সোমবার ● ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » গাইবান্ধা » প্রভাবশালীদের দখলে বাঙালি নদীর কুমিরদহ জলমহাল
প্রভাবশালীদের দখলে বাঙালি নদীর কুমিরদহ জলমহাল
গাইবান্ধা :: গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ঘুড়িদহ ইউনিয়নের পবনতাইড়, হলদিয়া, জুমারবাড়ি ও চিনিরপটল মৌজার মরা বাঙালি নদীর কুমিরদহ জলমহালটি মৎস্যজীবীদের কাছ থেকে জবর দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা। ফলে ওই এলাকার মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিভূক্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৪শ’ ৫০ জন প্রকৃত মৎস্যজীবী পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
‘জাল যার- জলা তার’ এই নীতি অনুসারে ৩৮.১০ একর বিস্মৃত এই জলাশয়টিতে ৩২ বছর যাবত মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রকৃত মৎস্যজীবী পরিবারগুলো। কিন্তু ২০১০ সালে প্রভাবশালী জোরদার শামীম মিয়াসহ পার্শ্ববর্তী তার সহযোগী লোকজনরা ওই জলাশয়টি দখল করে নেয়। ফলে মৎস্যজীবী সমিতির নামে লীজ বাবদ ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা জমা দিয়েও ওই জলাশয়টির দখল পায়নি। এব্যাপারে হাইকোর্ট ও সুপ্রিমকোর্টে মৎস্যজীবীরা তাদের পক্ষে রায় পেলেও এখন পর্যন্ত প্রভাবশালীদের দাপটে জলাশয়ে মাছ ধরতে পারছে না অসহায় মৎস্যজীবীরা।
ফলে সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে জুমারবাড়ি ও ঘুড়িদহ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির পক্ষ থেকে সভাপতি জোসনা চন্দ্র দাস, সম্পাদক মোংলা রাম দাস এবং সদস্য রমেশ চন্দ্র দাস ও বাদল চন্দ্র দাস স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এতে ১৪২০ সালের জমাকৃত উক্ত লীজ মানির পরিপ্রেক্ষিতে ১৪২৬ ও ১৪২৮ সালের জন্য মরা বাঙালি নদীর কুমিরদহ জলমহালটি ৪শ’ ৫০ জন মৎস্যজীবীকে বন্দোবস্ত দেয়ার দাবি জানানো হয়। দীর্ঘদিন জলমহাল না পেয়ে মামলা মোকদ্দমা পরিচালনা করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র মৎস্যজীবীদের সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করা এবং প্রভাবশালীদের হুমকি মোকাবেলায় সংখ্যালঘু মৎস্যজীবীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ বাংলাদেশ সরকারের ভূমি আপিল বোর্ডের ধারা মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
সরেজমিনে চিনিরপটল গ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অসহায় মৎস্যজীবী পরিবারদের মধ্যে খগেন্দ্র নাথ দাস, বিনয় চন্দ্র দাস, সুধারাম দাস, বাসন্তি রাণী, ঝর্না দাস, সন্ধ্যা দাস, রুমা দাস, মাধরী দাস, লতা চাকি, সোনালী চন্দ্র দাস, নিশি রাণীসহ অন্যান্যরা তাদের করুণ অবস্থা তুলে ধরেন এবং এর প্রতিকার দাবি করেন। তারা জানান, প্রভাবশালীদের দাপটে জলমহালটিতে মাছ ধরতে না পারায় তারা এখন পাইকারদের কাছ থেকে মাছ কিনে নিয়ে এসে বাজারে বিক্রি করে অর্ধাহারে অনাহারে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
মেয়ের ধর্ষণ মামলা করতে গিয়ে পিতা নিজেই আসামি
গাইবান্ধা :: গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের টিয়াগাছা গ্রামে পালিত মেয়ে রাজিয়া সুলতানার ধর্ষণের মামলা করতে গিয়ে পালক পিতা ওই ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড সদস্য ইদ্রিস আলী চেংটু নিজেই আসামি হয়ে জেল খেটেছেন। ধর্ষণ ঘটনার মূল আসামি মাসুদ মিয়ার বিচার এবং মিথ্যা ধর্ষণ মামলা থেকে পালক পিতার অব্যাহতি, সুবিচারসহ থানা পুলিশের অন্যায়-দুর্নীতির প্রতিকারের দাবি জানিয়ে আজ সোমবার গাইবান্ধা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন রাজিয়া সুলতানা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, ভাতগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান এটিএম রেজানুল ইসলাম বাবুর বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় ৪নং ওয়ার্ড সদস্য ইদ্রিস আলী চেংটুর সাথে মনোমালিন্য চলে আসছিল। একপর্যায়ে চেয়ারম্যান তাকে ফাঁসাতে নানা ফন্দি আঁটেন। চেয়ারম্যানের নিকটতম প্রতিবেশী একই ইউনিয়নের দক্ষিণ সনতোলা গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে মাসুদ মিয়ার সাথে ইদ্রিস আলী চেংটুর পালিত মেয়ে রাজিয়া সুলতানার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই প্রেমের সম্পর্কের জের ধরে গত ৩ মে রাতে নিজ বাড়িতে রাজিয়া সুলতানাকে একা পেয়ে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ধর্ষণ করে মাসুদ মিয়া। কিন্তু পরে মাসুদ মিয়া পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় পরের দিন ৪ মে ধর্ষিত রাজিয়া সুলতানাকে নিয়ে ইদ্রিস আলী চেংটু ও তার স্ত্রী শিউলী বেগম থানায় ধর্ষক মাসুদ মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে চেয়ারম্যানের প্রভাবে তাদের বেআইনিভাবে আটক করে হাজতে রাখে পুলিশ এবং অকথ্য গালিগালাজ ও মারপিট করে। শুধু তাই নয়, পুলিশ জোর করে রাজিয়া সুলতানাকে দিয়ে উল্টো চেংটুর বিরুদ্ধেই ধর্ষণ ও অকাল গর্ভপাত ঘটানোর মিথ্যা অভিযোগে জোর পূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে মামলা দায়ের করে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইউপি সদস্য ইদ্রিস আলী চেংটু, শিউলী বেগম, রাজিয়া সুলতানা এবং প্রতিবেশী নজরুল ইসলাম প্রমুখ।