বুধবার ● ২৮ আগস্ট ২০১৯
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় ভাঙ্গছে বিশ্বনাথের সড়কগুলো
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় ভাঙ্গছে বিশ্বনাথের সড়কগুলো
মো. আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: সড়কের পাশে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় ভাঙ্গছে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার সড়কগুলো। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সড়ক ভাঙ্গা অব্যাহত থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই সেই ভাঙ্গ সড়কগুলোর গর্তে গর্তে পানি জমে থাকে। আর সেই সব পানিপূর্ণ গর্তে প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এতে ক্ষতির শিকার হওয়ার পাশাপশি চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন উপজেলাবাসী। দুর্ভোগ কমানোর জন্য এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে সড়কগুলোর পাশে ড্রেনেজ ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়ে আসছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় ‘বিশ্বনাথ-জগন্নাথপুর সড়ক, বিশ্বনাথ-লামাকাজী সড়ক, রামপাশা-বৈরাগীবাজার-সিঙ্গেকাছ বাজার, বিশ্বনাথ-হাবড়া-ছালিয়া’সহ উপজেলা প্রধান প্রধান সড়কগুলো সংস্কারের বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই আবারও চলাচলের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রধান প্রধান সড়কগুলোর পাশাপাশি ইউনিয়ন বা গ্রামীন সড়কগুলোর অবস্থাও খারাপ। আর সংস্কারের অপেক্ষায় থাকা উপজেলার প্রায় ৯৫ ভাগ সড়কের অবস্থা আরও করুণ। বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে ইতিমধ্যে বিশ্বনাথের সড়কগুলো দ্রুত সংস্কারে জন্য মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করাও হয়েছে। আর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর পাশে পানি নিষ্কাষণের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা চালুর দাবি সর্বাগ্রে স্থান পেয়েছেন সেই আন্দোলনকারীদের কাছে।
উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, বিশ্বনাথ উপজেলায় থাকা বিভিন্ন সড়কগুলোর পাশে থাকা ব্যক্তি মালিকাধীন ভূমিরর পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি ভূমি অবৈধভাবে দখল করে গড়ে তুলা হয়েছে স্থাপনা। সেগুলোও আবার সড়ক থেকে বেশ উচুঁ করে। আর এতে সেই স্থাপনাগুলোতে ব্যবহৃত বা বৃষ্টির পানি সহজেই সড়কের মধ্যে এসে পড়ছে প্রতিনিয়ত। আর পানি নিষ্কাষণের ব্যবস্থা না থাকায় সড়কে জমাট থাকা পানির উপর দিয়ে যানবাহন চলাচলের ফলে সড়কে ছোট ছোট গর্ত সৃষ্টি করছে। সময়ের সাথে সাথে সেই ছোট গর্তগুলো আবার বড় হয়ে রুপান্তরিত হচ্ছে মিনি পুকুরে।
সড়কে পানি জমে চলাচলের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হওয়াতে মন্দা সময় কাটাতে হচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ব্যবসায়ীদেরকে। আর যেই সব চালকরা ঝুঁকি নিয়ে জীবনের তাগিতে যানবাহন চালিয়ে যাচ্ছেন দিন শেষে তাদেরকেও গুনতে হচ্ছে বিপুল অঙ্কের আর্থিক ক্ষতি। অন্যদিকে এসব সড়ক দিয়ে পায়ে হেঁটে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের কোনো অন্ত নেই। এছাড়া রোগীদের বহনে তার আত্মীয়-স্বজনকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে চরম ঝুঁকির আর পোহাতে হয় সীমাহীন দুর্ভোগ।
শিক্ষার্থী আবুল হোসেন (ছদ্মনাম) বলেন, বিবেক মানুষের সর্বোচ্চ আদালত। তাই কোনো কাজ করার পূর্বে নিজের বিবেককে প্রশ্ন করে নিলেই সকল সমস্যার সমাধান সহজে হয়ে যায়। কারণ কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে বিশাল অট্টালিকা নির্মাণ করতে পারে আর সেই অট্টালিকার সামনে যাতে পানি না জমে সেজন্য ড্রেন নির্মাণ করতে পারে না। আর ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সেই সব অট্টালিকাগুলোর সামনেই বেশি বেশি পরিমাণে সড়ক ভাঙ্গছে। তাতে অট্টালিকাগুলোর মালিকদের সমালোচনা করতেও ছাড়ছেন না সাধারণ জনতা।
গাড়ি চালক বাবুল মিয়া বলেন, জীবিকার তাগিদেই প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হয় আমাদেরকে। সড়কগুলোর এমন করুণ অবস্থার কারণে যা আয় হয়, এর বেশির ভাগই ব্যয় হচ্ছে। কারণ আয়ের উৎস গাড়িটি প্রায় প্রতিদিনই মেরামত করতে হয়। আর সমাজের উচ্চ বিত্ত সেই মানুষগুলো সড়কে পানি জমাট করার প্রতিযোগীতায় লিপ্ত আছে বড় বড় অট্টালিকা নির্মাণ করে। সড়কে পাশে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পানির পাশাপাশি সেই সব রাগব বোয়ালদের অট্টালিকার পানিও এসে পড়ছে সড়কে। জমাট বাঁধা পানির উপর দিয়ে যানবাহ চলাচল করার ফলে ভাঙ্গছে সড়কগুলো।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের বিশ্বনাথ উপজেলা প্রকৌশলী হারুনুর রশীদ ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি সম্পত্তি করা করতে সরকারের পাশাপাশি সমাজের প্রত্যেক মানুষকেই সর্বদা সচেতন থাকতে হবে। আর সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্ঠার ফলেই দেশটা সুন্দর ও শান্তির হবে। তাই সড়কে পানি জমে যাতে সড়কগুলো না ভাঙ্গে সেজন্য সর্বদা খেয়াল রাখতে হবে। আর সড়ক থেকে নিজেদের বানানো স্থাপনাগুলো উচুঁ হলে বৃহত্তর স্বার্থে নিজের স্থাপনা ও জনগণের চলাচলের সড়কের মধ্যখানে নিজেদের উদ্যোগেই ড্রেন নির্মাণ করতে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ জনসাধারণ সহযোগীতা ছাড়া সরকারের পক্ষে উন্নয়ন এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়।