শনিবার ● ২০ জুলাই ২০১৯
প্রথম পাতা » গাইবান্ধা » গাইবান্ধায় বন্যার পানি ধীর গতিতে হ্রাস : বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকটে পানিবন্দী মানুষ
গাইবান্ধায় বন্যার পানি ধীর গতিতে হ্রাস : বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকটে পানিবন্দী মানুষ
গাইবান্ধা প্রতিনিধি :: গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি ধীর গতিতে হ্রাস পেলেও করতোয়া নদীর পানি এখন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ এলাকায় বাঙালী নদীর পানি তোড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধ ভেঙ্গে যাওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যা কবলিত এলাকার পানিবন্দী পরিবারগুলোর মধ্যে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি সংকট, স্যানিটেশনের অব্যবস্থা, গবাদি পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।
এদিকে বন্যার পানিতে ডুবে গত দু’দিনে গোবিন্দগঞ্জের মহিমাগঞ্জ সুগার মিল এলাকায় মনু মিয়ার মেয়ে মুন্নি (৭) ও সাঘাটা উপজেলার মুক্তিনগর ইউনিয়নের জাহেদুল ইসলামের মেয়ে জান্নাতী খাতুন (১০) মারা গেছে। এ নিয়ে জেলায় বন্যার পানিতে ডুবে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় এ পর্যন্ত জেলার সাতটি উপজেলার ৫১টি ইউনিয়নের ৩শ’ ৮৩টি গ্রামের ৪ লাখ ৮৫ হাজার সাড়ে ৩শ’ লোক এবং ৪৪ হাজার ৭শ’ ৯২টি বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৮০টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৭৪ হাজার ১শ’ ৪ লোক আশ্রয় নিয়েছে।
এছাড়া আরও জানানো হয়, বন্যায় ৫শ’ ৭৫ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা এবং ২৩৫ কি.মি. পাকা রাস্তা আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৬৩ কি.মি. বাঁধ, ২১টি কালভার্ট এবং ১০ হাজার ৮শ’ ৩৩ হেক্টর আবাদি জমি বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। তদুপরি ১শ’ ৭৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ২শ’ ৬৪টি মাদ্রাসায় পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষাদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এদিকে আকস্মিক বন্যায় ডোবা পুকুরগুলো ডুবে যাওয়ায় ২ হাজার ৯শ’ ৪১টি পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা গেছে, শনিবার ব্রহ্মপুত্রের পানি কিছুটা হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার ১২৯ সে.মি. এবং ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার ৭১ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এছাড়া করতোয়া নদীর পানি নতুন করে বৃদ্ধি পেয়ে এখন বিপদসীমার ৩ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গাইবান্ধায় চিড়া-গুড় সংকট : পৌর আ’লীগের উদ্যোগে বন্যার্তদের জন্য তৈরী হচ্ছে রুটি
গাইবান্ধা :: বন্যায় চাহিদা বেশী থাকার ফলে গাইবান্ধায় চিড়া-গুড়ের সংকট দেখা দিয়েছে। বিকল্প খাবার হিসেবে পানিবন্দি ও আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া বন্যার্তদের জন্য তৈরী হচ্ছে রুটি। গাইবান্ধা পৌর আ’লীগ বানভাসিদের জন্য এই রুটি তৈরী কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়। প্রতিদিন ১ লাখ রুটি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শনিবার (২০ জুলাই) সকালে গাইবান্ধা পাবলিক লাইব্রেরি চত্বরে রুটি তৈরীর কাজ শুরু হয়েছে। জাতীয় সংসদের হুইপ মাহাবুব আরা বেগম গিনি এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ওই রুটি তৈরী কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
গাইবান্ধা পৌর আ’লীগের সভাপতি পৌর মেয়র এ্যাড. শাহ্ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবীর মিলনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত রুটি তৈরী কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মতিন, জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উত্তম কুমার রায়। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মৃদুল মোস্তাফিজ ঝন্টু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোশারফ হোসেন দুলাল, সদর থানা অফিসার ইনচার্জ খান মো. শাহরিয়ার, জেলা আ’লীগ সদস্য এ্যাড. আবু আহমেদ কনক, জেলা মহিলা আ’লীগের সভাপতি মাহমুদা পারুল, পৌর আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খান মো. সাঈদ হোসেন জসিমসহ দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা।
গাইবান্ধা পৌর আ’লীগের সভাপতি পৌর মেয়র এ্যাড. শাহ্ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবীর মিলন জানান, ‘গাইবান্ধার মানুষ আজ ভয়াবহ বন্যায় ভাসছে। এইসব বন্যার্ত মানুষের খাবার রান্না করার বাস্তবতা নেই। বানভাসিদের তৈরি খাবার যোগান দিতে গাইবান্ধা পৌর আ’লীগ ‘রুটি তৈরী কর্মসূচি’ গ্রহন করেছে। পানিবন্দি অবস্থায় মানুষ যতদিন থাকবে এই কর্মসূচি সেইদিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।’
গাইবান্ধাকে বন্যাদুৃৃর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি
গাইবান্ধা :: গাইবান্ধাকে বন্যাদুৃৃর্গত এলাকা হিসেবে ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আ’লীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফরুজা বারী। শুক্রবার নিজ এলাকার বেলকা, তারাপুর, বাদামের চর, কাশিমবাজার, হরিপুর, কাপাসিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণকালে তিনি এ দাবি জানান। দুর্যোগ মোকাববেলায় সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। এসময় বন্যাকালীণ ত্রাণের পাশাপাশি বন্যা পরবতর্তী সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান তিনি।
বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনকালে দুর্গত মানুষদের সঙ্গে কথা বলে তাদের খোঁজ খবর নেন আফরুজা। সঙ্কটে প্রিয় নেতাকে পাশে পেয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেন তারা। আবেগে জড়িয়ে ধরেন প্রিয় নেতাকে। ত্রাণ হিসেবে নানাবিধ শুকনো খাবারের পাশাপাশি খাবার স্যালাইন, মোমবাতি, দেশলাইসহ বেশকিছু সামগ্রী সরবরাহ করা হয়।
আফরুজা বলেন, ‘গাইবান্ধার মানুষ খুব দুঃখী। বন্যাতেও তারাই বেশি কষ্ট পায়। আবার এ এলাকার জন্য ত্রাণ বরাদ্দও কম হয়। এ বিষয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। বেশি ত্রাণ বরাদ্দের দাবি জানিয়েছি। আশা করছি, সরকার এ বিষয়ে সুদৃষ্টি দেবে। একইসঙ্গে বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। ‘ ত্রাণ বিতরণকালে অন্যদের মধ্যে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম সরকার লেবু, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. শফিউল আলম সরকার, সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম আব্দুস সোবহান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফাহমিদা বুলবুল কাকলীসহ স্থানীয় আরও অনেক নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।