মঙ্গলবার ● ২৩ জুলাই ২০১৯
প্রথম পাতা » সকল বিভাগ » ছেলে ধরা গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহবান : খাদ্যমন্ত্রী
ছেলে ধরা গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহবান : খাদ্যমন্ত্রী
নওগাঁ প্রতিনিধি :: বর্তমানে দেশে ছেলে ধরা গুজব এখন চারি দিকে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে বিভ্রান্ত না হয়ে পুলিশের সহায়তা নেওয়ার আহবান জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
গতকাল সোমবার (২২ জুলাই) দুপুরে মৎস্য সপ্তাহের অনুষ্ঠানে নওগাঁর পোরশা উপজেলা পরিষদ চত্বরে যোগ দিয়ে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, আইন শৃঙ্খলা বাহীনীর প্রতি আস্থা রাখুন। কেউ অপরাধী হলে বা কাউকে সন্দেহ হলে তাকে পুলিশে দিন।
তিনি আরও বলেন, এটি একটি ষড়যন্ত্র মাত্র সরকারের উন্নয়নের পথে বাধা দেওয়ার জন্য এই ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। তবে যতই ষড়যন্ত্রই করা হোক শেখ হাসিনার সরকারের উন্নয়নের ধারা কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবেনা। গুজব ছড়িয়ে যারা ফায়দা লুটতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিবে প্রশাসন। সন্দেহজনক ভাবে কাউকে আঘাত করে আইন লংঙ্ঘন না করার পরামর্শদেন মন্ত্রী।
এর আগে সকালে খাদ্যমন্ত্রী পোরশা উপজেলা চত্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে মডেলম সজিদ ও ইসলামী সংস্কৃতি কেন্দ্র নির্মান কাজের শুভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
এছাড়া তিনি প্রধানমন্ত্রীর ঐচ্ছিক তহবিল, তাঁর নিজস্ব ঐচ্ছিক তহবিল থেকে স্থানীয় দরিদ্র ও অসহায় মানুষের মাঝে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেন।
একই অনুষ্ঠানে তিনি পোরশা উপজেলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও বঙ্গমাতা ফজিলাতুননেছা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে বিজয়ী ও বিজীতদের মাঝে পুরষ্কার বিতরন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা উপকরণ, বৈদ্যুতিক পাখা, বিধবা, প্রতিবন্ধিতা ভাতা, বয়স্কভাতা কার্ড, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আর্থিক অনুদান ও ৫ জন প্রতিবন্ধিদের মাঝে হুইল চেয়ার বিতরন করেন মন্ত্রী।
নওগাঁয় ছেলে ধরা গুজবে স্কুলে উপস্থিতির হার কম
নওগাঁ প্রতিনিধি :: পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা লাগবে সাম্প্রতিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ার পর, অনেক অভিভাবকের মধ্যেই শিশু সন্তানকে নিয়ে আতঙ্কে পড়েছে। গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকজনকে ছেলে ধরা সন্দেহে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আহত হয়েছেন অনেকে। এই পরিস্থিতিতে নওগাঁর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হঠাৎ করে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার কমে গেছে। ছেলে ধরা আতঙ্কে ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন অভিভাবকরা।
রবিবার (২১ জুলাই) নওগাঁর মান্দায় ছেলেধরা সন্দেহে ছয় মৎস্যজীবিকে গণপিটুনি দেয় এলাকাবাসী। সংবাদ পেয়ে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। তারা নওগাঁ সদর উপজেলার খাগড়া গ্রাম থেকে ওই এলাকায় মাছ শিকার করতে গিয়ে ছিলেন। পারে জানাযায়, ওই ছয় জনের কেউই ছেলে ধরা নন, জেলে। একই দিনে আবুল কালাম (৫৫) নামে মানসিকভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে ছেলে ধরা সন্দেহে উপজেলার মহানগর গ্রামে গণপিটুনি দিয়ে থানায় সোপর্দ করা হয়।
বদলগাছী উপজেলার চাংলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টিতে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০৪ জন। কিন্তু গত এক সপ্তাহে ছেলে ধরা গুজবে উপস্থিতি ৭০ শতাংশেরও কম। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘টেলিভিশন ও পত্রিকা মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় ছেলেধরা গুজব শোনা যাচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে ভয় পাচ্ছিল। আমরা অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের বুঝিয়েছি ছেলেধরা একটা গুজব, মিথ্যা ও অপপ্রচার। এর পর শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে শুরু করেছে। তবে কয়েক দিন উপস্থিতি কম ছিল।’
নওগাঁ সদর উপজেলার কীত্তিপুর-১ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১১০ জন হলেও উপস্থিত ছিল ৮০ জন। সেখানেও ছেলেধ রা গুজবের কারণে শিক্ষার্থীরা কম উপস্থিত বলে জানাযায়।
সাপাহার উপজেলার আইহা ইইউনিয়নের প্রত্যান্ত এলাকায় মুংরইল বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৫০ জন। গত কয়েক দিনে ছেলে ধরা গুজবে বিদ্যালয়টিতে ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকছেন বলে জানান শিক্ষকরা। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওয়াহাব বলেন, ‘আমাদের গ্রামটি সীমান্তবর্তী। গত কয়েক দিন থেকে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে ছেলেধরা আতঙ্ক। এতে করে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে ভয় পাচ্ছে। ফলে কমেছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি।’
বদলগাছী উপজেলার চাংলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শামীম জানায়, পাড়ার লোকজন বাড়িতে গিয়ে গলা কাটার (ছেলেধরার) ভয় দেখিয়েছে। এ জন্য বাবা-মা গত তিনদিন তাকে স্কুলে আসতে দেয়নি।
নওগাঁ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ইতোমধ্যে শিক্ষা অফিসারদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ছেলে ধরা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। গত কয়েক দিন থেকে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কিছুটা কম ছিল। তবে উপবৃত্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি প্রয়োজন। তাই এখন ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে নিয়মিত আসছে।’
এ ব্যাপারে নওগাঁ জেলা পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন পিপিএম বলেন, ‘এটা একটা গুজব। এ ধরনের গুজবে কাউকে কাননা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে মসজিদের মাধ্যমে এ অপপ্রচারে -মুসল্লিদের কাননা দেওয়ার জন্য প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।