বৃহস্পতিবার ● ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » গাইবান্ধা » গাইবান্ধায় হাঁড় কাঁপানো শীতের হানা
গাইবান্ধায় হাঁড় কাঁপানো শীতের হানা
গাইবান্ধা :: পৌষের শুরুতেই গাইবান্ধায় হঠাৎ করেই শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। সেইসাথে লেপ তোষক বানানোরও হিড়িক পড়েছে। গাইবান্ধার পেশাদার ধুনকরদের তাই এখন ব্যস্ত সময় কাটছে।
শহরের কেন্দ্রস্থলে সাবেক জেলা জজ অফিসের পরিত্যক্ত খোলা মাঠে লেপ তোষক বানানোর কাজ খুব জোরে সরেই চলছে। ফলে এতোদিন নিরলস বসে থাকার সময় পেরিয়ে এখন হাতে অনেক কাজ জমেছে ধুনকরদের। গাইবান্ধা জেলা ধুনকর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মন্টু সর্দারের সাথে কথা বলে জানা গেল, একটি লেপ তৈরী করতে তারা এখন মজুরী নিচ্ছে ২৫০ টাকা। এছাড়া তোষক ২২০ টাকা, বালিশ প্রতিটি ২৫ টাকা এবং জাজিম তৈরীতে ৪শ’ টাকা হারে মজুরী নেয়া হচ্ছে। এই মজুরীর হার অন্য সময়ের চাইতে কিছুটা বেশী। জানা গেল, একটি তোষক তৈরী করতে মজুরী, কাপড় এবং তুলাসহ এখন মোট ব্যয় পড়ছে ৭শ’ থেকে ৭শ’ ৫০ টাকা। আবার জাজিম তৈরী করতে ব্যয় হয় ১ হাজার ৫শ’ থেকে ১ হাজার ৭শ’ টাকা পর্যন্ত। আর লেপ কভারসহ তৈরী করতে ব্যয় হয় ১ হাজার ৫শ’ থেকে ১ হাজার ৭শ’ টাকা। ধুনকরদের সাথে কথা বলে আরও জানা গেল, বিশেষ করে শীতের মৌসুমে একজন ধুনকর দিনে ২ থেকে ৩টি লেপ এবং ৪ থেকে ৫টি তোষক তৈরী করতে পারে। শীতের মৌসুম ছাড়া অন্য সময় চাহিদা কম থাকায় অর্থাভাবে তাদের পারিবারিক জীবন জীবিকা নির্বাহ করা অত্যান্ত দুর্বিসহ হয়ে ওঠে।
প্রসঙ্গত উলে¬খ্য যে, ইতোপূর্বে শিমুল তুলায় বালিশ এবং কার্পাস তুলায় লেপ ও তোষক তৈরী হতো। কিন্তু এখন শিমুল এবং কার্পাস তুলার সবররাহ অনেক কম হওয়ায় দাম যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে প্রতিকেজি শিমুল তুলা ২৫০ টাকা এবং কার্পাস তুলা ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে সংগত কারণেই লেপ তোষক বানানোর ক্ষেত্রে ক্রেতারা গার্মেন্টেসের ঝুট কাপড় এবং বে¬জারের কাপড়ের টুকরো থেকে তৈরী বিশেষ জাতের তুলা দিয়েই লেপ ও তোষক বানানোর দিকেই ঝুকে পড়ছে বেশী। কেননা প্রতিকেজি বে¬জারের তুলার দাম পড়ে মাত্র ২৫ থেকে ৫০ টাকা। এছাড়া গার্মেন্টেসের অন্যান্য তুলার দাম পড়ে ২৩ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। এতে লেপ ও তোষক বানানোর খরচ পড়ে অনেক কম। সে কারণে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো এই বিশেষ জাতের তুলা দিয়ে লেপ, তোষক, বালিশ ও জাজিম বানানোর দিকে ঝুকে পড়ছে বেশী।
গাইবান্ধা জেলা শহরে সমিতিভূক্ত ৮০ জন পেশাদার ধুনকর বংশ পরমপরায় সাবেক জেলা জজ কোর্টের পরিত্যক্ত এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী টেনিস কোর্টে এবং রাস্তার ধারেই পাটি বিছিয়ে খোলা আকাশের নিচে তুলা ধুনা থেকে শুরু করে লেপ, তোষক, জাজিম বানানোর কাজ সম্পন্ন করে আসছে। এতে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির সময়টিতে তাদের কোন কাজ করাই সম্ভব হয় না। ফলে কর্মহীন হাত গুটিয়েই বসে থাকতে হয়। এতে করে এই পেশা নির্ভর জীবন জীবিকা চালাতে গিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে তাদের মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে।
ধুনকর সমিতির দাবি তাদের সমিতির নামে সরকারি কোন জায়গা বরাদ্দ দিয়ে স্থায়ী ব্যবস্থা করলে তারা স্বচ্ছলভাবে তাদের পৈত্রিক পেশা চালিয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে।
প্রতিকারের দাবিতে আসামিদের স্ত্রী ও সন্তানদের সংবাদ সম্মেলন
গাইবান্ধা :: গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার চিকনী গ্রামের এমদাদুল হক আকন্দ জমি দখলের অপচেষ্টায় তার ২য় স্ত্রী মমিনা বেগমকে হত্যা করে। এই হত্যার দায় এড়াতে চিকনী ও চাঁদকরিম গ্রামের প্রতিপক্ষ ২১ জনের নামে সে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করে। এই মামলা দায়েরের ফলে অসহায় কৃষিজীবী ও শ্রমজীবী আসামিরা পরিবার-পরিজনসহ বাড়ি ঘর ছেড়ে ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। বৃহস্পতিবার গাইবান্ধা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে আসামি হারুন মিয়া আকন্দের স্ত্রী সম্পা বেগম, আব্দুল বারী আকন্দের ছেলে মুরাদ, আব্দুল হাই মিয়ার মেয়ে উম্মে হাবিবা সিঁথি পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসন ও গোয়েন্দা বিভাগের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে এই হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনসহ এর প্রতিকার এবং ন্যায় বিচার দাবি করে।
মামলার অন্যতম আসামি চাঁদকরিম গ্রামের হারুন মিয়া আকন্দের স্ত্রী সম্পা বেগম সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উলে¬খ করেন একই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল বারি আকন্দ (সাদা), আজহার আলীর সন্তানরা নুরুন্নবীর মৃত্যু হলে তাদের ভোগ দখলীয় ২১ শতক জমি গত ১ বছর আগে পাশর্^বর্তী চিকনী গ্রামের মুছা আকন্দের নিকট কবলা মূলে বিক্রি করে তাদেরকে দখলসত্ব বুঝিয়ে দেয়। জমি বিক্রির পর বারি আকন্দ ও তার স্ত্রী মিনারা বেগম ২০১৮ সালে পবিত্র হজ¦ পালন করে। উক্ত আবাদি জমি ক্রয় করার পর থেকে মুছা আলী আকন্দ তার ছেলে আব্দুস সালাম ভোগ দখল করে আসছে। ওই জমি দখলের জন্য এমদাদুল হক একাধিকবার চেষ্টা চালায় এবং নানাভাবে হত্যার হুমকি দিতে থাকে। একপর্যায়ে চলতি বছরের জুন মাসের ১৬ তারিখে লাঠিসোটাসহ সন্ত্রাসী লোকজন নিয়ে ওই জমিতে অবৈধভাবে ঘর তোলে এবং বসতবাড়িতে ভাংচুর চালায়। ফলে এব্যাপারে মুছা আলী আকন্দ ইতোপূর্বে সাদুল্যাপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করতে বাধ্য হয়।
এতে জমি দখলে ব্যর্থ হয়ে একইদিন রাত দেড়টায় এমদাদুল হক আকন্দ উল্টো নিজে তার বাড়ীতে অগ্নিসংযোগ করে এবং দ্বিতীয় স্ত্রী মমিনা বেগমকে ছুরিকাঘাতে হত্যার পর প্রতিপক্ষের উপর দায়ভার চাপিয়ে দেয়। পরে সে সাদুল্যাপুর থানায় তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন মামলা দায়ের করে। অথচ এতোগুলো লোকের সমন্বয়ে একটি বাড়িতে হত্যাকান্ডটি রাতের বেলা সংঘটিত হলেও পাশ্ববর্তী লোকজন বা গ্রামবাসী কেউই বিষয়টি জানেন না। তদুপরি রাতেই স্ত্রীর লাশটি মর্গ থেকে নিয়ে নিজ বাড়ি চিকনী গ্রামে দাফন সম্পন্ন না করে শ্বশুর বাড়ির বনগ্রামের কাজী বাড়ি সন্তোলা গ্রামে তড়িঘড়ি করে দাফন করে।