বুধবার ● ৪ ডিসেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » কৃষি » বিশ্বনাথে সবজি চাষের ধুম পড়েছে
বিশ্বনাথে সবজি চাষের ধুম পড়েছে
ষ্টাফ রিপোর্টার :: সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার মাঠে মাঠে এখন শীতকালীন সবজির ঘ্রাণ। এই মৌসুমের সবজি চাষে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন স্থানীয় কৃষকরা। সবজির বীজ বপন, চারা রোপণ ও পরিচর্যার কাজ হচ্ছে মাঠে মাঠে।
উপজেলায় যেন শীতের আগাম সবজি চাষের ধুম পড়েছে। কেউ কেউ আরও আগেই সবজি চাষে নেমেছেন। এরই মধ্যে বাজারে উঠতে শুরু করেছে শীতের প্রায় সব ধরণের সবজি। এর মধ্যে রয়েছে শিম, লাউ, ফুলকপি,বাঁধাকপি, আলু, মুলা, লাল শাক, টমেটো, শসা, গাজরসহ নানা ধরণের সবজি।
প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন বাজারে শীতকালিন সবজি পাওয়া যাচ্ছে। তবে দাম একটু চড়া। তারপরও লোকজন নতুন সবজি ক্রয় করছেন। আগাম সবজি বাজারে তুলতে পারলে বেশি টাকা আয় করা সম্ভব- এমন চিন্তা মাথায় রেখে চারা তৈরি ও সবজি চাষে ব্যস্ত চাষিরাও।
উপজেলার খাজাঞ্চি ও অলঙ্কারী ইউনিয়নে শীতকালীন সবজি বেশি চাষাবাদ হয়। ফলে এসব ইউনিয়নের সবজি চাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বনাথে এ বছর ১৮০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এ পর্যন্ত মাত্র ৫০০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। তবে আবাদ চলমান রয়েছে। গত বছরের তুলনায় আবাদ অনেক কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গত বছর এ অঞ্চলে ১৮০০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছিল। তবে বিশ্বনাথের সবজি চাষিদের আলাদা কোনো তালিকা বা সংখ্যা নেই।
উপজেলার কর্মকলাপতি, মাধবপুর, হোসেনপুর, তবলপুর, রহিমপুর ও হরিপুর গ্রামের কয়েকজন কৃষক জানান, শীতকালীন সবজি চাষ শুরু হয়েছে বেশ কয়েকদিন আগেই। যারা পিছিয়ে পড়েছেন, তারা এখন চাষের তোড়জোড় শুরু করেছেন।
তবে চাষিরা জানান, সবজি চাষে এখন খরচ বাড়ছে। কীটনাশক, সার, শ্রমিক, সেচ খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরা চাষাবাদে কিছুটা হিমশিম খাচ্ছেন। উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের সবজি চাষী ইসলাম আলী ও আনসার আলী বলেন, শীতের আমেজ শুরু হয়েছে। সে কারণে শীতকালীন শাকসবজি চাষাবাদ করছি। ইতোমধ্যে লাউ চাষাবাদ করে ভালো ফলন হয়েছে। কৃষি অফিসের সহযোগিতা ছাড়াই আমরা সবজি চাষাবাদ করে আসছি।
এখনও লাউ ও লাল শাক স্থানীয় মুফতির বাজারে প্রচুর পরিমাণে বিক্রি করছেন স্থানীয় সবজি চাষিরা। তবে মুফতির বাজার পরিচালনা কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমদ মস্তফা, সরকারিভাবে বাজারে উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া এখনও লাগেনি। অনেকে জনপ্রতিনিধি বাজারের উন্নয়নের আশ্বাস দিলেও এখনও কোনো উন্নয়ন হয়নি। সবজি চাষিরা সরকারি সহযোগিতা পেলে এ এলাকায় রবি শস্যের বিপ্লব ঘটাতে পারবেন। এখানকার চাষিরা অনেক কর্মঠ ও দক্ষ।
খাজাঞ্চি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তালুকদার গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি সবজি চাষাবাদ হয়। এখানে এবার আগাম জাতের সবজি চাষ হয়েছে। বর্তমানে এলাকার সবজি চাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমজান আলী বলেন, ‘সিলেটের অন্যান্য উপজেলার তুলনায় বিশ্বনাথে টমেটোর চাষ বেশি হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে চাষিদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত আছে।
বিশ্বনাথে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে ঠেলাগাড়ি চালান ওয়াছিব উল্লা
ষ্টাফ রিপোর্টার :: যে বয়সে সন্তান-নাতি-নাতনি নিয়ে আনন্দ ফুর্তিতে থাকার কথা, আর সে বয়সেই ভাবতে হচ্ছে পেট নিয়ে। বিশ বছর আগে যে হাতগাড়ি (ঠেলাগাড়ি) ধরেছিলেন জীবকার তাগিদে, তা আজও ধরে রয়েছেন। ঠেলাগাড়ি চালিয়ে ছেলে-মেয়ে বড় করেছেন, তাদের ঘরে ছেলে-মেয়ে হয়েছে। তবে শেষ বয়সে এসে একটু আরাম-আয়েশে জীবন কাটাবেন, তা আর হয়ে ওঠেনি। ছেলে সন্তান থাকলেও দায়িত্ব নেন না বৃদ্ধা বাবার। তাই জীবন যুদ্ধে দু- বেলা দু-মুঠো ডাল ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য অন্য কোনো উপায় না পেয়ে ৮৫ বছর বয়সে সংসারের ঘানি কাঁধে নিয়ে ঠেলা গাড়ি (হাত-গাড়ি) চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন সিলেটের বিশ্বনাথের ওয়াছিব উল্লা। তিনি উপজেলার চান্দসির কাপন গ্রামের মৃত কুদরত উল্লার ছেলে। দীর্ঘ ২০ বছরে ধরে তিনি এ গাড়ি চালিয়ে সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু মাথা গোছার ঠাই নেই তাঁর। ভাড়া বাসায় স্ব-পরিবারের বসবাস করে আসছেন র্দীঘদিন ধরে। ঠেলা-গাড়ি চালিয়ে বর্তমানে ৫ সদস্যদের পরিবার কোনো মতে চালাচ্ছেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, রাজধানী ঢাকা ও সিলেট শহর থেকে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন পণ্যে পার্সেল গাড়ি ও বাস গাড়ি করে প্রতিদিন উপজেলা সদরে আসে। আর এসব পূন্যে উপজেলা সদরের অবস্থিত পুরান বাজার ও নতুন বাজারে বিভিন্ন ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে ঠেলা গাড়ি দিয়ে নিয়ে যান ওয়াছিব উল্লা। এতে দোকান মালিক মালামাল বহণ করে দেয়ার জন্য ওয়াছিব উল্লাকে ২০-৩০টাকা দিয়ে থাকেন। এভাবে প্রতিদিন তিনি ব্যবসায়ীদের পন্যে দোকানে পৌছে দিয়ে টাকা আয় করেন। দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর ধরে এ কাজ করে আসছেন তিনি। সংসারে একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তিও তিনি নিজে। বয়সের কারণে সোজা হয়ে হাটতে পারেন না ঠিকমতো। কিন্তু জীবন বাঁচানোর তাগিদে প্রতিদিন ঠেলা গাড়ি নিয়ে বাইরে যেতে হয়। দিনে ১৫০/২০০ টাকা আয় হয়। তাই দিয়ে কোনরকম সংসার চলে তাঁর। কোন কোন দিন না খেয়েও থাকতে হয়। তবে তিনি ভিক্ষা করেন না। আত্ম মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকতে চান। এই বয়সে সংসারে বিশ্রামে থাকার কথা, নাতি-নাতনি নিয়ে আনন্দে থাকার কথা। কিন্তু তার ভাগ্যটা অন্যরকম।
ওয়াছিব উল্লা জানান, উপজেলার সদর ইউনিয়নের চান্দসির কাপন গ্রামে তাঁর পিতৃক ভিটা ছিল। প্রায় ৪০ বছর আগে তা বিক্রি করে উপজেলা সদরে চলে আসেন। উপজেলা সদরের সাব-রেজিষ্ট্রারী অফিসের সামনে সরকারি জায়গায় পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। কিন্তু গত বছরের ওই জায়গা থাকে ছেড়ে দিতে হয়। বর্তমানে ২ হাজার টাকায় ভাড়া বাসায় স্ব-পরিবারের বসবাস করে আসছেন। তাঁর নিজস্ব কোনো জায়গা-জমি নেই। জীবনে তিনটি বিয়ে করেন তিনি। এক স্ত্রী অনেক আগে মারা যান। বর্তমানে দুই স্ত্রী রয়েছেন। দুই স্ত্রীর তাঁর ৫ ছেলে ও ১০ মেয়ে সন্তান রয়েছেন। তিন ছেলে-নয় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। মেয়েরা চলে গেছে অন্যের সংসারে আর ছেলেরা স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আলাদা হয়ে গেছে। এখন বুড়ো-দুইবুড়ি-দুই ছেলে এক মেয়ে নিয়ে সংসার। শরীর আর আগের মতো ঠিক নেই। আগে মতো বেশী দূর যেতে পারিনা। ঠেলা গাড়ি ভাড়ায় চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতি মাসে তিন টাকা গাড়ি ভাড়া দিতে হয়। তবে অর্থের অভাবে ব্যাটারীচালিত ভ্যানগাড়ি ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছেনা।
তিনি বলেন, দেশ স্বাধীনের পর থেকে তিনি মানুষের পণ্যে বহন কাজ শুরু করেন। আগে অনেক প্রবাসীরা এলাকায় আসতেন। তখন কিন্তু তেমন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল ছিলনা। ওই সময় তিনি মাথায় ঘরে প্রবাসীদের মালামাল নিজ নিজ বাড়ি দিয়ে আসতেন। তাই দুই বেলা দুমুঠো খাবার জোটানোর জন্য ওই বয়সেই কাজে নামতে হয়। কখন যে পায়ে হেটে ঠেলা-গাড়ি তার জীবন আটকে যায় তা তিনি নিজেও জানেন না। রোজগারও আগের মতো ভালো না। এখন প্রতিদিন ১৫০-২০০টাকা রোজগার করি। সকাল ৮টায় বের হয়ে রাত ৯টায় বাসায় যাই। প্রায়ই অসুস্থ থাকি। অনাহারে অর্ধাহারে দিন চলে। তবে সরকারি বয়স্ক ভাতা পাই। প্রতিদিন রোজগার করা টাকা ও বয়স্ক ভাতার টাকায় কোনো মতে চলে সংসার। এলাকার প্রবাসীরা ঈদে খাদ্য সামগ্রী কিংবা বিভিন্ন সময়ে খাদ্য ও পোষাক বিতরণ করলে ছুটে যাই। এলাকার বৃত্তবান ও সরকারের সহযোগিতা পেলে জীবনের শেষ বয়সে নিজের মাথা গোছার জন্য সামান্য কিছু জমি ক্রয় করতে পারলে খুশি হতাম।
এব্যাপারে বিশ্বনাথ সদর ইউপি চেয়ারম্যান ছয়ফুল হক বলেন, আমি ছোট বেলা থেকে তাকে (ওয়াছিব উল্লা) ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীদের দোকানের মালামাল ঠেলা গাড়ি দিয়ে বহণ করে আসছেন। তাকে ও তাঁর স্ত্রীকে বয়স্ক ভাতা দেয়া হয়।
তিনি বলেন, সরকারি আশ্রয় প্রকল্প যেতে চাইলে তিনি সকল ধরনের সহযোগিতা করবেন। তবে সে (ওয়াছিব) আশ্রয় প্রকল্পে কেন্দ্র যেতে চায় না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বর্নালী পাল বলেন, আশ্রয় প্রকল্পে তিনি (ওয়াছিব) আবেদন করলে তাকে সহযোগিতা করা হবে।