শুক্রবার ● ১৫ জানুয়ারী ২০১৬
প্রথম পাতা » গাজিপুর » গাজীপুরে বিশ্ব ইজতেমায় র্যাবের ৫ স্তরের নিরাপত্তা জোরদার
গাজীপুরে বিশ্ব ইজতেমায় র্যাবের ৫ স্তরের নিরাপত্তা জোরদার
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগতীরে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে জুমার নামাজ আদায় করেছেন লাখো মুসল্লি ৷ জুমার নামাজে ইমামতি করেন বাংলাদেশের ক্বারি মো. জুবায়ের৷জুমার নামাজে অংশ নিতে ইজতেমায় যোগদানকারী মুসুল্লি ছাড়াও রাজধানী ঢাকা, গাজীপুরসহ আশে-পাশের এলাকার লাখ লাখ মুসল্লি ইজতেমাস্থলে হাজির হন৷ ভোর থেকেই মুসল্লিদের ঢল নামে ইজতেমা মাঠের দিকে৷ ইজতেমা মাঠে জায়গা না পেয়ে আশে-পাশের খোলা জায়গাসহ মুসল্লিরা কামারপাড়া সড়ক ও অলি-গলিসহ এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যে যেখানে পেরেছেন হোগলা পাটি, চটের বস্তিা, খবরের কাগজ বিছিয়ে জুমার নামাজে শরিক হয়েছেন৷ জুমার নামাজ চলাকালীন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়৷
জুমার নামাজে ভিআইপিদের অংশগ্রহণ :
বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় ধাপের জুমার নামাজে ডেপুটি স্পিকার এডভোকেট ফজলে রাব্বাী মিয়া, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী এডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো: আসাদুর রহমান কিরণ অংশ নেন৷
বিদেশি মুসলিস্নদের অংশগ্রহণ :
১৫ জানুয়ারি শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় ধাপে বিশ্বের ৯৬টি দেশের ৬ হাজার ৩১৮ জন মুসল্লি অংশ নিয়েছেন৷
দেশ-বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লির অংশগ্রহণে তুরাগতীরে বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব৷ এ ধাপে ঢাকাসহ দেশের ১৬ জেলার মুসল্লিরা অংশ নিচ্ছেন৷
ইজতেমাস্থল ঘিরে পাঁচসত্মরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে র্যাব৷ আগামী ১৭ জানুয়ারি রবিবার জোহরের নামাজের আগে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে এবারের বিশ্ব ইজতেমা শেষ হবে৷
র্যাবের ৫ স্তরের নিরাপত্তা জোরদার :
নাশকতা এড়াতে ও হুমকির বিষয় বিবেচনায় রেখে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে মাঠ ও এর আশপাশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে৷
ইজতেমা মাঠে মুসল্লিদের যাতে কোনো সমস্যা ও ময়দানকেন্দ্রিক বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে না পারে সেজন্য সব গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে র্যাবের পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে৷
১৫ জানুয়ারি শুক্রবার বেলা ১১টায় টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা মাঠ সংলগ্ন র্যাবের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ৷
তিনি বলেন, বিশ্ব ইজতেমায় প্রথম পর্ব সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে৷ আশা করছি দ্বিতীয় পর্বও একইভাবে শেষ হবে৷ আখেরি মোনাজাত শেষে মুসল্লিরা নিরাপদে এখান থেকে বাড়ি যেতে পারবেন৷
তিনি বলেন, প্রথম পর্বের তুলনায় দ্বিতীয় পর্বে মুসল্লিদের নিরাপত্তা আরো বেশি জোরদার করা হয়েছে৷ ইজতেমা ময়দানের ভেতরে-বাইরে সাদা পোষাকে র্যাব ও গোয়েন্দা সদস্য বৃদ্ধি করা হয়েছে৷
তিনি জানান, নিরাপত্তা একটি সমন্বিত উদ্যোগ৷ এখানে যারা আছি প্রত্যেককেই এই উদ্যোগে অংশগ্রহণ করার প্রয়োজন রয়েছে৷ র্যাবব শুধু নিরাপত্তাই নয়, ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের বিনামূল্যে চিকিত্সা সেবাও দিচ্ছে৷ এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৬ হাজার মুসল্লিকে বিনামূল্যে চিকিত্সা সেবা দেওয়া হয়েছে৷
বেনজীর আরো জানান, র্যাবের পক্ষ থেকে মুসল্লিদের বিনামূল্যে পানি বিতরণ করা হচ্ছে৷ যাতে আগত মুসল্লিরা পানির কষ্টে না থাকেন৷
সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয়, পুরো ইজতেমা ময়দানে প্রবেশের ১৮টি গেটে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে৷ এছাড়াও বিদেশি মেহমানদের কামড়ার গেটেও রয়েছে সিসি ক্যামেরা৷ রাত-দিন সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য রয়েছে একটি মূল নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও ২টি উপ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ৷
এছাড়া ৯টি অবজারভেশন পোস্ট, ৯টি ওয়াচ টাওয়ার সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে৷ পুরো ময়দান পর্যবেক্ষণের জন্য আকাশপথেও টহলে থাকছে র্যাবের হেলিকপ্টার৷
এর বাইরেও ময়দানে থাকছে র্যাবের বোম্ব স্কোয়াড, ডগ স্কোয়াড ও স্ট্রাইকিং ফোর্স৷ তুরাগ নদীতে টহলের জন্য থাকছে র্যাবের স্পিডবোট৷
এছাড়াও ময়দানের প্রতিটি খিত্তায় একজন করে সাদা পোষাকে র্যাব সদস্য মোতায়ন থাকছে বলে জানান র্যাবের মহাপরিচালক৷
দ্বিতীয় পর্বে এক মুসল্লির মৃত্য :
বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে যোগ দিতে আসা আব্দুর রহমান (৬২) নামে এক মুসল্লি মারা গেছেন৷
১৪ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে মারা যান তিনি৷ নিহত আব্দুর বগুড়ার গাবতলী থানার মাঝবাড়ি এলাকার মৃত কছিমউদ্দিন প্রামাণিকের ছেলে৷
বিশ্ব ইজতেমার লাশের জিম্মাদার মো. আদম আলী জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে নিজ খিত্তায় মারা যান তিনি৷ বাদ জুমা তার জানাযা নামাজ অনুষ্ঠিত হবে৷
এর আগে গত ৮ জানুয়ারি শুক্রবার থেকে ১০ জানুয়ারি রবিবার অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব৷ এ দুই পর্বের ইজতেমায় দেশের ৩২ জেলার মুসল্লিরা অংশ নিচ্ছেন৷ বাকি ৩২ জেলার মুসল্লিরা অংশ নেবেন আগামী ২০১৭ সালের বিশ্ব ইজতেমায়৷
যানবাহন সংকট, ভিড়, যানজটসহ নানা ভোগান্তি এড়াতে গত বুধবার থেকেই মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেন৷ বৃহস্পতিবার যেন ইজতেমামুখী মানুষের ঢল নামে৷ বাস, ট্রাক, ট্রেন, নৌকা, ট্রলারসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে জামাতবদ্ধ হয়ে মুসল্লিরা এসেছেন টঙ্গীর ইজতেমাস্থলে৷