ভেঙ্গে বানের জলে প্লাবিত গাইবান্ধা শহর
গাইবান্ধা :: জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সবগুলো বাঁধ ভেঙ্গে বানের জলে প্লাবিত হয়ে পড়েছে গাইবান্ধা শহর। পৌরসভার প্রায় সবগুলো ওয়ার্ড বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ফলে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে পানিবন্দি পৌরবাসী। এজন্য তারা পানি উন্নয়ন বোর্ডের খামখেয়ালীপনা ও উদাসীনতাকে দায়ী করছেন। শুষ্ক মৌসুমে বাঁধগুলোর রক্ষণাবেক্ষন, তদারকি ও সংস্কার না করায় জেলার সবগুলো বাঁধ ভেঙ্গে যাবার মতো ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছেন তারা। ১৯৮৮ সালের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যাকে ছাড়িয়ে এবারের বন্যাকে মহাপ্লাবন বলে আখ্যায়িত করছেন গাইবান্ধার বানভাসী মানুষ। বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢল এবং বাঁধ ধ্বসে গাইবান্ধার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জেলা শহর ভয়াবহ বন্যায় ভাসছে। সড়কে পানি ওঠায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গাইবান্ধার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। সেইসাথে আশ্রয়, বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটসহ দুর্ভোগ বেড়েছে বানভাসী মানুষের। এদিকে গাইবান্ধার সকল নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ২১ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ১৫০ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে সোমবার (১৫ জুলাই) রাত থেকে গাইবান্ধা শহরের বন্যার পানি ঢুকতে শুরু করে। শহরের পূর্বপাড়া, কুঠিপাড়া, জুম্মাপাড়া, সবুজপাড়া, মুন্সিপাড়া, বানিয়ারজান, বাংলাবাজার, মাস্টারপাড়া, মধ্যপাড়া, ডেভিড কোম্পানি পাড়া, ব্রীজরোড কালিবাড়ী পাড়ায় বন্যা দেখা দিয়েছে। জেলার বন্যাকবলিত চার উপজেলার ৩০০টি গ্রামের প্রায় ৪ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যা কবলিত এলাকার অনেক মানুষ তাদের ঘরবাড়ি, গবাদি পশু নিয়ে আশেপাশের উচু স্থান ও আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। চরাঞ্চল ও নদী বেষ্টিত চারটি উপজেলার বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইতোমধ্যে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে, ফলে ২৪৯ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। ৮৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ফুলছড়ি উপজেলার তিনটি ও সদর উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এছাড়া ৩৫টি বিদ্যালয়ে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার ১৮ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত ফুলছড়ির তিস্তামুখ ঘাট পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ১৫০ সে.মি., ঘাঘট নদীর পানি শহরের নতুন ব্রীজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৪ সে:মি: উপর দিয়ে বইছে। তবে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি কমে বিপদসীমার ৩৬ সে:মি: নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে ত্রান সহায়তা দেয়া শুরু করেছে। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর জন্য এখন পর্যন্ত ৪০০ মেট্রিকটন চাল, নগদ ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ২ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে । এছাড়া নতুন করে আরও এক হাজার মে: টন চাল, দশ লাখ টাকা এবং পাঁচ হাজার শুকনা খাবারের প্যাকেট বরাদ্ধ চেয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরে পত্র পাঠানো হয়েছে।