শনিবার ● ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » কৃষি » কালীগঞ্জে ছয়শ হেক্টর জমিতে কৃষকরা ছিটা সরিষার চাষ
কালীগঞ্জে ছয়শ হেক্টর জমিতে কৃষকরা ছিটা সরিষার চাষ
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: নরম ক্ষেতে ছিটানো হয় সরিষার বীজ। এরপর পাকা ধানের মধ্যেই গজিয়ে ওঠে চারা। আর ধান কাটার সময়ে সরিষার চারার মাথা সমান করে কেটে নেয়া হয়। সেখানেই কোন সার,পানি সেচ অথবা জমি চাষ ছাড়াই আপন গতিতে বাড়তে থাকে সরিষার গাছ। এভাবেই আমন কাটার দুই সপ্তাহ আগে বীজ ছিটানো হয়। চারাগুলো ডালপালা ছেড়ে এক সময় সমস্ত ক্ষেত হলুদে ভরে যায়। এটাতে তেমন কোন খরচ নেই। শুধু বীজ ছিটিয়ে দিয়েই কৃষকেরা এ সরিষা ঘরে তোলেন। তাই এর নাম ছিটা সরিষা। আমন থেকে বোরো চাষের মাঝখানে অলস জমি পড়ে থাকে। সে সময়ে কোনো রকমের খরচ বাদেই সরিষা পাওয়া যায়। তাই কৃষকেরা এটাকে তাদের বোনাস ফসল হিসেবে মনে করেন। লাভ পেয়ে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের কৃষকেরা দিন দিন এ বোনাসেই ঝুঁকছেন। উপজেলা কৃষি অফিসের সূত্রানুযায়ী, এ উপজেলায় ছিটা সরিষার চাষ খুব বেশি আগে শুরু হয়নি। কিন্তু অল্প দিনের মধ্যেই কৃষকদের মাঝে সাড়া ফেলেছে। এ মৌসুমে উপজেলাতে মোট সরিষার চাষ হয়েছে প্রায় ১৩’শ ২৫ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে ছিটা সরিষার চাষ হয়েছে প্রায় ছয়শ হেক্টর জমিতে। কালীগঞ্জ উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান জানান, ২০০৮ সালে সুন্দরপুর দূর্গাপুর ইউপির কৃষি কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। এ ইউপির মাঠ গুলোর মাটি খানিকটা রস পানতা। এ কারণেই তিনি ছিটা সরিষায় উৎসাহিত করেন। একাধিক কৃষক জানান, কার্ত্তিক মাসে আমন ধান কাটার দুই সপ্তাহ আগেই পাকা ধান ক্ষেতের মধ্যে প্রতি বিঘা জমিতে দুই কেজি করে সরিষা ছিটিয়ে দিতে হয়। এরপর কয়েক দিনের মধ্যে চারা গজিয়ে গেলে কৃষকরা তাদের ক্ষেতের ধান কাটা শুরু করেন। পরে ওই জমিতেই বেড়ে উঠতে থাকে সরিষার ছোট ছোট চারা। আর কোনো বাড়তি যতœ ছাড়াই বীজ সিটানোর ৭/৮ সপ্তাহের মধ্যেই কৃষকেরা সরিষা সংগ্রহ করতে পারেন। এই পদ্ধতিতে এক বিঘা জমিতে ৪-৫ মণ সরিষার ফলন পাওয়া যায়। আবার সরিষা সংগ্রেহের পর ওই জমিতেই বোরো চাষের সুযোগ থাকে। একই ইউপির সুন্দরপুর গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান জানান, তিনি এ বছর প্রায় ৫০ শতক জমিতে ছিটা সরিষার চাষ করেছেন। এজন্য তার কোন খরচ লাগেনি। তিনি আরো জানান, অন্য ফসল চাষ করে উৎপাদন ব্যয় বাদ দিলে খুব বেশি একটা লাভ থাকে না। সে ক্ষেত্রে ছিটা সরিষায় কোনো খরচ বাদেই বিঘা প্রতি যে সরিষা পান তা থেকে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা আসে। এটা তারা বোনাস বলে মনে করেন। কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল করিম জানান, এ বছর উপজেলায় প্রনোদন হিসেব মিলে প্রায় এক হাজার কৃষকের বারি ১৪ জাতের সরিষার বীজ বিনামূল্যে দিয়েছেন। এ উপজেলাতে এ বছর প্রায় ছয়শ হেক্টর জমিতে কৃষকরা ছিটা সরিষার চাষ করেছেন। এ চাষে তেমন কোনো খরচ নেই। তাই তারা মনে করেন এটা কৃষকের বোনাস ফসল। অল্পদিনে স্বল্প খরচে উৎপাদন হয় ফলে কৃষকেরা দিন ছিটা সরিষা চাষে ঝুঁকছেন।