শনিবার ● ২৫ জানুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » পাবনা » পাবনার ঢালারচর এক্সপ্রেস ট্রেন যাত্রী সংকটে
পাবনার ঢালারচর এক্সপ্রেস ট্রেন যাত্রী সংকটে
পাবনা জেলা প্রতিনিধি :: পাবনা এক্সপ্রেস’ ট্রেনের নাম পাল্টে ‘ঢালারচর এক্সপ্রেস’ নামকরণ এবং ট্রেনটির সময়সূচিতে পরিবর্তন আনায় চালুর মাত্র দেড় বছরেই রাজশাহী-পাবনা-ঢালার চর রুটের এ ট্রেনটি যাত্রী সংকটে পড়েছে।
সারাদেশের প্রায় সব ট্রেনে যখন উপচেপড়া ভিড় থাকে, সেখানে এই ট্রেন এখন প্রতিদিন আসন সংখ্যার বিপরীতে অর্ধেকেরও কম যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে।
এ অবস্থায় ট্রেনটির আগের নাম ও সময়সূচি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছে পাবনা জেলাবাসী।
রেলওয়ের সংশ্নিষ্ট বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে১৮ জুলাইয়/২০১৮ সালে ‘পাবনা এক্সপ্রেস’ নামে নতুন এই ট্রেন চালু হওয়ার দিন থেকেই উপচেপড়া ভিড় ছিল। প্রতিদিন ৫২৪ আসনের এই ট্রেনে গড়ে পাঁচ/ছয়শ’ টিকিট বিক্রি হতো। যাত্রীরা আসন না পেয়ে আসনবিহীন টিকিট কেটে দাঁড়িয়েও ট্রেনে যাতায়াত করেছেন।
অথচ এ বছরের ১০ জানুয়ারি ট্রেনের সময়সূচি পরিবর্তন এবং সম্প্রতি পাবনা এক্সপ্রেস নাম বদলে ঢালার চর এক্সপ্রেস করার পর থেকে এই ট্রেনে এখন গড়ে ১০০ থেকে ১৫০টির বেশি টিকিট বিক্রি হয় না।
রেলওয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, শুরুর সময় থেকে প্রতিদিন সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে পাবনা থেকে ছেড়ে টেবুনিয়া, দাশুড়িয়া, মাঝগ্রাম, ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশন হয়ে রাজশাহী গিয়ে একই দিন বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে রাজশাহী থেকে ছেড়ে একইভাবে পাবনা পর্যন্ত চলাচল করত ট্রেনটি।
এই সময়সূচি অনুযায়ী পাবনা-ঈশ্বরদীর যাত্রীরা প্রতিদিন রাজশাহীতে শিক্ষা, চিকিৎসা, অফিসসহ নানান কাজ সেরে কিংবা বেড়ানোর উদ্দেশ্যে গিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে দিনের কাজ দিনে শেষ করে বাড়ি ফিরতে পারতেন।
নতুন সময়সূচি অনুযায়ী এখন প্রতিদিন সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটে পাবনা থেকে ছেড়ে রাজশাহীতে গিয়ে একই দিনে বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে রাজশাহী থেকে ছেড়ে পাবনায় চলাচল করছে ট্রেনটি।
নিয়মিত ট্রেনযাত্রী ইলারা জাহান এ্যানিতা বলেন, আগে যেখানে সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে রাজশাহী পৌঁছে বিকেলের ট্রেনে আবার ঈশ্বরদী বা পাবনার যেকোনো এলাকায় ফিরে আসা যেত। এখন সকাল ৯টায় রওনা দিয়ে রাজশাহী পৌঁছতেই প্রায় দুপুর হয়ে যায়। আবার ট্রেনটি রাজশাহী থেকে বিকেল সোয়া ৫টার পরিবর্তে এখন ছেড়ে আসছে বিকেল সাড়ে ৪টায়, ফলে রাজশাহীতে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে সেদিনই বাড়ি ফেরা সম্ভব হচ্ছে না।
অপর একজন নিয়মিত যাতায়াতকারী যাত্রী জানান, আগের সময়সূচি ছিল এই অঞ্চলের যাত্রীদের জন্য সুবিধাজনক। তারা দিনের কাজ দিনেই শেষ করে বাড়িতে ফিরতে পারতেন। কিন্তু নতুন সময় অনুযায়ী সেটি আর সম্ভব হচ্ছে না।
পাবনা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিটি আব্দুল আলীম বিশ্বাস মিঠু বলেন, গত ১০ জানুয়ারির পর থেকে এই ট্রেনের যাত্রীসংখ্যা আগের চেয়ে অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে। ট্রেনের অধিকাংশ সিট এখন খালি থাকে।
একই কথা বললেন পাবনা রেলওয়ে স্টেশনমাস্টার সাব্বির হোসেন এবং পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মজিবর রহমান।
রেলের সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নিয়মিত যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন স্টেশন ঢালার চর থেকে পাবনার দূরত্ব ৬০ কিলোমিটার। এক্ষেত্রে ঢালার চর থেকে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে না ছেড়ে এক ঘণ্টা পিছিয়ে সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে করা হলে এবং রাজশাহী থেকে আগের সময় বিকেল সাড়ে ৫টায় ছাড়া হলে যাত্রীরা আবার ফিরে আসবেন এই ট্রেনে।
এদিকে পাবনা এক্সপ্রেস ট্রেনের নাম পরিবর্তন করে ঢালার চর এক্সপ্রেস করায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন পাবনা, ঈশ্বরদীসহ এ এলাকার যাত্রীরা। এর প্রতিবাদে জেলার বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভাও হয়েছে।
নাম পরিবর্তনের বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক ও লেখক রণেশ মৈত্র বলেন, এমন কী হলো যে, এই নাম পরিবর্তন করতে হবে! পাবনা জেলাকে অবজ্ঞা করে একটি ক্ষুদ্র এলাকার নামে ট্রেনের নামকরণের কোনো মানে হতে পারে না। তিনি অবিলম্বে পাবনা এক্সপ্রেস নাম ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান।