শুক্রবার ● ৬ ডিসেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ : দুর্নীতির সাজা কি শুধুই বদলী ?
কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ : দুর্নীতির সাজা কি শুধুই বদলী ?
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: ব্যাপক দুর্নীতি, কাজ না করে বিল উত্তোলন ও ভুয়া বিল ভাউচারে সরকারের কোটি কোটি আত্মসাৎ করার দায়ে ঝিনাইদহ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার ইবনে শাইখকে অবশেষে বদলী করা হয়েছে। গত ৩ ডিসেম্বর সচিব পর্যায়ের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটির তদন্তের পরই তাকে ঝিনাইদহ থেকে সরিয়ে চাঁদপুর জেলায় বদলী করা হলো। গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ সাহাদাত হোসেন সাক্ষরিত ২২৩০ নং স্মারকের এক চিঠিতে বলা হয়েছে আগামী ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে দায়িত্ব বুঝে দিয়ে তাকে কর্মস্থল ত্যাগ করতে হবে। অন্যথায় ১২ ডিসেম্বর থেকে তাৎক্ষনিক ভাবে অবমুক্ত হয়েছেন বলে ধরে নেওয়া হবে। এদিকে নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার ইবনে শাইখকে বদলীর পর ঠিকাদার ও সচেতন মহলের মাঝে প্রশ্ন উঠেছে প্রমানিত দুর্নীতির সাজা কি শুধুই বদলী ? গত ৩ ডিসেম্বর ঝিনাইদহ সার্কিট হাউসে গৃহায়ন ও গণপুর্ত মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন-২) মোঃ ইয়াকুব আলী পাটওয়ারীর নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির সামনে ঝিনাইদহ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার ইবনে শাইখের দুর্নীতি ও অনিয়মের একাধিক প্রমান হাজির করেন ভুক্তভোগীরা। তাদের ধারণা ছিল প্রমানিত এ সব দুর্নীতির দায়ে সাময়িক বরখাস্ত হবেন কায়সার ইবনে শাইখ। কিন্তু তা না করে তাকে চাঁদপুর জেলায় বদলী করে অভিযোগকারীদের আশাহত করেছে গৃহায়ন ও গণপুর্ত মন্ত্রনালয়। উল্লেখ্য ঝিনাইদহ গনপুর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার ইবনে শাঈখ গত ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ই-জিপি টেন্ডার আহবান করে বিধি ভঙ্গ করে মেন্যুয়ালি নেটিফিকেশন অফ এওয়ার্ড (নোয়া) দেন। যা পিপি’র বিধি বহির্ভুত। এতে একজন ঠিকাদারকে অর্ধশত কাজ পেতে সহায়তা করেন। ভূয়া বিল ভাউচার করে প্রায় আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নেন নির্বাহী প্রকৌশলী। কাজ না করেই জুনের আগে কয়েক কোটি টাকার বিল তুলে নেন। একজনের টাকা আরেকজনকে দিয়ে দেন। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে ২৬টি কাজের গোপন টেন্ডার করেন। এ সব বিষয়ে তথ্য ভিত্তক সংবাদ প্রকাশিত হলে সচিবের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। অবশেষে গত ৩ ডিসেম্বর সচিব পর্যায়ের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটির তদন্তের পরই তাকে ঝিনাইদহ থেকে সরিয়ে চাঁদপুর জেলায় বদলী করা হলো।
কোটচাঁদপুরের জোরপুর্বক কৃষকের জমি দখলের চেষ্টা
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার ভোমরাডাঙ্গা মৌজায় ১২ বছর ধরে ভোগ দখলে থাকা লক্ষিপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তারের জমির ধান জোরপুর্বক কেটে নেওয়ার পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কোটচাঁদপুরের দোড়া ইউনিয়নের লক্ষিপুর গ্রামের মাহাজ্জেল আলীর ছেলে আশরাফুল ও ইউসুফ আলীর ছেলে হারুনসহ অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের নিয়ে সন্ত্রসী কায়দায় জমির পাকা ধান কেটে নেওয়ার চক্রান্ত করলে আদালত থেকে ১৪৪ ধারা জারী করা হয়। ১৪৪ ধারা মামলার আরজি সুত্রে জানা গেছে, লক্ষিপুর গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানের ছেলে আব্দুস সাত্তার ও মফিজুল ইসলাম তার পিতার কাছ থেকে ২০০৪ সালে ৫ নং ভোমরাডাঙ্গা মৌজার ৬০২ সাবেক দাগের ১ একর ৩৮ শতক জমি কিনে ভোগ দখল করতে থাকেন। খলিলুর রহমান মৃত্যু বরণ করলে এই জমি নিয়ে আদালতে মামলা মোকদ্দমা হয়। পরবর্তীতে এই জমি আব্দুস সাত্তারের অনকুলে ছলে সুত্রে ডিগ্রী হয়। এ বছর আব্দুস সাত্তারের বর্গা চাষি বাবলু ও মজিবর ওই জমিতে ধান রোপন করেন। ধান পেকে গেলে গত ২৫ নভেম্বর তারা কাটতে যান। সে সময় দ্বিতীয় পক্ষ আশরাফুল ও হারুন সন্ত্রাসী কায়দায় জমির পাকা ধান কেটে নিতে যায়। তারা আব্দুস সাত্তারকে খুন জখমের হুমকী দিয়ে গোটা জমি দখল করে নেওয়ার হুমকী দিলে আব্দুস সাত্তার আদালতের স্মরানাপন্ন হন। ২৬ নভেম্বর ঝিনাইদহের বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আব্দুস সাত্তারের নালিশী জমিতে ১৪৪ ধারা জারি করে শান্তি শৃংখলা বজায় রাখতে কোটচাধপুর থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। আব্দুস সাত্তার অভিযোগ করেন তার সৎ ভাইয়ের করা দলিল সুত্রে আশরাফুল আমার জমি দখল করতে চাই। কিন্তু সেই দলিল আদালত কর্তৃক বাতিল হয়ে গেছে। পরে আশরাফুল ও হারুন অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের নিয়ে জমির পাকা ধান কেটে নিতে যায়। তারা আব্দুস সাত্তারকে খুন জখম ও গোটা জমি দখল করে নেওয়ার হুমকী দেই।
ইছামতি নদী দখল করে মাছ চাষ করছেন আ’লীগ নেতার ছেলে
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ভারত সীমান্ত ঘেষা ঐতিহ্যবাহী নদীতে বাঁধ নির্মান করে মাছ চাষ করা হচ্ছে। এতে এলাকার মানুষ মাছ ধরা থেকে শুরু করে নানা কাজে পানি ব্যবহার করতে পারছেন না। নদীতে হঠাৎ করে শরিফুল ইসলাম নামে এক আওয়ামীলীগ কর্মী বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ শুরু করেছেন। স্থানিয়রা বলছেন, বছরের পর বছর এই নদীর সরকারি জায়গা জনসাধারণের জন্য উন্মক্ত ছিল। গ্রামের মানুষ নদীর পানিতে গোসল থেকে শুরু করে বাচ্চারা খেলাধুলা করতো। এখন বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করার কারনে কাউকে সেখানে নামতে দেওয়া হচ্ছে না। নদীর পানিতে গোসল করা যাবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। জেলেদের মাছ ধরার কোন সুযোগ নেই। শ্রীনাথপুর গ্রামের একাধিক ব্যক্তি জানান, শ্রীনাথপুর গ্রামের তোফাজ্জেল হোসেনের ছেলে আওয়ামীলীগ কর্মী শরিফুল ইসলাম গত ১০ দিন হলো হঠাৎ করে ওই নদীর মাঠপাড়া ও হালদারপাড়া এলাকায় দুইটি বাঁধ দেন। মাঝে আনুমানিক ৫০ থেকে ৬০ বিঘা জলাকার এই বাঁধ দিয়ে আটকে ফেলেন। আর এক সপ্তাহ হলো সেই আটকে ফেলা জলাশয়ে তিনি মাছ ছেড়েছেন। হালদারপাড়ার সাধন হালদার জানান, তারা প্রায় ১৭ টি পরিবারে শতাধিক মানুষ এই নদীর পাড়েই বসবাস করেন। এছাড়াও গ্রামে আরো হালদার সম্প্রদায় রয়েছে। যারা এই নদীতে মাছ ধরে বিক্রি করেন। এই মাছ বিক্রির মাধ্যমে তাদের সংসার চলে। এই বাঁধ দেওয়ার কারনে তারা আর নদীতে নামতে পারছেন না। তিনি বলেন, শরিফুল ইসলামের এক ভাই স্থানিয় ইউপি সদস্য। যে কারনে শরিফুল কোনো কিছুই মানতে চান না। তাদের সমস্যার কথাগুলো বলেছেন, কিন্তু তিনি গুরুত্ব দেননি। এ বিষয়ে দখলকারি শরিফুল ইসলামের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, নদীতে এখন পানি কম। তিনি খাবার জন্য কিছু মাছ ছেড়ে বড় করছেন। এটা তিনি শুনে করেছেন, কিন্তু কাদের কাছে শুনেছেন তা বলতে চাননি। শ্যামকুড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আমান উল্লাহ জানান, তিনি ঘটনাটি শুনেছেন। তবে দ্রুতই খোজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান। মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) সুজন সরকার জানান, বিষয়টি তিনি অবগত নন। তবে খোজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।
মহেশপুর সীমান্ত থেকে আবারও ২ দালাল সহ ১৬ জন আটক
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে অবৈধ ভাবে বাংলাদেশে প্রবেশকালে ২ দালালসহ আরো ১৬ জনকে আটক করেছে বিজিবি। বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার জলুলী ও পলিয়ানপুর বিওপির সীমান্ত থেকে তাদের আটক করা হয়। ঝিনাইদহের খালিশপুর ৫৮ ব্যাটালিয়ানের পরিচালক লেঃ কর্নেল কামরুল আহসান জানান, সকালে জলুলী ও পলিয়ানপুর বিওপির সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় জলুলী বিওপির অধীনে মাটিলা মাঠ থেকে আটক করা হয় ৪ জন পুরুষ, ৩ জন নারী ও ১ জন দালাল। একই সময় পলিয়ানপুর বিওপির অধীনের ভৈরবা মোড় থেকে ৫ জন পুরুষ, ২জন নারী ও ১ জন দালালকে আটক করা হয়। তাদেরকে মহেশপুর থানায় সোপর্দ করার হয়েছে। আটককৃতরা প্রত্যেকেই বাংলাদেশের নাগরিক বলে দাবি করছে। এ নিয়ে ৫৮ ব্যাটালিয়ানের আওতায় ঝিনাইদহ সীমান্তে অবৈধ প্রবেশের সময় মোট প্রায় ২’শ ৭০ জনকে আটক করেছে বিজিবি।