রবিবার ● ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » লন্ডন থেকে ‘পোকা’ এনে খামার করেছেন খলিলুর
লন্ডন থেকে ‘পোকা’ এনে খামার করেছেন খলিলুর
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: লন্ডন থেকে ‘পোকা’ এনে বিশ্বনাথে খামার করেছেন খলিলুর রহমান নামের এক প্রবাসী। উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের তেঘরী গ্রামের মৃত মাস্টার আশরাফুর রহমানের পুত্র খলিলুর রহমান তার নিজ বাড়ির পাশে হাজী বায়োসাইকেল কোম্পানী নামে প্যারেট পোকা (ব্ল্যাক সোল্ডার ফ্লাই) এর এই খামারটি করেছেন। এ ধরণের পোকার খামার বিশ্বনাথে এই প্রথম করা হয়েছে।
জানা গেছে, যুক্তরাজ্য প্রবাসী খলিলুর রহমান নিজ জন্মভূমি বিশ্বনাথে একটি কোয়েল পাখি ও লেয়ার মুরগীর খামার করার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু কোয়েল পাখি ও লেয়ার মুরগীর খাদ্যের মূল্য বেশী হওয়ায় তিনি চিন্তা করেন কিভাবে কম মূল্যে কোয়েল পাখি ও লেয়ার মুরগীর খাবার সংগ্রহ করা যায়। এরপর তিনি সিদ্ধান্ত নেন একটি ‘প্যারেট পোকা’র খামার করার। যাতে কম মূল্যে খামারের কোয়েল পাখি ও লেয়ার মুরগীর পুষ্টিকর খাবার সংগ্রহ সম্ভব হবে। তাই তিনি যুক্তরাজ্যর একটি ফার্ম থেকে ১৫০ গ্রাম (প্রায় দেড় শত পোকা) পোকা সংগ্রহ করেন এবং এই পোকা বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। এরপর বাড়ির পার্শ্ববর্তী একটি খামার তৈরী করে গত ২৬ জুন থেকে শুরু করে ‘পোকা’র চাষ।
গতকাল শনিবার সরেজমিন খলিলুর রহমানের খামারটিতে গিয়ে দেখা যায়, একটি টিনসেড ঘরের ভিতরে ৫টি বড় মশারি দিয়ে সুন্দর করে তৈরী করা হয়েছে ৫টি খাঁচা। খাঁচার ভিতে রয়েছে পোকা। আর এই পোকার খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে পরিত্যক্ত বিভিন্ন খাবার (ওয়েস্ট ফুড)।
খলিলুর রহমান জানান, পাখি ও মুরগীর পুষ্টিকর খাবার ‘প্যারেট পোকা’। এই পোকায় রয়েছে ৪০% প্রোটিন ও ২০% ফ্যাট। একটি স্ত্রী পোকা ৫০০ থেকে ৬০০টি ডিম পাড়তে পারে। ডিম থেকে বাচ্চা (লার্ভা) জন্ম নেয়। এরপর ২১দিনে পোকা পরিপূর্ণ হলে তা পাখি ও মুরগীর খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৫ দিনে একটি পোকা ডিম দেওয়ার উপযুক্ত হয় এবং ডিম দেওয়ার পরই ওই পোকা মারা যায়। পোকার খাদ্য হিসেবে উচ্ছিষ্ট ও পঁচা খাবার ব্যবহৃত হয়। চাষের জন্য প্রতি কেজি ১২ হাজার টাকা দামে এবং পাখি ও মুরগীর খাবারের জন্য ৩৫-৪০ টাকা দামে প্রতি কেজি পোকা বিক্রয় করা সম্ভব। এটি একটি লাভজনক খামার। খামারে তিন ধরণের (ভিটল, কিক্রেটস্ ও ব্ল্যাক সোল্ডার ফ্লাই) পোকা চাষ করা যায়।
খলিলুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ‘বায়োকনর্ভাশন ইনোভেটিভ’ সেন্টার শুরু করার লক্ষ্যে ১৫০ গ্রাম (প্রায় ১৫০টি) পোকা ২৫০ টাকায় ক্রয় করি। বর্তমানে আমার খামারে প্রায় ৩৫-৪০ হাজার পোকা রয়েছে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আরো বড় খামার তৈরী করার পরিকল্পনা তার রয়েছে বলে তিনি জানান।
বিশ্বনাথে প্রেমিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রেমিকাকে (২১ বছর বয়সী তরুণী) ধর্ষণের অভিযোগে প্রেমিক ফরিদ মিয়া (২৮)’কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সে বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নের কোনাউড়া নোয়াগাঁও গ্রামের চেরাগ আলীর পুত্র। শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে নিজ বাড়ি থেকে তাকে আটক করে থানা পুলিশ। আটকের পর নির্যাতনের শিকার হওয়া তরুণী বাদি হয়ে ফরিদ মিয়াকে আসামী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে থানায় মামলা দায়ের করেছেন । মামলা নং-৬, তাং- ০৭/০৯/২০১৯ইং।
এজাহার সূত্রে জানা গেছে, পাষবিকতার শিকার হওয়া তরুনী অভিযুক্ত ফরিদ মিয়ার বাড়ির পার্শ¦বর্তী ছাতক উপজেলার বাসিন্দা এবং অসহায় ও গরীব পরিবারের মেয়ে। তার পিতা পঙ্গু থাকায় ২০১৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনি (ভিকটিম) লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে ঘরে কাজকর্মে মা’কে সহযোগীতা করে আসছেন। সম্পর্কে ফরিদ মিয়া তার (ভিকটিম) খালাতো ভাই। আত্মীয়তার সুবাদে ফরিদ মিয়া তাদের (ভিকটিমের) বাড়িতে এবং তারা (ভিকটিমের পরিবার) ফরিদ মিয়ার বাড়িতে প্রায়ই যাতায়াত করেন। প্রায় ৫ বছর পূর্বে ওই তরুণীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতে তাকে প্রস্তাব করেন ফরিদ। একপর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তরুণীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলেন ফরিদ। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে তাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করতে থাকে ফরিদ। কিন্ত সে (তরুণী) একজন অসহায় পঙ্গু’র মেয়ে হওয়ায় সরল বিশ্বাসে বিয়ের আশায় বিষয়টি কারো কাছে প্রকাশ করতে সাহস পাননি। এমতাবস্থায় গত ১ সেপ্টেম্বর বিকেলে তরুণীকে তার বাড়ি থেকে বেড়ানোর জন্য নিজ বাড়িতে নিয়ে আসে ফরিদ। এরপর ওই দিন রাতে তাকে (ভিকটিম) আবারো ধর্ষণ করে ফরিদ। এসময় ভিকটিম তরুণী কান্নাকাটি করে চিৎকার করা চেষ্টা করলে তার মুখ চেপে ধরে ভয় ভিতি দেখায় ফরিদ। এরপর ভিকটিমের পরিবার বিচার প্রার্থী হলে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বিষয়টি আপোষ মিমাংসায় নিস্পত্তির চেষ্টা করেন। কিন্ত কোনাউড়া নোয়াগাঁও গ্রামের মৃত বশই মিয়ার পুত্র (ফরিদের মামাতো ভাই) বাবুল মিয়ার তরুণীর ইজ্জতের মূল্য হিসেবে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এই প্রস্তাবে ভিকটিম ও তার পরিবার রাজি না হয়ে অভিযুক্ত ফরিদ মিয়ার বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন।
গ্রেফতার ও মামলা দায়েরের সত্যতা স্বীকার করে বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি ) মো. শামীম মূসা বলেন- গ্রেফতারকৃত আসামীকে রবিবার আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
বিশ্বনাথে র্যাবের হাতে গ্রেফতার-১
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বিকৃত করে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিভিন্ন মন্ত্রীদের মানহানিকর ছবি ফেসবুকে শেয়ার করায় বদরুল ইসলাম (৪০) নামের একজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৯)। সে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার শষ্যউরা গ্রামের মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে। শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতে বিশ্বনাথ উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের মুন্সিবাজার থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৯) সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও মিডিয়া অফিসার মো. মনিরুজ্জামান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান-গ্রেফতারকৃত বদরুল ইসলাম সোশ্যাল মিডিয়ায় তার ব্যবহৃত ফেসবুক আইডি থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বিকৃত করে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিভিন্ন মন্ত্রীদের মানহানিকর ছবি শেয়ার এবং মন্তব্য করে তার ব্যবহৃত ফেইসবুকে পোষ্ট করে প্রচার করে আসছিলেন। সে বর্তমান সরকার ও প্রধানমন্ত্রী তার অপছন্দের। তাই এই সব কুরুচিপূর্ণ ছবি ও তথ্য পোষ্ট এবং শেয়ার এর মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে বিপথে পরিচালনা, সরকার প্রধানের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন ও অবমাননা করা এবং আইন শৃংখলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে সে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এএসপি সত্যজিৎ কুমার ঘোষ এর নেতৃতে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৯, সিপিসি-১ (সিলেট ক্যাম্প) এর একটি আভিযানিক দল শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টায় বিশ্বনাথ উপজেলার মুন্সিবাজারস্থ নিউ আলী বস্ত্রালয় এন্ড সুজ ষ্টোর নামের একটি দোকানের ভিতর থেকে বদরুল ইসলামকে আটক করে। উদ্ধারকৃত আলামতসহ এরপর রবিবার সকালে তাকে বিশ্বনাথ থানায় হস্তান্তর করা হয় এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সরকারি গোপাট দখল নিয়ে বিশ্বনাথে তিনপক্ষ মুখোমুখি
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার মটুককোনা গ্রামের সরকারি গোপাট দখল নিয়ে তিনপক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন। এনিয়ে যেকোনো সময় বড় ধরনের সংঘর্ষের আশংকা করছেন এলাকাবাসী। সম্প্রতি গোপাট দখল নিয়ে গ্রামের দু’পক্ষের মধ্যে মারামরির পর গ্রামবাসী গোপাট উদ্ধারে ইউএনও বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছেন। আর গত মঙ্গলবার দশঘর ইউনিয়নের তফশীলদার জামিল আহমদ ঘটনা তদন্তে যাওয়ার পর গত তিনদিন ধরে তিন পক্ষে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
তিনপক্ষের এক পক্ষে রয়েছেন, গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী আখতার হোসেন (৪০)। তিনি মটুককোনা গ্রামের মৃত নুরুজ আলীর ছেলে। প্রতিপক্ষে রয়েছেন তার চাচাতো ভাই পাশের বাড়ির হাজী আব্দুল আহাদের ছেলে সেলিম মিয়া (৩২)। আর তৃতীয় পক্ষে রয়েছেন গ্রামবাসী।
জানা গেছে, স্থানীয় বাসিয়া নদীর তীর থেকে মটুককোনা গ্রামের ভেতর দিয়ে বাবুল মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ১৮/১৯ ফুট প্রস্থের সরকারি একটি গোপাট রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে গোপাটের পার্শ্ববর্তী বাসিন্দাদের দখলের কারণে ১৯ ফুটের গোপাটটি বর্তমানে প্রায় ৯ফুটে এসে দাঁড়িয়েছে। আর ওই ৯ফুট গোপাটকে চলাচলের রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করছেন গ্রামবাসী।
গত ২২ আগস্ট ওই গোপাটের রাস্তা দখল করে দেওয়াল নির্মাণ করতে চান সেলিম মিয়া। এতে প্রবাসী আখতার হোসেন বাঁধা দিলে তাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় নারীসহ ১২জন আহত হন। এ ঘটনার ৫দিনের মাথায় উভয় পক্ষকে অভিযুক্ত করে সরকারি গোপাটের সীমানা নির্ধারণ ও অবৈধ দখল উদ্ধারের জন্য ফিরোজ আলী, আফরোজ আলীসহ গ্রামের ৯জন মুরব্বি ইউএনও বরাবরে স্মারকলিপি দেন।
দখলদার বাবুল মেম্বার দখলের বিষয়টি স্বীকার করে জানান, শুধু তিনি নন প্রবাসী আনোয়ারা বেগম, সমশের আলী, সমুজ আলী, পংকি মিয়াসহ আরো প্রায় ১৫/২০জন গোপাটটি দখল করেছেন। সরকার চাইলে তারা দখল ছেড়ে দিবেন বলেও জানান তিনি।
অভিযুক্ত প্রবাসী আখতার হোসেন ও তার প্রতিপক্ষ সেলিম মিয়া বলেন, রাস্তা রেখে গোপাটের অপ্রয়োজনীয় অংশটুকু তারা দখল করেছেন। সরকারি তদন্তে প্রমাণিত হলে তারা গোপাটের দখল ছেড়ে দিবেন।
তদন্ত প্রতিবেদন এখনও তার কাছে পৌঁছায়নি জানিয়ে ইউএনও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বর্ণালী পাল বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশ্বনাথে সাঁজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: বিশ্বনাথ থানা পুলিশ মাদক মামলায় ৬ মাসের সাঁজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি নুরুল হককে গ্রেপ্তার করেছে। সে উপজেলার ছত্রিশ গ্রামের আফরোজ বক্সের ছেলে। শনিবার রাতে আসামির নিজ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ জানায়, বিশ্বনাথ থানার এএসআই সাইফুর রহমান, এএসআই বিমল, দ্বীপকের নেতৃত্বে একদল পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিত্বে অভিযান চালিয়ে সাঁজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে থানায় মাদক মামলা রয়েছে। ওই মামলা আদালত ৬ মাসের বছরের সাঁজা প্রদান করেন। এরপর থেকে আসামি পলাতক ছিল।
সাঁজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তারের সত্যতা স্বীকার করে বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) শামীম মুসা বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে আজ রবিবার আদালতে প্রেরণ করা হবে।
বিশ্বনাথে মাদক ব্যবসা করে কোটি পতি : ধ্বংস হচ্ছে সমাজ
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: মাদক মানুষের মনুষত্ব, বিবেক জ্ঞান বুদ্ধি বিনষ্ট করে, ধবংস হয় সমাজ। মাদকের ছোবলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দেশের যুব সমাজ, সুনাম নষ্ট হচ্ছে এলাকার। এক সময় বিশ্বনাথ একটি শান্তিপ্রিয় ও অপরাধ মুক্ত এলাকা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে এ উপজেলায় বিভিন্ন ধরনের মাদকের বেছাকেনায় সচেতন মহল বিস্মিত ও আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। প্রশাসনের পাশাপাশি সচেতন মহল সোচ্চার না হলে নতুন প্রজন্মকে গ্রাস করবে আগ্রাসি এ মাদক।
বিশ্বনাথ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে রামপাশা ইউনিয়নকে মাদকে গ্রাস করছে বেশি। ৭০ দশকের দিকে এই ইউনিয়নের একটি গ্রামে লাগাতার যাত্রাগান হয়েছিল। এই যাত্রা গানের নৃত্যশিল্পী ও কলাকৌশলিরা মদ পান করতেন। তখন থেকেই মদ ছড়িয়ে পড়ে চর্তুদিকে। স্থানীয় কিছু লোকও মাদক সেবন শুরু করে। দীর্ঘদিন একটি বাজারে মদ বেচা কেনা হয়েছিল। এনিয়ে অনেক মিছিল-মিটিং, প্রতিবাদ ও মামলা মোকদ্দমাও হয়েছিল।
বর্তমান রামপাশা ইউনিয়নের পূর্বপাশে শ্রীপুর নামক একটি গ্রামে একজন ভন্ডপীরের বাস ছিল। তিনি নিজেকে পীর দাবি করে জীবিত থাকাবস্থায় উরুসের প্রচলন শুরু করেন। এতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মাদকাশক্তরা এসে আড্ডা জমায় এখানে। সে সময় মদ ও গাজা ব্যতীত অন্য কোন মাদক দেখা যেতনা। এ ভন্ডপীরের মৃত্যুর পর তাকে দাফন করা হয় নদীর তীরে খাস জায়গায়। তার এক নিকটাত্মীয় অতিরিক্ত মদপানে মৃত্যু হলে তাকেও দাফন করা হয় নদীর তীরে। প্রচার করা হয় এই দুই ভন্ডপীরের কল্পনা কাহীনি। বাড়িটি হয়ে উঠে মাদকের অভয়ারণ্য। বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে দুটি গেইট অতিক্রম করতে হয়। সাংবাদিক কিংবা সচেতন লোকদের ঢুকতে দেয়া হয়না। প্রতি বছর ২ বার উরুসের নামে এখানে মাদকের বিশাল আড়ৎ বসে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার মাদকসেবিরা এখানে এসে ভীড় জমায়। কিন্তু মাদক বিক্রেতা হচ্ছে একমাত্র এই ভন্ডপীরের উত্তরাধীকারিগণ। তারা তাদের নিজস্ব লোক দিয়ে ডিলারের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকার মদ, গাজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল ও হেরোইন সহ মাদক জাতীয় দ্রবাদি উরুসে নিয়ে আসে। ৩/৪ দিনের উরুসের আসরে কোটি টাকার মত ইনকাম হয়। দান দক্ষিনাতো আছেই। এ নিয়ে কিছুদিন আগে ৭ বস্তা টাকার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিচার বৈঠক হয়। এক সময় শতাধিক গরুও উপহার পাওয়া যেত। বাড়ির পাশ দিয়ে প্রবাহমান নদীটি ভরাট হওয়ায় এখন নৌকাযোগে আর গরু-মহিষ ও ছাগল আসেনা। আসে নগদ টাকা, না হয় মাদক। এসব টাকা উরুসের পর সপ্তাহ খানেক বাড়ির উঠানে ও ছাদে মশারি টানিয়ে শুকানো হয়। ভাগ বাটোয়ারা দেয়া হয় পাতি নেতা, পুটি নেতা ও পুলিশ প্রশাসনকে। উরুসের সময় বিপুল সংখ্যক পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তাদের চোখ থাকে অন্ধকার। পুলিশের কেউ কেউ নাছ গানেও মগ্ন হয়ে পড়েন। কিছুদিন আগে শেষ হওয়া উরুসে একজন পুলিশ কর্মকর্তা নারীদের সাথে পোষাক পরে নাচ গান করতে দেখা গেছে।
সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অনলাইন পোর্টালে বিশ্বনাথে মাদকের ছড়াছড়ি সংক্রান্ত বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। খবর চলে আসে ভন্ডপীরের মাজার মালিকদের। এসময় ফয়ছল নামের একজনকে গাজাসহ গ্রেফতার করে বিশ্বনাথ থানা পুলিশ। এ ঘটনাটি ছিল মাজার মালিকের কৌশল। ফয়ছল নামের এ যুবক মাজারের একজন নিয়মিত সেচ্ছাসেবক ও নিকটাত্মীয়। কয়েক বছর পূর্বে এই মাজারের গাজা সেবন অবস্থায় একজন এসআই এর ছবিসহ সংবাদ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হলে তদন্ত শেষে উক্ত পুলিশ সদস্যকে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এই মাজারের মাদকের ঘটনা ভিন্নখাতে নেয়ার জন্য মাজার মালিক পুলিশের একজন কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ফয়ছল নামের যুবককে গাজাসহ ধরিয়ে দেয়া হয়। ফয়ছল গ্রেফতারের পর মাজারের কথিত খাদেম থানায় গিয়ে অন্য একজন লোকের নাম বলার জন্য পরামর্শ দিয়ে আসে। কিছুদিন পূর্বে এই ফয়ছল মাদক মামলায় হাজতবাস করে জামিন নিয়ে আসে।
স্থানীয় জনসাধারণের অভিযোগ, এই মাজারকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলে মাদকের ব্যাপক বিস্তার ঘটছে। এবং এলাকার যুবসমাজ মাদক সেবনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। বলতে গেলে প্রতিদিন রাতেই সবধরনের মাদক সেবন ও বেচাকেনা করা হয়ে তাকে এই মাজারকে কেন্দ্র করে।
অশ্লীলতা বন্ধ করলে এ এলাকা মাদক মুক্ত হওয়ার আশা করা যাচ্ছে। বিষয়টি প্রশাসনের উর্ধতন মহলের নজর দিলেই সকল রহস্য বেরিয়ে আসবে।