শনিবার ● ২৩ নভেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » এলজিইডির নির্দেশনা শোনছেন না প্রভাবশালী ঠিকাদার
এলজিইডির নির্দেশনা শোনছেন না প্রভাবশালী ঠিকাদার
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: ৬০ লাখ টাকার রাস্তায় আমা ইটের খোয়া ব্যবহার করছেন ঠিকাদার। খবর পেয়ে নিন্মমানের মালামাল ব্যবহারের অভিযোগে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। তারপরও জোর করে ঠিকাদার রাস্তা করছেন। ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার হুসোরখালী থেকে ইসলামপুর হুদাপাড়া পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন কাজে এই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। গ্রামবাসি জানান, তাদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ রাস্তাটি পাঁকা করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু শুরুতেই দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়ার কারণে এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্য রাস্তাটির নির্মান কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার হুসোরখালী পাঁকা রাস্তা থেকে ইসলামপুর হুদাপাড়া অভিমূখে একটি কাঁচা রাস্তা। যে রাস্তাটি দিয়ে পাশ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের মানুষ চলাচল করেন। রাস্তাটি নির্মান করতে মহেশপুর এলজিইডি উদ্যোগ নেয় এবং ৬০ লাখ ৭৭ হাজার ৯১১ টাকার টেন্ডার আহবান করে। কাজটি পান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মের্সস জাকাউল্লাহ এন্ড ব্রাদার্স। এলজিইডি মহেশপুর শাখার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, এই কাজে বেড তৈরীর পর ১০ ইঞ্চি বালি, ৬ ইঞ্চি খোয়া মিশ্রিত বালি, ৬ ইঞ্চি খোয়া ও ২৫ মিলি কার্পেটিং করার বিধান রয়েছে। কিন্তু ঠিকাদার প্রথমেই নিন্মমানের বালি দিয়েছেন। মাটি মিশ্রিত এই বালি ব্যবহার না করার জন্য বলা হলেও তিনি কথা শোনেননি। এরপর খোয়ার সঙ্গে বালি মিশ্রিত করতে গিয়ে নামমাত্র খোয়া দিয়েছেন। বেশির ভাগ বালির ব্যবহার করেছেন। সেটাতেও কর্তৃপক্ষ আপত্তি দিলেও ঠিকাদার শোনেননি। ৬ ইঞ্চি খোয়া বিছিয়ে রোলার করার সময় আমা ইটের খোয়া ব্যবহার করেছেন। এইসব কারনে সংশ্লিষ্ট অফিসের পক্ষ থেকে কাজটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে স্থানিয়রা জানান, তারা যখনই দেখেছেন কাজের মান খারাপ হচ্ছে তখনই কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন। এই কাজে নিন্মমানের বালি আর ইটের ব্যবহার দৃশ্যমান ছিল। এলাকার মানুষ প্রতিবাদ করেছেন, কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন প্রভাবশালী হওয়ায় কোনো কথা না শুনে কাজটি করে গেছেন। ফলে কাজটি খুবই নিন্মমানের হয়েছে। বর্তমানে কাজটি বন্ধ থাকলেও ঠিকাদারের লোকজন জোর করেই অনেকটা কাজ সম্পন্ন করেছেন। এ বিষয়ে এলজিইডি মহেশপুর উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ সেলিম হোসেন জানান, তারা বিষয়টি নিয়ে খুবই সমস্যায় আছেন। ঠিকাদারকে কাজের মান বাড়ানোর জন্য বলা হলেও বিষয়টির তিনি গুরুত্ব দিতে চাননি। এরপর তারা বাধ্য হয়ে কাজটি বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেন। সেটাও যখন করেছেন ততক্ষনে অনেকটা কাজ শেষ করেছেন। তবে বর্তমানে কাজটি বন্ধ আছে বলে জানান। তিনি বলেন, কাজের মান ভালো করতেই হবে, অন্যথায় তারা আইনগত ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান। এ ব্যাপারে ঠিকাদার জাকাউল্লাহ এন্ড ব্রাদার্সের মালিক মোঃ জাকাউল্লাহ জানান, নিন্মমানের মালামাল ব্যবহার কথাটি সঠিক নয়। তবে অফিসের পক্ষ থেকে খোয়া নিয়ে আপত্তি করা হয়েছে। খোয়ার সাইজ বড় হওয়ায় তারা কাজ বন্ধ করতে বলেছেন। এরপর তারা খোয়া ছোট করে আবার কাজ শুরু করেছেন।
এমপির নাম ভাঙ্গিয়ে দিনে দুপুরে লাখ টাকার গাছ কেটে সাবাড়
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নে রাস্তার ধারের সরকারী গাছ বিনা টেন্ডারে কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে। শুক্রবার খবর পেয়ে নলডাঙ্গা পুলিশ ক্যাম্পের আইসি বাধা দিলে একজন সংসদ সদস্য তাকে নিষেধ করেন। এরপর থেকেই বাধাহীন ভাবে সরকারী গাছ নিধন চলছে। কালীগঞ্জ শহরের জামির নামে এক কাঠ ব্যবসায়ী বিনা টেন্ডারে এই গাছ কেটে নিচ্ছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শী জানান। সরেজমিন দেখা গেছে নলডাঙ্গা ইউনিয়নের যাত্রাপুর থেকে তেতুলবাড়িয়া সড়কের দুই ধারের প্রায় ৩০টি মেহগনিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কাটা হচ্ছে। রাস্তা প্রসস্থ হওয়ার গুজব ছড়িয়ে এই গাছ কেটে নিলেও টেন্ডারের কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি জামির। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাম্মি ইসলাম জানান, এই ভাবে কেও গাছ কাটতে পারে না। আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। নলডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কবির হোসেন জানান, আমাকে ইউএনও বলেছে। আমি চৌকিদার দফাদার পাঠিয়ে গাছ কাটা বন্ধ করছি। নলডাঙ্গা পুলিশ ক্যাম্পের আইসি মিঠু জানান, সকালে খবর পেয়ে আমি জামিরকে আটক করে গাড়িতে তুলতে যায়। এ সময় একজন সংসদ সদস্য আমাকে ফোন করে নিষেধ করে। আমি বিষয়টি ঝিনাইদহ সদর থানার ওসিকে জানায়। ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি মঈন উদ্দীন জানান একজন এমপি পুলিশকে ফোন করে বলেছেন, রাস্তা চওড়া হবে বলে যার যার জমির ধারের গাছ সেই সেই কেটে নিচ্ছেন। এ জন্য আমরা আর পদক্ষেপ গ্রহন করিনি। তবে সরকারী আইনে বলা হয়েছে রাস্তার ধারের গাছ সরকারী সম্পত্তি। তা কেও কাটতে পারবে না। কাটতে হলে টেন্ডার বা এসিল্যান্ডকে কারণ জানিয়ে আবেদন করে গাছ কাটতে হবে।
ঘরবাড়িহীন মাহফুজার মেডিকেল জয়
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বৈডাঙ্গা গ্রামের আয়নাল হোসেন নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে বসবাস করেন। রাস্তার পাশেই রয়েছে খুপরি আকারে জরাজীর্ন বাড়ি। পিতা আব্দুল মান্নান প্রতিবন্ধি হলেও সংসার চালাতে পরের বাড়িতে দিন মজুর খাটে। আর মা খালেদা বেগম করেন ঝি এর কাজ। নিজস্ব কোন জমি নেই। নেই ঘরবাড়ি। এই হতদরিদ্র পরিবারের একমাত্র কন্যা মাহফুজা খাতুন মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন। মাহফুজার গন্তব্য এখন সাতক্ষিরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। অদম্য মেধাবী মাহফুজার জীবন কাহিনী আর দশ পাঁটি শিক্ষার্থীর মতো নয়। সেনার চামচ মুখে দিয়েও তিনি জন্ম গ্রহন করেন নি। পিতার অসামর্থতাকে মাহফুজা কোন দিন অনুভব করেন নি। তার একটাই লক্ষ ছিল দারদ্রতাকে জয় করে দিনমজুর পিতার মুখে হাসি ফোটানো। কোটচাঁদপুরের দোড়া ইউনিয়নের পাঁচলিয়া গ্রামে মাহফুজার নানা বাড়ি। নানা মঙ্গল মন্ডলের বাড়িতেই মাহফুজার শিক্ষা জীবনের হাতেখড়ি। পাঁচলিয়া হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে ভর্তি হন ঝিনাইদহ সরকারী কেসি কলেজে। এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে যুদ্ধ শুরু করেন মেডিকেলে ভর্তির জন্য। ধরা দেয় সাফল্য। মেধা তালিকায় তার স্থান হয় ৩৮১৬। এখন চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। মাহফুজা খাতুন জানান, এই সাফল্যের জন্য তিনি প্রথমেই তার পিতা মাতা ও শিক্ষকদের অনুপ্রেরণাকে প্রাধান্য দেন। তিনি বলেন আমি দরিদ্র ঘরের সন্তান। দারিদ্রতা কি তা আমি বুঝি। কাজেই চিকিৎসক হয়ে আমি সমাজের হতদরিদ্র মানুষকে বিনামুল্যে চিকিৎসা দেব। তিনি জানান, সমাজের কিছু মানুষের সাহায্য ও প্রেরণায় আমি এতোদুর এসেছি। তিনি সবার কাছে দোয়া কামনা করেন।