মঙ্গলবার ● ২৭ আগস্ট ২০১৯
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » পার্বত্য চট্টগ্রামের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সেনা-রিজিয়নগুলোর অতুলনীয় অবদান
পার্বত্য চট্টগ্রামের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সেনা-রিজিয়নগুলোর অতুলনীয় অবদান
মোহাম্মদ আব্দুর রহিম,বান্দরবান প্রতিনিধি :: পার্বত্য চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ সংযম,সম্প্রীতি ও উন্নয়নের পরিচয় দিয়ে আসছে দেশ মাতৃকার বীর সেনানীরা। জীবন বিসর্জনের বিনিময়ে পার্বত্য অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া উপজাতিদের উপহার দিচ্ছে ভালোবাসা,সম্প্রীতির মেলবন্ধন ও বাড়িয়ে দিচ্ছে সহায়তার হাত। পাহাড়ে সম্প্রীতি ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে বদ্ধপরিকর তারা। যেন নিরাপত্তাবাহিনীই পাহাড়ে শান্তি, সম্প্রীতি আর উন্নয়নের ঠিকাদার। পার্বত্য চট্টগ্রামেরর এমন কোন জায়গা বাদ নেই যেখানে সেনাবাহিনীর হাতের স্পর্শে উন্নয়ন ও সহায়তা পৌছেনি। পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্র সন্ত্রাস দমনের পাশাপাশি স্কুল-কলেজ,কালভার্ট-ব্রীজ,রাস্তাঘাট নির্মান থেকে শুরু করে বসত-বাড়ি উপহার, শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ, বিনামূল্য চিকিৎসা সেবা, চক্ষু শিবির, আর্থিক সহায়তা প্রদানসহ পাহাড়বাসীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যেন সেনাবাহিনী প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
সম্প্রীতি ও উন্নয়নের ধারক ও বার্তা বাহক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পার্বত্য অঞ্চলের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে নিজের জীবন বিলিয়ে দিতে পর্যন্ত কুণ্ঠাবোধ করেন না।
এরই জীবন্ত উদাহরণ ১৮ তারিখে রাঙামাটির রাজস্তলিতে হত্যার স্বীকার সেনা সদস্য নাসিম।পার্বত্য অঞ্চলকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদানের পাশাপাশি এ অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
জানা যায়, সন্ত্রাসে পরিপূর্ণ পাহাড়ের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে তৎকালীন সরকার কর্তৃক শান্তিচুক্তির পর দেশের সবকটি সরকারই পাহাড়বাসীর জন্য প্রায় সর্বোচ্চ ছাড় দিয়েছে, দিয়েছে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধাও। কিন্তু এখানকার পিছিয়ে পড়া পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর সুবিধার্থে পাহাড়ে সিভিল প্রশাসনের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশী ত্যাগ স্বীকার পূর্বক সহায়তা প্রদান করেছে স্বাধীনতার জন্য নিবেদিত প্রাণ রাষ্ট্রের মুকুট বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। তারই ধারাবাহিকতায় পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি-সম্প্রীতি ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে অত্র অঞ্চলে আইন-শৃঙ্খলা সমুন্নত রাখার পাশাপাশি অসহায় আর্ত-মানবতায় কাজ করছে সেনাবাহিনীর ২০৩ পদাতিক ব্রিগেড ও বান্দরবান রিজিয়ন।
সেনাবাহিনী সূত্র জানিয়েছেন, সম্প্রতি গত জুলাই মাসে সারাদেশে টানা বৃষ্টিপাতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার সাথে সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামেও হয়েছে ছোট বড় পাহাড় ধ্বস, বন্যা। আর এ সময় সাধারণ পাহাড়বাসী যারা বন্যা ও পাহাড় ধ্বসে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলেন তাদের পাশে সর্বপ্রথম মানবতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর বান্দরবান রিজিয়ন বন্যার শুরু থেকে শেষ অবধি খাবার পানি, শুকনা খাবার খিচুড়ি, চিকিৎসাসহ নানা ধরণের সহায়তা নিয়ে দিন-রাত ২৪ ঘন্টা বন্যা ও পাহাড় ধ্বসের ঝুঁকির মধ্যেই ঘুরে বেড়িয়েছে পুরো জেলা।
বলা যায়, সৃষ্টিকর্তার মহিমা ও সেনাবাহিনীর পরিশ্রমের কারণেই এবারের পাহাড় ধ্বস ও বন্যায় বান্দরবানে তেমন উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়নি জন-মানুষের।
এদিকে গত ১১ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে বারোটা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত লামার বেশকিছু আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানরত ২ শতাধিক পরিবারের মাঝে সেনা জোনের পক্ষ থেকে উন্নতমানের খাবার বিতরণ করা হয়। লামা-আলীকদম সেনা জোনের উপ-অধিনায়ক মেজর এ.এস.এম ফখরুল ইসলাম চৌধুরী সেনা জোনের পক্ষ থেকে উক্ত খাবার বিতরণ করেন। পরদিন শুক্রবার মানবিক সেবার অংশ হিসেবে জেলা শহরে পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছে বান্দরবান রিজিয়ন। আজ সকাল ১১ টায় বান্দরবান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইসলামপুর, লাঙ্গিপাড়া ও বনানী সমিল এলাকায় বন্যার্তদের মাঝে এই ত্রাণ বিতরণ করেন বান্দরবান সেনা রিজিয়ন তথা ৬৯ পদাতিক ব্রিগেড এর বি.এম মেজর মো. মাহবুবুর রহমান (পিএসসি)। এসময় তিনি নৌ-যোগে বন্যা কবলিত এসব এলাকার ১০০ পরিবারের হাতে ত্রাণ সামগ্রীর প্যাকেট তুলে দেন এবং বন্যা দুর্গত পানিবন্দী নাগরিকদের খোঁজ খবর নেন। ত্রাণের প্রতিটি প্যাকেটে চিড়া, চিনি, বিস্কিট এর মতো শুকনো খাবারের পাশাপাশি মোমবাতি, দেয়াশলাই এর মতো নিত্য প্রয়োজনীয় পন্য সামগ্রী ছিলো।
সর্বশেষে আজ মঙ্গলবার ২৭ আগষ্ট সকাল ১০ টায় বান্দরবান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড সংশ্লিষ্ট বনানী সমিল ও অফিসার্স ক্লাব সংলগ্ন এলাকায় বন্যার্তদের মাঝে এই ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন বান্দরবান সেনা রিজিয়ন তথা ৬৯ পদাতিক ব্রিগেড এর ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খন্দকার মো.শাহিদুল এমরান। এসময় তিনি মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এসব এলাকার ৩০০ পরিবারের হাতে ত্রাণ সামগ্রীর প্যাকেট তুলে দেন এবং বন্যা দুর্গত পানিবন্দী নাগরিকদের খোঁজ খবর নেন। ত্রাণ বিতরণ শেষে বান্দরবান সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরের সদস্যরা উক্ত এলাকার বন্যা আক্রান্তদের মাঝে ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন।
বান্দরবান রিজিয়নের জিটু আই মেজর ইফতেখার হোসেন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাস দমন, অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধ, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি এ অঞ্চলের অসহায়-গরীব মানুষের পাশে থেকে সেনাবাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। তিনি জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামে তথা বান্দরবানে বসবাসরত সকল সম্প্রদায়ের মাঝে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভবিষ্যতেও যেকোন দূর্যোগে জনগনের পাশে থাকবে সেনাবাহিনী।