বৃহস্পতিবার ● ২৮ নভেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » গাইবান্ধা » এমপি লিটন হত্যা মামলার রায়ে ৭ জনের ফাঁসি
এমপি লিটন হত্যা মামলার রায়ে ৭ জনের ফাঁসি
সাইফুল মিলন, ষ্টাফ রিপোর্টার :: আজ বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় প্রয়াত এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যা মামলার রায়ে ৭ জনকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছেন- ওই আসনের জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি ও অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল আব্দুল কাদের খান এবং তার পিএস শামছুজ্জোহা, গাড়ি চালক হান্নান, ভাতিজা মেহেদি, শাহীন, রানা ও চন্দন কুমার রায়। এসময় কাদের খানসহ ৬ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এদেরমধ্যে দন্ডপ্রাপ্ত আসামি চন্দন কুমার রায় ভারতে পলাতক রয়েছেন। এছাড়া মামলার অপর আসামি কসাই সুবল সম্প্রতি কারাগারে অসুস্থ্য অবস্থায় মারা যায়। জেলা ও দায়রা জজ দিলীপ কুমার ভৌমিক তাঁর আদালতে এই রায় ঘোষণা করেন। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষের আইনজীবিদের দীর্ঘ ১৮ মাস যুক্তিতর্কের পর এই রায় ঘোষণা করা হয়।
২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গার মাস্টারপাড়ার নিজ বাড়িতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। এ ঘটনায় ৮ জনকে আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা করে লিটনের বোন ফাহমিদা বুলবুল। তদন্ত শেষে কাদের খাঁনসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২০১৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী বগুড়ার বাসা থেকে গ্রেফতারের পর থেকে কাদের খাঁনকে গ্রেফতার করা হয়। তখন থেকে তিনি গাইবান্ধা জেলা কারাগারে আটক রয়েছেন।
এই হত্যাকান্ডের পর পুলিশ দুটি মামলা দায়ের করে। একটি অস্ত্র মামলা ও অপরটি হত্যা মামলা। ইতোমধ্যে অস্ত্র মামলার রায়ে একমাত্র আসামি ওই আসনের জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি ও অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল আব্দুল কাদের খানকে গত ১২ জুন যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়েছে।
আলোচিত এ মামলা ২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল প্রথম দফায় আদালতে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। বাদি, নিহতের স্ত্রী ও তদন্ত কর্মকর্তাসহ এ পর্যন্ত ৫৯ জন সাক্ষীর সাক্ষগ্রহণ করেছে আদালত। গত ৩১ অক্টোবর মামলার সাক্ষী গ্রহণ কার্যক্রম শেষ হয়। চলতি বছরের গত ১৮ ও ১৯ নভেম্বর মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি পিপি শফিকুল ইসলাম শফিক। ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালতের বিচারক।
এদিকে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন লিটনের স্বজন, শুভানুধ্যায়ী, এলাকাবাসী ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। উচ্চতর আদালতে রায় বহাল রাখার পাশাপাশি অতি দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন তারা।
লিটনের বড় বোন সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফরুজা বারী তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘নৃশংস এ হত্যাকান্ডের মামলার রায়ে আমরা ভীষণ খুশি। এ রায়ের মধ্য দিয়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সরকারের দৃঢ়তা প্রকাশ পেয়েছে। এখন এর বাস্তবায়ণ দেখতে চাই। একইসঙ্গে পলাতক আসামীকে দেশে ফিরিয়ে আনারও দাবি জানাচ্ছি।
এমপি লিটনের স্ত্রী সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতি ও আরেক বোন ফাহমিদা বুলবুল বলেন, এই রায়ে আমরা খুশি। রায় দ্রুত কার্যকর করার জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি পিপি শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, রায়ে লিটনের স্বজনরা সন্তুষ্ট। সবার সহযোগিতা এবং প্রশাসনের সদিচ্ছার কারণে ন্যায় বিচার হয়েছে। এখন দ্রুততম সময়ের মধ্যে রায়ের বাস্তবায়ণ হবে বলে প্রত্যাশা করছি।
আসামি পক্ষের আইনজীবি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ বলেন, আমরা এ রায়ে সন্তুষ্ট নই। এমপি লিটনকে যেভাবে ষড়যন্ত্র করে হত্যা করা হয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে আসামি কাদের খাঁনকে এ মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। কেননা হত্যাকান্ডের সময় কাদের খাঁন দেশের বাইরে ছিলেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করবো।