বুধবার ● ২০ নভেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » ঢাকা » শুদ্ধি অভিযান প্রশ্নবিদ্ধ : রিপন-নাঈম কীভাবে স্বেচ্ছাসেবক লীগে ?
শুদ্ধি অভিযান প্রশ্নবিদ্ধ : রিপন-নাঈম কীভাবে স্বেচ্ছাসেবক লীগে ?
বিশেষ প্রতিনিধি :: ‘ক্যাসিনো গডফাদার’ বহিস্কৃত যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাটের ‘ভাবশিষ্য’ বলা হতো তাকে। কাকরাইলের ভূইয়া ট্রেড সেন্টারের ক্যাসিনো গুরুর ডেরায় অবাধ যাতায়াত ছিল তাঁর। আরেক ‘ক্যাসিনো ডন’ পলাতক মমিনুল হক সাঈদের সঙ্গে ঠিকাদার সমিতির নেতৃত্বও ভাগাভাগি করেছিলেন। ছিলেন ব্যবসায়িক অংশীদারও।
গুরু বা পার্টনারের জন্য সময়টা কঠিন হলেও সবাইকে অবাক করে দিয়েই ঢাকা দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পদে আসীন হয়েছেন। কারাগারে বসেই নিজের ছকে কামরুল হাসান রিপনকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি বানিয়ে ঠিকই নিজের অস্তিত্ব জানান দিয়েছেন রাজধানীর অপরাধ জগতের ‘রাজা’ ইসমাইল সম্রাট।
রাজধানীর বিমানবন্দর, কাওলা, শিয়ালডাঙ্গা ও গাওয়াইরসহ আশপাশের এলাকায় পাবলিক টয়লেট, মসজিদ কমপ্লেক্স, ফুটপাত, রাস্তা, সাইনবোর্ড, খাসজমি ও সাধারণ মানুষের জমি দখল করে শুন্য থেকে বিপুল বিত্তের মালিক বনে গেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান নাঈম।
নিজের বিয়েতে স্ত্রীর সামনে ‘বীরত্ব’ প্রকাশ করতে শর্টগান থেকে ফাঁকা গুলি ছুঁড়ার ভিডিও ভাইরাল হলে নেটিজেনদের কাছে তুলাধুনা হন এ নাঈম। অভিযোগ উঠেছে, কাওলা, বিমানবন্দরসহ কয়েকটি এলাকায় চাঁদাবাজি করে তাঁর খলিফা বাহিনী। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ‘পতিত’ সাবেক এক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর আত্নীয় হওয়ার সুবাদে এ বড় পদ ভাগিয়ে নিয়েছেন।
সম্রাট-ফ্রিডম খালিদদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ছুটে চলা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের এ কাউন্সিলর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আসায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে দলের ভেতরে-বাইরে।
চলমান শুদ্ধি অভিযানকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিতে ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে ‘ভুল বার্তা’ দিয়ে দলের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা ষড়যন্ত্রকারীদের মিশন প্রকারান্তরে সফল হয়েছে বলেও মনে করছেন অনেকেই। তাঁরা বলছেন, কৃষক লীগ ও শ্রমিক লীগের কমিটিতে বিতর্কিতদের ঠাঁই না হলেও গোল বেঁধেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগের উত্তর ও দক্ষিণ কমিটির শীর্ষ দু’ নেতাকে নিয়ে।
সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটিতে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির দুই নেতা উঠে এলেও অপরাধ সাম্রাজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্তরা গুরুত্বপূর্ণ দু’ইউনিটের নেতৃত্বে এসে সংগঠনকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়াও মুখ থুবড়ে ফেলেছে, মত দলটির তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের।
জানা যায়, ক্যাসিনো কান্ডে গত ১৮ সেপ্টেম্বর শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছারের নাম নানাভাবে আলোচনায় আসে। এরপর ২৩ অক্টোবর তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর এক দিন পর সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পংকজ নাথকে সম্মেলনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতেগড়া এ সংগঠনটিকে প্রকৃত অর্থে শক্তিশালী ও গতিশীল করতে ত্যাগী ও দক্ষ নেতাদের নেতৃত্বে নিয়ে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়। সংগঠনের বর্তমান নেতৃত্ব ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে যাদের গায়ে এখনও কলঙ্কের দাগ লাগেনি, এমন নেতাদেরই স্বেচ্ছাসেবক লীগের তিন কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
নির্মল রঞ্জন গুহ ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবুকে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্বে আনার মাধ্যমে সংগঠনকে কালো দাগমুক্ত করার প্রথম পদক্ষেপে সফলতা মিললেও নিমিষেই হোঁচট খায় উত্তর ও মহানগরের নেতা নির্বাচন করার সময়েই।
দক্ষিণের কমিটির সভাপতি সম্রাটের ‘দক্ষিণাস্ত’ এবং উত্তরের সাধারণ সম্পাদক ‘দখলবাজ’ হওয়ায় দলীয় পরিমন্ডল থেকে শুরু করে চা-স্টল, আড্ডা বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ সবখানেই তীব্র আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
কেউ কেউ বলছেন, শুদ্ধি অভিযানকে আবারও গ্রহণযোগ্য করতে এ দুই নেতার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগসমূহ তদন্ত করেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এতে করে দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আ.লীগের অনড় অবস্থান প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম হবে।
রিপনের ‘রোল মডেল’ সম্রাট!
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন। দলের স্বার্থে আন্দোলন করে কারাবরণের রেকর্ড রয়েছে তাঁর। দায়িত্ব পালন করেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতিরও। কিন্তু ক্যাসিনো সম্রাটকে ‘রোল মডেল’ মানার প্রবণতা তাকে বিতর্কিত করেছে।
সূত্র জানায়, সম্রাট যখন যুবলীগের দোর্দন্ড প্রতাপশালী দক্ষিণের সভাপতি তখনই দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি নিজের ‘বগলদাবা’ করতে কামরুল হাসান রিপনকে প্রার্থী করেন সম্রাট। সম্রাটের ঘনিষ্ঠ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অপসারিত কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদের সঙ্গে কামরুল হাসান রিপনকে একীভূত করেন।
পরবর্তীতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ঠিকাদার সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করেন কামরুল হাসান রিপন ও মমিনুল হক সাঈদ। পরে তাঁরা দু’জনই সম্রাটকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। সম্প্রতি সেই ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
একই সূত্র মতে, জেলে বসেই দাবার চালে জিত হয়েছে অপরাধের গডফাদার সম্রাটের। যেভাবে রিপনকে প্রার্থী করে বের হওয়ার ছক কষেছিলেন দায়িত্বরত নেতারা ঠিকঠাক সেই কাজ করেছেন।
ফলে কারাগারে থেকেও এবার স্বেচ্ছাসেবক লীগেও নিজের ‘নিয়ন্ত্রণ’ বজায় রেখে সম্রাট বোঝাতে চেয়েছেন দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতির অভিযোগে তাকে ‘মাইনাস’ করা সহজ নয়। দক্ষিণে স্বেচ্ছাসেবক লীগ হাতে পেয়ে এবার যুবলীগেও নিজের বিকল্প নেতৃত্ব বাছাই করে যে কোনভাবে সেটি প্রতিষ্ঠা করার নানামুখী ষড়যন্ত্র করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সাঈদ ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি হন। পরে যুবলীগ মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সম্পাদক হন। এর পর ওয়ার্ড কমিটির সভাপতির পদ ছেড়ে দেন। ওয়ার্ডে তার পদে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয় হাসান উদ্দিন জামালকে।
সূত্র মতে, সম্রাটের বন্ধু ক্যাসিনো সাঈদের সেকেন্ড-ইন কমান্ড হিসেবে কাজ করতেন জামাল। জামালের মাধ্যমেই আরামবাগ ক্লাব, দিলকুশা ক্লাব, ভিক্টোরিয়া ক্লাবে ক্যাসিনো-জুয়ার আসর বসাতেন সাঈদ। এছাড়া বিআইডব্লিউটিএ ভবনে টেন্ডারের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে জামালের পাশাপাশি কামরুল হাসান রিপনও কাড়ি কাড়ি অর্থ কামিয়ে নেন। তাকে সেই সময় ক্যাসিনো সাঈদের ব্যবসায়িক অংশীদার হিসেবেও চিনতেন অনেকেই।
অবৈধ দখল বাণিজ্যের নেশা নাঈমের
ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার আগেই অবৈধ দখল বাণিজ্যের নেশা পেয়ে বসে রাজধানীর ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনিসুর রহমান নাঈমকে। রাজধানীর বিমানবন্দর, কাওলা, শিয়ালডাঙ্গা ও গাওয়াইরসহ আশপাশের এলাকায় দখল ও চাঁদাবাজির জন্য রয়েছে নিজের বাহিনী।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, সেখানকার কাওলা এলাকায় আশিয়ান সিটির প্রবেশমুখের কাছে প্রায় ৫ বিঘা জমি দখল করেছেন কাউন্সিলর নাঈম ও তার লোকজন। সেখানে অবৈধ বাস টার্মিনাল ও রিকশা গ্যারেজ করে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। কাওলা সিভিল এভিয়েশন স্টাফ কোয়ার্টারে সংস্কার-নির্মাণকাজসহ যেকোনো ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করে ‘নাঈম বাহিনী’।
সাবেক এক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর শেল্টারে সিভিল এভিয়েশন থেকে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছেন বিতর্কিত এ নেতা। তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকা কাস্টম হাউজেরও কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ আছে। এ সিন্ডিকেটের অন্য দুই সদস্য হলেন- স্থানীয় হাবিব হাসান ও তোফাজ্জল চেয়ারম্যান।
স্থানীয়দের অভিযোগ, তাজুল নামে এক ব্যক্তিকে দিয়ে বিমানবন্দর পাবলিক টয়লেটটি দখল করেছেন কাউন্সিলর নাঈম। একই সঙ্গে ‘এয়ারপোর্ট পাবলিক টয়লেট’ চত্বর ঘিরে অবৈধভাবে গড়ে উঠছে বেশ কয়েকটি হোটেল ও দোকানপাট। এসব দোকানে টয়লেট থেকেই বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিদিন ওই টয়লেট থেকে বিক্রি হয় হাজার হাজার গ্যালন পানি। নিত্যদিন এখান থেকে আয় প্রায় লাখ টাকা। নিজের ইচ্ছামতো এসব দোকান থেকে ভাড়া আদায় করেন নাঈম। স্থানীয় বাসিন্দারা আরও অভিযোগ করেন, নাঈম ও তার পরিবারের সদস্যরা বিমানবন্দর গোলচত্বরের পূর্ব পাশের বাবুস সালাম মসজিদ মাদ্রাসা কমপ্লেক্স মার্কেট দখল করে নিয়েছেন।
এ নিয়ে বিরোধে গত মাসের শুরুর দিকে সেখানে নাঈম বাহিনীর হামলায় তিন নারীসহ চারজন আহত হন। এ নিয়ে বিমানবন্দর থানায় নাঈমসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন হামলায় গুরুতর আহত ব্যবসায়ী নাজমুল হোসেন ভূঁইয়া ওরফে প্রিন্স। এজাহারে নাঈমের নেতৃত্বে মার্কেট দখলে নিতে কয়েক দফা হামলার অভিযোগ ও ফাঁকা গুলি ছোড়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
এছাড়া মসজিদ কমপ্লেক্স দখল করায় আদালতে মামলা করেছেন বাবুস সালাম ওয়াক্ফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লি সৈয়দ মোস্তফা হোসেন। এতে কাউন্সিলর নাঈম ছাড়াও মোতালেব মুন্সী, আনিছুর রহমান ও মামুন সরকারকে আসামি করা হয়েছে। ওয়াক্ফ সম্পত্তি দখল করায় নাঈম ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে আরও বেশ কয়েকটি মামলাও হয়েছে।
মসজিদে দান ও মার্কেট থেকে মাসে প্রায় ৫০ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে নাঈমের নামে। নাঈমের চাঁদাবাজির বিষয়ে পুলিশী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় তাজুল ইসলামের মাধ্যমে কসাইবাড়ি পাবলিক টয়লেট থেকে মাসে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা, বিমানবন্দর রেলস্টেশনের পাবলিক টয়লেট থেকে দক্ষিণখান থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি বাবু ওরফে ‘জামাই বাবুর’ মাধ্যমে মাসে ৩০ হাজার টাকা, আশিয়ান সিটি হয়ে দক্ষিণখান বাজার-গাওয়াইর রুটে ইজিবাইক থেকে মাসে ১ লাখ টাকা, কাওলা রেলগেট থেকে শিয়ালডাঙ্গা হয়ে দক্ষিণখান বাজার রুটে চলাচল করা অটোরিকশা থেকে জনৈক আজমের মাধ্যমে মাসে ১ লাখ টাকা, কসাইবাড়ির ছয়টি বাস কাউন্টার থেকে জনৈক জান্নাতের মাধ্যমে মাসে ৩০ হাজার টাকা, কসাইবাড়ি টায়ারপট্টি ফুটপাত থেকে জনৈক জান্নাত ও আজমের মাধ্যমে প্রতি মাসে ৪০ হাজার টাকা, রেললাইনের পশ্চিমপাশে জনৈক শাহীন আক্তারের মাধ্যমে দৈনিক সাড়ে ১০ হাজার টাকা হিসেবে মাসে ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা আদায় করেন কাউন্সিলর নাঈম।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নাঈম ও তার লোকজন কিছুদিন আগে স্থানীয় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা স্কুল ও কলেজের পাশের মাঠে তাঁতমেলার নামে মেলা বসিয়ে জুয়ার আসর চালাতেন। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর মেলা বন্ধ করে সেখানে মাছ, সবজি ও ফলের বাজার বসানো হয়েছে। প্রতিটি দোকান থেকে ৮-১০ হাজার টাকা অগ্রিম নিয়ে দৈনিক হিসেবে ভাড়া আদায় করা হয়।
দলের ভেতরে-বাইরে তোলপাড়
স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগরের উত্তর ও দক্ষিণে বিতর্কিত দুই নেতার নেতৃত্বে আসার ঘটনায় দলের ভেতরে-বাইরে তোলপাড় চলছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কালের আলোকে বলেন, ‘সম্রাট-খালিদরা রাজনীতিকে কলুষিত করেছে।
দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার করেছে। দলের ভাবমূর্তিকে মারাত্নকভাবে ক্ষুন্ন করেছে। অথচ এ সিন্ডিকেটেরই ‘মাইম্যান’ হিসেবে পরিচিত কামরুল হাসান রিপনকে বড় পদ দিয়ে উল্টো সিন্ডিকেটকেই পুরস্কৃত করা হয়েছে কীনা তা খতিয়ে দেখতে হবে?’
এ রাজনীতিক আরও বলেন, প্রকৃত রাজনীতিকদের হাতে রাজনীতি তুলে দেওয়ার জন্য দুষ্টচক্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী সময়োপযোগী অ্যাকশন নিয়ে দলের নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন। এখন সেই অভিযান প্রশ্নবিদ্ধ করতে এবং সফল পরিণতির দিকে না পৌঁছার আগেই লক্ষ্যভ্রষ্ট করতে দলের ভেতরে একটি মহল উঠেপড়ে লেগেছে।
তাদের দিয়েই নিজের প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়ন করেছেন কুৎসিত মানসিকতার সম্রাট-খালিদরা। তাদের সম্পর্কে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে সতর্ক হতে হবে। কারণ দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীর আবেগ-অনুভূতির মূল্যায়ন করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সফল হলে মাঠ পর্যায়ের লাখ লাখ নেতা-কর্মীদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে।’
ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের একজন সহ-সভাপতি কালের আলোকে বলেন, পাবলিক টয়লেট, সাধারণ মানুষের জমি-জিরাত দখল থেকে শুরু করে চাঁদাবাজিতে অভিযুক্ত এক নেতাকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের মতো একটি সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব দেওয়ায় প্রচন্ডভাবে আশাহত হয়েছেন ওয়ার্ডের ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতা-কর্মীরা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে পুনরায় এ বিষয়টি ভেবে দেখা উচিত।
বিতর্কিত নয় এবার স্বচ্ছও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতৃত্ব আসবে স্বেচ্ছাসেবক লীগে হাইকমান্ডের এমন অমিয় বাণীতে আশান্বিত হয়েছিলেন গত কমিটির একজন সাংগঠনিক ও সম্পাদক। কিন্তু দুই পদে এমন দুই নেতাকে বাছাই করায় তাঁরাও অবাক হয়েছেন। ক্যাসিনো ও দুর্নীতি বিরোধী শুদ্ধি অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই সুকৌশলে ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।
কী বলছেন রিপন ও নাঈম
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান নাঈম গণমাধ্যমের কাছে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমি এলাকায় অবৈধ দখল বা চাঁদাবাজিতে জড়িত কি না সেটা আমার এলাকায় এসে সরেজমিনে দেখেন।
কেউ আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করে কি না। আমি এলাকার উন্নয়নে নিবেদিতভাবে কাজ করছি। একটি মহল র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা-বানোয়াট অভিযোগ দিয়ে আমাকে হয়রানি করছে। এসবের কোনো ভিত্তি নেই।’
কাউন্সিলর নাঈম আরও বলেন, পাবলিক টয়লেটটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ‘ওয়াটার এইড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে সিটি করপোরেশনের গত বোর্ড মিটিংয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে সেটার দায়িত্ব বুঝে নেবে।
মসজিদ দখল প্রসঙ্গে উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের এ নতুন সাধারণ সম্পাদকের ভাষ্য হচ্ছে- ‘বাবুস সালাম মসজিদ কমপ্লেক্স ওয়াক্ফ এস্টেটের সম্পত্তি। সেটা দখল করার প্রশ্নেই আসে না। কমপ্লেক্সের দেখাশোনা করেন তিনি। নাজমুল হোসেন প্রিন্স ও তার সহযোগীরা কমপ্লেক্স দখল করতে চাইলে এলাকাবাসী তাদের প্রতিরোধ করে।’