সোমবার ● ২৯ জুলাই ২০১৯
প্রথম পাতা » গাইবান্ধা » গাইবান্ধায় গো-খাদ্য সংকট : বিপাকে খামারীরা
গাইবান্ধায় গো-খাদ্য সংকট : বিপাকে খামারীরা
গাইবান্ধা প্রতিনিধি :: গাইবান্ধা জেলার বন্যা কবলিত এলাকায় ক্রমেই প্রকট হয়ে উঠছে গো-খাদ্য সংকট। বাঁধে ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নেয়া গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বানভাসি মানুষগুলো। বন্যার পানিতে গো-চারণ ভূমি তলিয়ে থাকায় কাঁচা ঘাস পাওয়া যাচ্ছে না। শুকনো খড়ের স্তুপ পানিতে তলিয়ে থাকায় খড়ও পাচ্ছেন না অনেকে। তবে গবাদি পশুর পানিবাহিত রোগ দেখা দিলেও প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা কোন খোঁজ রাখছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।
গাইবান্ধার জেলার ৪ উপজেলা বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। বাড়ি-ঘর তলিয়ে যাওয়ায় বন্যা আক্রান্ত মানুষগুলো গবাদিপশু নিরাপদ স্থানে সরাতে পারলেও খড় সরাতে পারেননি তারা। বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ফুলছড়ি উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও দুর্ভোগ তেমন কমেনি। বিশেষ করে কোরবানির ঈদে বিক্রির আশায় যারা গবাদিপশু পালন করছিলেন তারা গবাদিপশু নিয়ে সবচেয়ে বেশি কষ্টে রয়েছেন। দুই সপ্তাহের অধিক সময় ধরে পানিবন্দি অবস্থায় থাকায় বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশুরও খুরা, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে। বন্যার্তদের চিকিৎসা সেবা দিতে স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল টিম কাজ করলেও প্রাণি সম্পদ বিভাগের চিকিৎসকের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না বন্যা দুর্গত এলাকায়। খামারীদের অভিযোগ, গত এক সপ্তাহ ধরে গবাদিপশুর খাদ্য সংকট দেখা দিলেও এ নিয়ে সরকারি বেসরকারি কারও কোনো তৎপরতা নেই।
উড়িয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রিতদের অভিযোগ, এখানে সহস্রাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এসব পরিবারের প্রায় প্রত্যেকের গরু ছাগল আছে। অনেকের গরু-ছাগলের দেখা দিয়েছে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ। দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও প্রাণী সম্পদ অফিসের কেউ গবাদিপশুর খোঁজ নিতে আসেনি।
গবাদিপশু চাষীরা জানান, এই জেলার গবাদিপশুর একমাত্র খাদ্য খড় বন্যার পানিতে পচন ধরেছে, কোথাও ভেসে গেছে। এ কারণে গবাদিপশুর খাদ্য নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। মানুষের খাবার জুটলেও গরুর জন্য খাবার জোটানো দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। তাদের ভাষ্য, এখনো কোরবানির ঈদের আরও প্রায় দুই সপ্তাহ বাকি। খাবার দিতে না পারায় গরু নিয়ে কোরবানি ঈদ পর্যন্ত অপেক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে কৃষকের জন্য। কোরবানির বাজারের জন্য প্রস্তুত করলেও খাদ্যের অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে মোটাতাজা গরুগুলো। কোরবানি ঈদে গরু বিক্রি করে কৃষকের দু’পয়সা রোজগারের আশা ধীরে ধীরে পরিণত হচ্ছে দুশ্চিন্তায়। এ অবস্থায় বন্যাকবলিত এলাকায় গো-খাদ্যের সংকট মেটানোর পাশাপাশি গবাদি পশুর পানিবাহিত রোগের চিকিৎসার সুযোগ বাড়ানো এবং বানভাসি অসহায় মানুষ যাতে তাদের গৃহপালিত পশু ন্যায্য দামে পশু বিক্রি করতে পারে সে বিষয়ে পদপে নেয়া জরুরি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ আবুল কালাম শামসুদ্দিন জানান, সরকারিভাবে এখনও পর্যন্ত কোন প্রকার গো-খাদ্য বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। জনবল সংকট ও যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে সব জায়গায় প্রাণী সম্পদ অফিসের লোকজন যেতে পারেননি। তবে যেসব এলাকায় প্রাণী সম্পদ অফিসের লোক যাওয়া সম্ভব হয়নি সেখানে সেচ্ছাসেবক নিয়োগ করে পশু চিকিৎসা করানো হচ্ছে। এছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় দ্রুত চিকিৎসা প্রদানের আশ্বাস দেন তিনি।