মঙ্গলবার ● ৩০ জুলাই ২০১৯
প্রথম পাতা » গাইবান্ধা » সাঁওতাল পল্লীতে হত্যা ও অগ্নিসংযোগ মামলায় মূল আসামিদের চার্জশীট থেকে নাম বাদ দেয়ার প্রতিবাদ
সাঁওতাল পল্লীতে হত্যা ও অগ্নিসংযোগ মামলায় মূল আসামিদের চার্জশীট থেকে নাম বাদ দেয়ার প্রতিবাদ
গাইবান্ধা প্রতিনিধি :: গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম এলাকায় নিহত তিন সাঁওতাল শ্যামল, মঙ্গল ও রমেশ হতা মামলার চুড়ান্ত অভিযোগপত্রে এজাহারভূক্ত আসামী সাবেক সাংসদ আবুল কালাম আজাদ ও সাঁওতালদের বাড়ী ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়া পুলিশকে বাদ দেয়ার প্রতিবাদে আদিবাসী সাঁওতাল ও বাঙালিরা গাইবান্ধা জেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। আজ মঙ্গলবার সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম-ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির এই কর্মসুচি পালন করে। বিক্ষোভ মিছিল শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে এ ঘটনার বিচারের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
গোবিন্দগঞ্জ সাঁওতাল পল্লী থেকে বিক্ষুদ্ধ সাঁওতাল নেতাকর্মীরা গাইবান্ধা শহরে এসে বিভিন্ন ফেস্টুন, পতাকা নিয়ে জেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিল শেষে গাইবান্ধার শহরের ডিবি রোডের ১নং ট্রাফিক মোড়ে এক প্রতিবাদ সমাবেশ করে। সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম-ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাসকের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জেলা কমিটির সভাপতি মিহির ঘোষ, আদিবাসী বাঙালী সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু, বাসদ সমন্বয়ক গোলাম রব্বানী, সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম-ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সাধারন সম্পাদক জাফরুল ইসলাম প্রধান, সাঁওতাল হত্যার মামলার বাদী থমাস হেমব্রম, আদিবাসী নেত্রী রোমেলা কিসকু, ভিজিলিয়াস, ভূমি সংগ্রাম কমিটির নেতা স্বপন শেখ, ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির নেতা ময়নুল হক, মিজান প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, ঘটনার প্রায় তিনবছর পর চুড়ান্ত অভিযোগ পত্রে ঘটনার সাথে সরাসরি যুক্ত এজাহারভূক্ত আসামী গোবিন্দগঞ্জ আসনের তৎকালিন সাংসদ অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ ও প্রকাশ্যে সাঁওতালদের বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগকারী পিআইবি পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ আসামীদের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। তারা আরও বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত আগুন লাগানোর ফুটেজ, ছবি প্রকাশ পেলেও পিআইবির তদন্তকারী কর্মকর্তারা তা এড়িয়ে গেছেন। এথেকে অনুমিত হয় পুলিশ প্রভাবিত হয়ে এই চার্জশীট প্রদান করেছেন। তাই তারা এই প্রতিবেদনকে প্রত্যাখ্যান করেন।
বন্যা মোকাবেলায় ভাসমান বীজতলা তৈরী
গাইবান্ধা :: গাইবান্ধায় দু’দফা বন্যায় চরাঞ্চলের আমন ধানের বীজতলা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বন্যায় বীজতলার এই ক্ষয়ক্ষতি পুসিয়ে নিতে কৃষকরা জরুরী ভিত্তিতে ভাসমান বীজতলা প্রস্তুত করছে। উপজেলা কৃষি দপ্তরের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় কৃষকরা ভাসমান বীজতলা তৈরী করে সময়মত আমন ধান চাষ নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। অনেক ব্যবসায়ীও জমি বর্গা নিয়ে ভাসমান বীজতলা তৈরী করছে।
কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, ব্রি-৫১ জাতের ধান বন্যা মোকাবেলায় অত্যান্ত উপযোগী। তাই পরবর্তী পর্যায়ে আবারও বন্যা এলে যাতে আমন ধান চাষ বিঘিœত না হয় সেজন্য এই বিশেষ জাতের ধানের বীজতলা তৈরী করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, প্রায় দু’সপ্তাহ এই ধান পানির নিচে ডুবে থাকলেও ওই ধান গাছের ক্ষতি হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সৈয়দ রেজা-ই মাহমুদ জানান, বন্যা মোকাবেলায় কৃষিক্ষেত্রে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ভাসমান বীজতলা প্রস্তুত করা হয়েছে। পাশাপাশি মন্ত্রনালয়ের পরামর্শে ভাসমান বীজতলা প্রস্তুতির প্রক্রিয়া চলছে।
গাইবান্ধা জেলা আইন শৃংখলা কমিটি সভা অনুষ্ঠিত
গাইবান্ধা :: গাইবান্ধা জেলা আইন শৃংখলা কমিটি ও আইন শৃংখলা বিষয়ক অন্যান্য মাসিক সভা মঙ্গলবার জেলা কালেক্টরেট সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল মতিন এতে সভাপতিত্ব করেন।
অনুষ্ঠিত এই সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কমিটির উপদেষ্টা গোবিন্দগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন চৌধুরী এমপি ও কমিটির অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ময়নুল হক, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট জেবুন নাহার, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধান, সুন্দরগঞ্জের উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম সরকার, গাইবান্ধা পৌর মেয়র অ্যাড. শাহ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবীর মিলন, গাইবান্ধা র্যাব-১৩ ক্যাম্পের ইনচার্জ আব্দুর রাজ্জাক, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়, জেলা চেম্বার অব কমার্স সভাপতি শাহজাদা আনোয়ারুল কাদির, জেলা মটর মালিক সমিতির সভাপতি কাজী মকবুল হোসেন, গাইবান্ধা প্রেস ক্লাবের সভাপতি কেএম রেজাউল হক, সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর সাবু, রণজিৎ বকসী সূর্য, মৃদুল মোস্তাফি ঝন্ট, জেলা মাদক নিয়ন্ত্রনের কর্মকর্তাসহ অন্যান্যরা।
জেলা আইন শৃংখলা কমিটির সভায় জেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন, মাদক সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে বিচার ব্যবস্থা দীর্ঘ শক্তিতা পরিহার করে দ্রুত বিচার সম্পন্ন, চোরাচালান বিরোধী অভিযান পরিচালনা, যানজট নিরসন, অবৈধ লাইসেন্স বিহীন ইটের ভাটার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ডেঙ্গু পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি, এডিস মশা নির্মুল, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালু রাখা। জেলার চোরাচালান প্রতিরোধ সমন্বয় কমিটি, জেলা সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটি, জেলা পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেসি, জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি, নারী ও শিশু পাচার সংক্রান্ত মামলাসমূহের যথাযথভাবে মনিটরিং, নারী ও শিশু পাচার সংশি¬ষ্ট ভিকটিমদের উদ্ধার ও পুনর্বাসন কমিটি, ঔষুধের অনিয়মক প্রতিরোধ সংক্রান্ত জেলা অ্যাকশন কমিটি, জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন ও প্রচারণা কমিটি, জেলা মানব পাচার প্রতিরোধ কমিটি সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসব সভায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় উপদেষ্টা প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে মদ, জুয়া, অবৈধ যাত্রা ও অশ্লীল নৃত্য প্রদর্শনী বন্ধের সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘ সুত্রিতার কারণে মাদক নিয়ন্ত্রন বিঘিœত হচ্ছে এবং বিচার প্রার্থী মানুষেরা দ্রুত বিচার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি জ্বীনের বাদশার নামে প্রতারণা বন্ধে পুলিশকে সতর্ক থাকার আহবান জানান। এছাড়া তিনি গাইবান্ধা-বোনারপাড়া রুটে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রেল লাইন ঈদুল আজহার আগেই মেরামত করে রেল যাতায়াতের ব্যবস্থা চালু করার জন্য রেল কর্তৃপক্ষের কাছে আহবান জানান।
সভাগুলোতে সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্য, ৭টি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, র্যাব, বিজিবি, মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, জেলাসহ সকল বিভাগীয় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।