সোমবার ● ২৬ আগস্ট ২০১৯
প্রথম পাতা » খাগড়াছড়ি » দীঘিনালায় সেনা অভিযানে ইউপিডিএফ এর ৩ সদস্য নিহত : চট্টগ্রামে বিক্ষোভ
দীঘিনালায় সেনা অভিযানে ইউপিডিএফ এর ৩ সদস্য নিহত : চট্টগ্রামে বিক্ষোভ
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি :: খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় সেনা অভিযানে ৩ জন নিহত হয়েছে। আজ সোমবার সকাল ১০টায় দীঘিনালার বরাদম এলাকায় সেনাবাহিনী ও সন্ত্রাসীদের মধ্যে গুলি বিনিময়ে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলো : ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক (ইউপিডিএফ-প্রসীত) গ্রুপের সদস্য দীঘিনালার বেতছড়ির ধন্যসেন চাকমার ছেলে নবীন জ্যোতি চাকমা(৩৮), ইন্দ্রমনি পাড়ারর তঙ্গারাম চাকমার ছেলে ভুজেন্দ্র চাকমা (৫০) ও হাচিনসনপুর এলাকার সুজিত প্রিয় চাকমার ছেলে রুচিল চাকমা ওরফে রাসেল (২৬)।
সেনাবাহিনী জানায়, সোমবার সকালে দীঘিনালার বরাদম এলাকায় একটি আস্তানায় ইউপিডিএফ প্রসীত গ্রুপের ৭-৮ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী অবস্থান করছে খবর পেয়ে সেনাবাহিনী অভিযানে যায়। এসয় সন্ত্রাসীরা সেনাবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। সেনবাহিনীও আত্মরক্ষার্থে গুলি ছুঁড়লে উভয় পক্ষের মধ্যে ১০-১৫ মিনিট বন্দুক যুদ্ধ হয়। সেনাবাহিনীর সাথে টিকতে না পেরে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলে আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এসময় আমেরিকার তৈরী একটি এম-৪ অটোমেটিক কার্বাইন ও ২টি পিস্তলসহ ১২ রাউন্ড গুলি ও ইউপিডিএফ’র চাঁদা আদায়ের রশিদ বই উদ্ধার করা হয়।
খাগড়াছড়ি সদর সার্কেলের এএসপি রওনক আলম জানান, সেনাবাহিনীর কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ দুপুর ১২ টায় তিনটি মরদেহ উদ্ধার করে। উদ্ধার হওয়া গোলাবারুদ্ধ থানায় আনার পর মামলা দায়ের করা হয়। নিহতদের লাশ খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক (ইউপিডিএফ-প্রসীত)গ্রুপের খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা আজ সোমবার ২৬ আগস্ট সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে জনান, খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার কৃপাপুর গ্রাম থেকে নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক তিন ইউপিডিএফ সদস্যকে গ্রেফতারের পর ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত বিবৃতিতে ইউপিডিএফ নেতা অভিযোগ করে বলেন, গতকাল রবিবার দিবাগত রাত ২টায় দীঘিনালা উপজেলার কৃপাপুর গ্রামের বাসিন্দা সুমন চাকমার বাড়ি থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা মেরুং বেতছড়ি (বর্তমানে যুবনাশ্ব পাড়া, পুজগাঙ, পানছড়ি) গ্রামের ধন্যসেন চাকমার ছেলে নবীন জ্যোতি চাকমা(৩৮), ইন্দ্রমনি পাড়ার তঙ্যারাম চাকমার ছেলে ভুজেন্দ্র চাকমা (৫০) ও হাসিনসনপুর গ্রামের সুজিতপ্রিয় চাকমার ছেলে রুচিল চাকমা ওরফে রাসেলকে(২৬) গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এরপর আজ সোমবার সকালে তাদেরকে ঐ গ্রামের পূর্ব দিকে বিনন্দচুগ নামক পাহাড়ে নিয়ে গিয়ে কথিত “গোলাগুলির” নাটক সাজিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করে। প্রকৃতপক্ষে সেখানে নিরাপত্তাবাহিনীর সাথে কারোর কোন প্রকার গোলাগুলির ঘটনা সংঘটিত হয়নি। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ছাড়া আর কিছুই নয়।
বিবৃতিতে তিনি তিন ইউপিডিএফ সদস্যকে বিনা অপরাধে গ্রেফতার ও পরে বিচারবহির্ভুতভাবে গুলি করে হত্যার ঘটনাকে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং অবিলম্বে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক দোষীদের শাস্তি প্রদানের দাবি জানান।
বিবৃতিতে অংগ্য মারমা ইউপিডিএফ-এর ওপর বর্বর রাজনৈতিক দমন-পীড়ন বন্ধেরও দাবি জানিয়েছেন।
দীঘিনালায় হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি :: খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় সেনাবাহিনী কর্তৃক কথিত গোলাগুলির নাটক সাজিয়ে বিচার বহির্ভুতভাবে তিন ইউপিডিএফ কর্মীকে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে আজ সোমবার ২৬ আগস্ট বিকালে চট্টগ্রাম নগরীতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর ও চবি শাখা।
খাগড়াছড়িতে সেনাবাহিনীর অভিযানে ইউপিডিএফ (প্রসিত পন্থী) দলের তিন সন্ত্রাসী নিহত ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার
ঢাকা, ২৬ আগস্ট ২০১৯ (সোমবার) :: আইএসপিআর জানায়, খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলার বরাদম এলাকায় আজ সোমবার (২৬-৮-২০১৯) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ইউপিডিএফ (প্রসিত গ্রুপ) দলের ৭-৮ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসীর উপস্থিতি টের পেয়ে দীঘিনালা সেনা জোন হতে একটি সেনা টহল উক্ত এলাকায় পৌঁছায়। সন্ত্রাসীরা সেনাসদস্যদের উপস্থিতি টের পেয়ে তাদের লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করে। সেনাবাহিনীর টহল দল তৎক্ষণাৎ পাল্টা গুলি বর্ষণ করে এবং উভয় পক্ষের মধ্যে আনুমানিক ১০-১৫ মিনিট গোলাগুলি হয়। সেনাসদস্যদের চাপের মুখে সন্ত্রাসী দল পিছু হটতে বাধ্য হয়। উক্ত গোলাগুলিতে ইউপিডিএফ (প্রসিত গ্রুপ) দলের তিনজন সন্ত্রাসী নিহত হয়।
পরবর্তীতে সেনা টহল উক্ত এলাকায় তল্লাশি করে ২টি পিস্তল (৮ রাউন্ড গুলিসহ), ১টি আমেরিকান এম-৪ অটোমেটিক কারবাইন (৪ রাউন্ড গুলি সহ) উদ্ধার করে। অভিযান চলাকালে একাধিক সন্ত্রাসী আহত হয়েছে বলে অনুমান করা যায়। পরবর্তীতে দীঘিনালা থানা হতে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মরদেহ তিনটি নিয়ে যায়।
বর্তমানে উক্ত স্থানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন রয়েছে। ভবিষ্যতেও এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।