বৃহস্পতিবার ● ১৬ জানুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » জাতীয় » নদীর পানি সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় জাতীয় প্লাটফরম গঠন
নদীর পানি সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় জাতীয় প্লাটফরম গঠন
ঢাকা :: নদী,পানি, প্রাণ, প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য, সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় জাতীয় পর্যায়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আদলে একটি প্লাটফরম গঠন করা হয়েছে। নতুন এ প্লাটফরমের নাম দেয়া হয়েছে নদী-পানি-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা জাতীয় কমিটি।
জানা গেছে, নতুন এ প্লাটফরম গঠন নিয়ে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল মিলনায়তনে কয়েকদফা বৈঠক হয়েছে। বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনও সম্পৃক্ত হবে বলে জানা গেছে। নদী-পানি-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর।
এ ব্যাপারে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পাটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক জানান, প্রত্যেক রাষ্ট্র তার নিজের স্বার্থে এবং তার দেশের জনগণের স্বার্থে পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেয়েছে এমন প্রায় সব দলগুলো এমনভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে, যাতে তারা দেশের ওপর এবং দেশের জনগণের সমর্থণের ওপর ভরসা করতে পারেনি। অধিকাংশ সময়েই তারা কোনো না কোনো বিদেশী শক্তির সঙ্গে আপোষ করে তাদের অনুগ্রহে জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষমতা নিজেদের কুক্ষিগত করে রাখার লোভে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়েছে।
তিনি বলেন, তারা শুধু আমাদের রাষ্ট্রীয় অধিকার জলাঞ্জলি দিয়েছে এমন নয়, তারা এমনভাবে আইন-কানুন-চুক্তি সম্পাদন করেছে, যাতে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব এবং অস্থিত্বই হুমকির মুখে পড়েছে। এরকম চুক্তির মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের উপকুলে ভারতের সঙ্গে তাদের রাডার বসানোর যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে তা উল্লেখযোগ্য।
জানা যায়, নদী-পানি-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা জাতীয় কমিটির গঠনের লক্ষ্যে যে বৈঠক হয়েছে এতে বলা হয়, এসব চুক্তির মাধ্যমে তারা একদিকে যেমন দেশকে ভয়াবহ বিপদেও মুখে ঠেলে দিচ্ছে, অন্যদিকে স্বাধীন একটি সরকার হিসাবে অর্ন্তজাতিক অঙ্গনে যে নূন্যতম মর্যাদাটুকু পাওয়ার কথা ছিল তাও পচ্ছে না। আর তেল.গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ এবং বন্দরের মত নদী পানির মত স্পর্শকাতর রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ও প্রতিষ্ঠানে যেন বাইরের কোন আগ্রাসী থাবা তছনছ করার পাশাপাশি লুটে নিয়ে যেতে না পারে তারই সর্তক আয়োজন এটি।
গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল মিলনায়তনে বৈঠকের অবস্থান পত্রে বলা হয়, ফারাক্কার পানি প্রবাহ নিয়ে চুক্তি থাকা সত্ত্বেও চুক্তি অনুযায়ী পানি না দেয়া, তিস্তার মতো আর্ন্তজাতিক নদী সম্পূর্ণরূপে পানি তুলে নিয়ে সেচকাজে ব্যবহার করা, প্রবাহমান নদীগুলিতে অনিয়ন্ত্রিক শিল্পবর্জ্য নিঃস্বরণের মাধ্যমে দূষণ ও আর্ন্তজাতিক রীতিনীতি উপক্ষো করাসহ ভারত বহুক্ষেত্রে পানি আইনের বরখেলাপ করে চলেছে। বাংলাদেশের জন্য ভারতের সবচাইতে ভয়াবহ প্রকল্প আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প বা রিভার লিংকিং প্রজেক্ট। ভারতীয় সুপ্রীম পর্যন্ত এ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়ে রেখেছে, যা সর্ম্পূর্ণ প্রাণ-প্রকৃতি ও আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। এ প্রকল্পের মাধ্যমে অববাহিকার পানিকে খরাপ্রবণ পেনিনসুলার অববাহিকায় নিয়ে যাবার যে উদ্যোগ তা ভারত সরকার ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করে চললেও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এখন পর্যন্ত এসব বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে চলেছে। আর এজন্য বাংলাদেশে একটি শক্তিশালি প্লাটফরম তৈরির করা দরকার।
জানা গেছে, নদী-পানি-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা জাতীয় কমিটি তাদের আয়োজন নিয়ে মার্চেই একটি কনভেনশন করবে। এছাড়া রয়েছে দেশব্যাপী সেমিনার সভার কর্মসূচি।
এতে সংযুক্ত হয়েছেন- অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পাটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বিডি রহমত উল্লাহসহ বুদ্ধিজীবী, গবেষক, লেখক, সাংবাদিক, রাজনীতিক ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার নেতৃস্থানীয়রা।