শনিবার ● ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » গাইবান্ধা » গাইবান্ধায় অবৈধ ১৫০ ইট ভাটা
গাইবান্ধায় অবৈধ ১৫০ ইট ভাটা
গাইবান্ধা :: গাইবান্ধা জেলার সাত উপজেলায় জনবসতি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকা এবং ফসলি জমিতে স্থাপন করা ১৬৭ টি ইটভাটার মধ্যে মাত্র ১৭টির পরিবেশ ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স রয়েছে। আর বাকি ১৫০টি চলছে অবৈধভাবে। তবে ভ্যাট, আয়কর পরিশোধসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে ছাড়পত্র ও লাইসেন্স চেয়ে আবেদন করে ইট পোড়াচ্ছেন বলে দাবি করেছেন ভাটা মালিকরা।
এদিকে অবৈধ ১৫০টি ইটভাটার মধ্যে গত একমাসে জেলায় ১২টি ইটভাটাতে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এর মধ্য গত ১৪ জানুয়ারি পলাশবাড়ী উপজেলার মাঠেরহাটে এবিএম ও এমসিএইচ ব্রিকসকে ৭০ হাজার টাকা এবং ২৬ জানুয়ারি সাদুল্ল্যাপুর উপজেলায় চারটি ও সদর উপজেলায় একটিসহ পাঁচটি অবৈধ ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। পরিবেশ ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স না থাকায় প্রত্যেকটি ইট ভাটায় এক লাখ করে টাকা জরিমানা আদায়সহ সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এগুলো হচ্ছে, গাইবান্ধা সদর উপজেলার খোলাবাড়ী এলাকায় কে এবি ব্রিকস, সাদুল্যাপুর উপজেলার খোদ্দরসুলপুরে শিখা ব্রিকস, একই এলাকায় এসএম ব্রিকস, এ আরবি সরকার ব্রিকস, আর এসবি ব্রিকস। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট এসএম ফয়েজ উদ্দিন এসব ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মিহির লাল সরদার। এছাড়া গত ৫ ফেব্রুয়ারী পলাশবাড়ী উপজেলায় পাঁচটি ইটভাটায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেজবাউল হোসেন ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ৯ লাখ টাকা জরিমানা আদায়সহ আগুন নিভিয়ে ভাটা বন্ধ করে দেন। সেগুলো হলো, ভগবর্তীপুর এলাকার এস এস ব্রিকস, নারায়ণপুরে এম এস ব্রিকস, হিজলগাড়ী এলাকার এম এম ব্রিকস, পশ্চিম গোপিনাথপুরে এমএম ব্রিকস ও এমএসএম ব্রিকস।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মোট ইটভাটা রয়েছে ১৬৭টি। এর মধ্য ১৭টির পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র রয়েছে। লাইসেন্স পাওয়া ইটভাটাগুলোর বেশীর ভাগই স্থাপন করা হয়েছে কৃষি জমিতে ও জনবসতি এলাকায়। আর পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের লাইসেন্স বিহীন চলছে ১৫০টি ইটভাটা। সেগুলো হলো, সুন্দগঞ্জ উপজেলায় ২৬টি, সদর উপজেলায় ২০টি, সাদুল্ল্যাপুরে ১৩ গোবিন্দগঞ্জে ৩৪ পলাশবাড়ীতে ৪৬ ও সাঘাটা উপজেলায় ১১টি ইটভাটা।
সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, একটি ইটভাটা পরিচালনা করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, হালনাগাদ ইট পোড়ানোর লাইসেন্স, পরিবেশবান্ধব (জিগজ্যাক) চিমনি, কয়লা পোড়ানো এবং আয়কর পরিশোধ করতে হয়। এ ছাড়া ট্যাক্স, ভ্যাট পরিশোধের সনদপত্র, আপত্তি নেই মর্মে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের সনদপত্র, ভূমিকর পরিশোধের রশিদ ও জমির মালিকানা অথবা ভাড়ার চুক্তিপত্র জেলা প্রশাসক অফিসে দাখিল করার নিয়ম। পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র হাতে পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ জেলা প্রশাসকের কাছে ইট প্রস্তুতকরণের জন্য (ইটভাটা স্থাপনের) লাইসেন্স চেয়ে আবেদন করতে হয়। সেই আবেদন অনুসন্ধান কমিটি অনুসন্ধান পূর্বক জেলা প্রশাসকের কাছে লাইসেন্স প্রদানের বিষয়ে সুপারিশ করবে। প্রয়োজনে জেলা প্রশাসক বিষয়টি নিজে যাচাই করবেন। তার পর নির্ধারিত ফি নিয়ে লাইসেন্স প্রদান করবেন।
৬ সদস্যের এই কমিটিতে রয়েছেন, জেলা প্রশাসক কর্তৃক মনোনীত একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এই কমিটির আহ্বায়ক হবেন, এবং পরিবেশ অধিদফতরের বিভাগীয় কার্যালয় বা জেলা কার্যালয় কর্তৃক মনোনীত কোনো কর্মকর্তা হবেন সদস্য সচিব। আর সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এবং বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বা কর্তৃক মনোনীত কোনো বন কর্মকর্তা এই কমিটির সদস্য হিসেবে থাকবেন। আইনে পরিষ্কার বলা আছে, জিগজ্যাক ভাটায় ইট পোড়ানোর কাজ করতে হবে। সেখানে আইনকে উপেক্ষা করে গাইবান্ধায় ফিক্সড চিমনিতে ইট পোড়ানো হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইটভাটা মালিক জানান, সর্বনিম্ন ৪৫ ফুট থেকে সর্বোচ্চ ১২০ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন জিকঝাক চিমনি স্থাপন করতে খরচ হয় ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। কিন্তু ফিক্সড চিমনিতে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা খরচ হওয়ায় আইনের তোয়াক্কা না করে ভাটা মালিকরা ফিক্সড চিমনিতে ইট পোড়াচ্ছে। এক্ষেত্রে পরিত্যক্ত অনাবাদি জমি, নিচু জলাশয়ের ধারে, নদীর পাশে এবং কমপক্ষে চারদিকে ১ কিলোমিটার জনশূন্য এলাকায় ইটভাটা স্থাপনের অনুমোদন দেওয়ার কথা। কিন্তু গাইবান্ধায় যেসব ইটভাটার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে তার বেশীর ভাগই ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে জনবসতি এলাকায় ও কৃষি জমিতে। গাইবান্ধা পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক জনি বলেন, ইটভাটার কারণে এমনিতেই কৃষি জমি কমে যাচ্ছে। জনবসতিপূর্ণ এলাকায় অনেক ইটভাটা গড়ে উঠেছে। ফলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
গাইবান্ধা জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল কাদির বলেন, যাদের বৈধ লাইসেন্স আছে তাদেরকে সমিতির অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে। অবৈধ ভাটা মালিকদের লাইসেন্স করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক আবদুল মতিন বলেন, অবৈধ ইটভাটা গুলোতে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। ভাটার আগুন নিভিয়ে জরিমানা আদায়সহ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে এসব ইটভাটা। এই মোবাইল কোর্ট অব্যাহত রয়েছে।
খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে গাইবান্ধায় বিএনপির বিক্ষোভ
গাইবান্ধা :: বিএনপি চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গাইবান্ধা জেলা বিএনপির উদ্যোগে আজ শনিবার দলীয় কার্যালয় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এসময় বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্বলিত লিফলেট জনগণের মধ্যে বিতরণ করা হয়। পরে মিছিলটি দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসে এক সমাবেশে মিলিত হয়।
জেলা বিএনপির সহ-ভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নানের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক আনিছুর রহমান নাদিমের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সদর থানা বিএনপির আহবায়ক খন্দকার ওমর ফারুক সেলু, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মো. ইলিয়াস হোসেন, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক তারেকুজ্জামান তারেক প্রমুখ। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি কাজী আমিরুল ইসলাম ফকু, জেলা যুবদলের সভাপতি রাগিব হাসান চৌধুরী, শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. হানিফ বেলাল, জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক আব্দুল হাই, জেলা তাতীদলের সদস্য সচিব সাজ্জাদ হোসেন পল্টন, জেলা কৃষক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল হোসেন, মহিলা দল নেত্রী তমা বেগম, লাইলী বেগম, ছাত্রদল নেতা শহীদুজ্জামান শাহীন, মিরাজুল ইসলাম, রবিন মিয়া, ইমতিয়াজ আহমেদ রনি, শ্রমিক নেতা জাহিদ হাসান বিপ¬ব প্রমুখ। বক্তারা বিএনপি চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।