বৃহস্পতিবার ● ১৬ জানুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » বিশ্বনাথে সৌখিন শিকারীরা পলো দিয়ে মাছ ধরেছেন
বিশ্বনাথে সৌখিন শিকারীরা পলো দিয়ে মাছ ধরেছেন
মো. আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ থেকে :: সিলেটের বিশ্বনাথে বিপুল উৎসাহ-উদ্দিপনার মধ্য দিয়ে বার্ষিক পলো বাওয়া উৎসব পালিত হয়েছে। বুধবার উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের গোয়াহরি গ্রামের দক্ষিণের (বড়) বিলে ওই পলো বাওয়া উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশগ্রহন করেন গ্রামের কয়েক শতাধিক মানুষ। সৌখিন শিকারীরা পলো দিয়ে মাছ ধরেছেন অনেকেই মাছের মধ্যে ছিল বোয়াল, শউল, মিরকা, কারপু, বাউশ, ঘনিয়া, রউ’সহ বিভিন্ন জাতের মাছ।
গোয়াহরি গ্রামের ঐহিত্য অনুযায়ী প্রতি বছরের মাঘ মাসের পহেলা তারিখ এই পলো বাওয়া উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। পলো বাওয়া উৎসবকে কেন্দ্র করে গোয়াহরি গ্রামে গত কয়েকদিন ধরে উৎসবের আমেজ রিবাজ করছিল। পলো বাওয়া এই উৎসবে অংশ নিতে গতকাল বুধবার সকাল ৯টা থেকে গোয়াহরি গ্রামের সৌখিন মানুষ বিলের পারে এসে জমায়েত হতে থাকেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিলের পারে লোকসমাগম বাড়তে থাকে। পূর্ব নির্ধারিত সময় দুপুর ১২টায় সবাই এক সঙ্গে বিলে নেমে শুরু করেন পলো বাওয়া। শুরু হয় ঝপ ঝপ পলো বাওয়া। প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপী এ পলো বাওয়া উৎসবে গোয়াহরি গ্রামের সব বয়সি পুরুষ অংশ নেন।
সরেজমিনে গোয়াহরি বিলে গিয়ে দেখা যায়, মাছ শিকার করতে নিজ নিজ পলো নিয়ে বিলের ওপর ঝাপিয়ে পড়েন লোকজন। যাদের পলো নেই তারা মাছ ধরার ছোট ছোট বিভিন্ন জাল নিয়ে মাছ শিখারে ব্যস্ত সময় কাটান। এসময় মাছ ধরার এ দৃশ্যটি উপভোগ করতে বিলের পারে ছোট ছোট শিশু থেকে বৃদ্ধ বয়সের পুরুষ-মহিলা, দূর থেকে আসা অনেকের আত্বীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবকে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ছেলে বুড়ো মিলিয়ে প্রায় তিন শতাধিক লোক পলো বাওয়া উৎসবে অংশগ্রহন করেন। বিল থেকে অন্যান্য বছরের তুলনায় মাছ শিকার হয়েছে কম। পুরানো দিনের এই পলো বাওয়া উৎসব দেখার জন্য প্রতি বছরের ন্যায় এবার বিয়ে হয়ে যাওয়া অনেক মহিলা বাবার বাড়িতে ও অনেক প্রবাসী দেশে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে এসেছেন। তবে পলো বাওয়া উৎসবের আনন্দটা যুবক-বৃদ্ধের চেয়ে ছোট ছোট শিশুদের মাঝেই একটু বেশি আনন্দের মনে হয়েছে। তারা তাদের বাবা-চাচা-দাদা-মামা-ভাইর হাত ধরে কইল নিয়ে এসেছে মাছ ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য। পলো বাওয়া উৎসবে কোন একজন একটি মাছ ধরার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্যরা আনন্দ মনে চিৎকার করে উঠেন। ছোট-বড় কোন ভেদাভেদ না করে সবাই মিলে পূর্ব পুরুষদের মত প্রায় দুই শত বছর ধরে এই পলো বাওয়া উৎসবে যোগ দেন গোয়াহরি গ্রামের শতশত মানুষজন। তবে এই পলো বাওয়া দেখতে আশপাশের গ্রামের লোকজন সকাল থেকেই ছোট ছোট দল বেঁধে আসতে থাকেন গোয়াহরি বড় বিলে। সংবাদ সংগ্রহের জন্য স্থানীয় সংবাদকর্মীরাও ছুটে যান বিলে। সবাই মাছ পেয়ে সবার মনে আনন্দের সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
এলাকাবাসীর সঙ্গে আলাপকালে জানাযায়, প্রায় দুইশত বছর ধরে গোয়াহরি গ্রামের বড় বিলে পলো বাওয়া উৎসব পালন করে আসছেন। প্রতি বছর শীত মৌসুমে এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে বিলে মাছ শিকার করেন। ঐতিহ্যবাহি এ পলো বাওয়া উৎসব দেখতে উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা উৎসুক জনতা জানান, আমরা পলো বাওয়া উৎসব দেখতে এসেছি। আমাদের খুব ভাল লাগে পলো বাওয়া দেখতে। আমাদের কাছে পলো বাওয়া উৎসব খুব মজার বিষয়। শত ব্যস্ততার মধ্যেও তারা এ উৎসব দেখতে আসেন। গ্রামবাসী কয়েক যুগ ধরে এই উৎসব পালন করে আসছেন।
গোয়াহরি গ্রামবাসীরা জানান, গ্রাম পঞ্চায়েতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভাদ্র মাস থেকে বিলে সকল প্রকার মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়। এতে বিলে জড়ো হয় বিভিন্ন জাতের প্রচুর মাছ। এই পাঁচ মাসে মাছ গুলো সুযোগ পায় বড় হওয়ার । ‘পলো উৎসব’র এক সপ্তাহ পূর্বে পঞ্চায়েতের সভা ডেকে শৃংঙ্খলা রক্ষার জন্য নেয়া হয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। সভার পরপরই উসৎসবের ন্যায় গ্রামের ঘরে ঘরে পলো তৈরি, মেরামত ও সংগ্রহের কাজ চলে। এরপর মাঘ মাসের পহেলা দিনেই আনুষ্ঠানিক ভাবে একযোগে আমরা মাছ ধরতে বিলে নামি এবং অধিকাংশ শিকারীই মাছ হাতে বাড়ি ফিরেন।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী রহমত আলী, সমছুল ইসলাম, মনোহর আলী বলেন, বিদেশ থেকে আসার একমাত্র উদ্দেশ্য পলো বাওয়া উৎসবে অংশ গ্রহন করা। পলো বাওয়া উৎসব আমরা আনন্দ পাই। আমাদের পুরোনো দিনের ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রতি বছর এ আয়োজন করেন গ্রামবাসি। এজন্য অনেকেই এসময় ছুঠে আসেন দেশে।
ইউপি সদস্য গোলাম হোসেন বলেন, আমাদের উপজেলায় এটিই সব’চে বড় ‘পলো বাওয়া উৎসব’। যুগযুগ ধরে এ ঐতিহ্য চলমান। আমরা গ্রামবাসীরা মিলেমিলে প্রতিবছর এ বিল থেকে উৎসবের মতো দেশীয় প্রজাতির সু-স্বাদু আহরণ করে থাকি।