শুক্রবার ● ১১ অক্টোবর ২০১৯
প্রথম পাতা » প্রকৃতি ও পরিবেশ » সাড়ে ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে পুনঃখনন হচ্ছে খাজাঞ্চী-মাকুন্দা নদী
সাড়ে ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে পুনঃখনন হচ্ছে খাজাঞ্চী-মাকুন্দা নদী
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত খাজাঞ্চী-মাকুন্দা নদী পুনঃখননের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এ নদীর ২৮ কিলোমিটার অংশে শীঘ্রই শুরু হবে খনন কাজ। পুনঃখনন প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চলতি মাসেই খনন কাজ শুরু করবে এমনটাই জানিয়েছেন সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী।
সুরমা নদীর একটি শাখা খাজাঞ্চী নদী ও মাকুন্দা নদী। সিলেট সদর উপজেলার পশ্চিম সীমান্ত ও বিশ্বনাথ উপজেলার উত্তরপূর্ব সীমান্ত লামাকাজী ইউনিয়নের তিলকপুর এলাকায় সুরমা নদী থেকে খাজাঞ্চী নদী ও মাকুন্দা নদীর উৎপত্তি হয়ে জগন্নাথপুর উপজেলার কুশিয়ারা নদীতে মিলিত হয়েছে। উপজেলার তিলকপুর থেকে উৎপত্তি হয়ে খাজাঞ্চী গাঁও, ফুলচন্ডি, রাজাগঞ্জ বাজার ও আশুগঞ্জ বাজার হয়ে পুরান রাজগঞ্জ বাজার পর্যন্ত প্রবাহিত নদীটি ‘খাজাঞ্চী নদী’ হিসেবে এবং পুরান রাজগঞ্জ বাজার থেকে বৈরাগী বাজার, সিংগেরকাছ বাজার ও টুকের বাজার হয়ে জগন্নাথপুরের রসুলগঞ্জ বাজারের পাশ দিয়ে কুশিয়ারা নদীতে মিলিত নদীর অপর অংশটি ‘মাকুন্দা নদী’ হিসেবে খ্যাত।
এক কালে খরস্রোতা এই নদী প্রচন্ড স্রোতস্বীনি ছিল। নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ছিল এই নদী। চলাচল করতো লঞ্চ ও পাল তোলা নৌকা। কিন্ত ক্রমশ পলিতে নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় কালের আবর্তে তা আজ হারিয়ে গেছে। পানির অভাবে দু’পারে সেচকাজ মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। নদীতে পানি না থাকায় মাছও নেই। ফলে মাছের উপর নির্ভরশীল অসংখ্য পরিবার দুর্ভোগে পড়ে। বিপর্যয়ের মুখে পড়ে এলাকার প্রকৃতি ও পরিবেশ। বর্তমানে এই নদীটি ‘মরা গাঙ’ হিসেবে পরিচিত। ভরাট হয়ে গেছে প্রায় পুরোটাই। নদীর অধিকাংশে চাষাবাদ, খেলার মাঠ ও গোচারণ ভূমি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় প্রতি বছর বর্ষায় পাহাড়ি ঢল এসেই সরাসরি পার্শ্ববর্তী বাড়িঘরে আঘাত হানে। ভাসিয়ে নিয়ে যায় ক্ষেতের ফসল, বাড়িঘর ও গাছপালা। এই অবস্থা থেকে বাঁচাতে এলাকাবাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে নদী পুনঃখননের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়। নদী পুনঃখননের প্রকল্পটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে মাছের প্রজনন বাড়বে, শুকনো মৌসুমে সেচ সুবিধা বৃদ্ধি পাবে ও বর্ষায় অতিরিক্ত পানি ধারণ করবে। এতে পাহাড়ি ঢলের আঘাত থেকে রক্ষা পাবে বাড়িঘর।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, দুটি ভাগে খাজাঞ্চী ও মাকুন্দা নদী পুনঃখনন করা হচ্ছে। চলতি বছরের জুনায়ারি মাসে প্রকল্পের দরপত্র আহবান করা হয়। নদীর ২৮ কিলোমিটার অংশ পুনঃখননে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নদীর উৎসমুখ তিলকপুর থেকে নদীর (১ম অংশ) ১৫ কিলোমিটার খননের দায়িত্ব পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্টান এসএ এসআই ইসরাত এন্টারপ্রাইজ জেবি এবং ৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নদীর পরবর্তী (২য় অংশ) ১৩ কিলোমিটার খননের দায়িত্ব পেয়েছে মেসার্স পূবালি এন্টারপ্রাইজ ঠিকাদারি প্রতিষ্টান। ইতিমধ্যে নদীর সীমানা চিহিৃত করা হয়েছে। প্রথম অংশে মোট ৪ লাখ ৬৫ হাজার ঘণমিটার এবং দ্বিতীয় অংশে ৩লাখ ২৮ হাজার ঘণমিটার মাটি কাটা হবে। খননকৃত মাটি দিয়ে নদীর তীর সংরক্ষন এবং খননকৃত মাটি বৃষ্টির পানিতে ভিজে যাতে নদীতে না পড়ে সেজন্য ঘাস লাগানোরও প্রকল্পে নির্দেশনা রয়েছে। এছাড়া যেখানে নদীর তলদেশ খনন করা হবেনা, সে স্থান হিসাবের আওতায় আসবেনা। গত মার্চ মাসে খনন কাজ শুরু করার নির্দেশনা থাকলেও এখনো তা শুরু হয়নি।
তবে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহিদুজ্জামান বিশ্বনাথ বলেন, বন্যার কারণে প্রকল্পের সময় মতো পুনঃখনন কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। চলতি মাসেই খনন কাজ শুরু হবে করা হবে।