বুধবার ● ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » অপরাধ » রোহিঙ্গা ক্যাম্পের উঠতি বয়সীদের অপরাধে জড়াতে বাধ্য করছে আল-ইয়াকিন
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের উঠতি বয়সীদের অপরাধে জড়াতে বাধ্য করছে আল-ইয়াকিন
পলাশ বড়ুয়া, উখিয়া প্রতিনিধি :: কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং ক্যাম্প-৪ এর হেড মাঝি মোহাম্মদ হোছনের মাধ্যমে উঠতি বয়সী সাধারণ রোহিঙ্গাদের তালিকা নিয়ে জোর পূর্বক অপরাধ কর্মকান্ডে বাধ্য করছে আল-ইয়াকিন সদস্যরা। কেউ অবাধ্য হলে টর্চার করা হচ্ছে এমনকি খুন পর্যন্ত করা হয়। যার ফলে দিন দিন স্বজন হারাচ্ছে সাধারণ রোহিঙ্গারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রোহিঙ্গারা জানিয়েছে এসব তথ্য।
সূত্রে জানা গেছে, মংডু ওয়ালিদং এলাকার বাসিন্দা বর্তমানে ক্যাম্প-৪ এ অবস্থানরত সক্রিয় আল-ইয়াকিন সদস্য মীর আহমদের ছেলে মো: রফিক আলম (৪০), মীর আহমদের ছেলে জয়নাল উদ্দিন (২৬) এবং শফিক আলম (৪০) ক্যাম্প কেন্দ্রিক হত্যাকান্ড, সন্ত্রাসী কার্যকলাপসহ সব ধরণের অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এরা হচ্ছে ইতোপূর্বে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে অস্ত্রসহ আটক কমান্ডার আবুল কালামের বাহিনীর সদস্য। এছাড়াও ক্যাম্প গুলোতে এধরণের অসংখ্য বাহিনী রয়েছে যাদের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সংশ্লিষ্টতা আছে হেড মাঝিদের। এমন তথ্যও তিনি নিশ্চিত করেছে সূত্র।
সুত্র আরও জানায়, এসব আল-ইয়াকিন সদস্যদের অপরাধ কর্মকান্ডে সামিল না হলে মেরে ফেলা হয় সাধারণ রোহিঙ্গাদের। ক্যাম্প-৬ এর ‘নৌকা ফিল্ড’ নামক একটি স্থানে নিয়ে গিয়ে টর্চার করা হয়। এধরণের গত কিছুদিন পূর্বেও ক্যাম্প-১৭ থেকে মোহাম্মদ আলম (৪০) নামে একজনকে হত্যা করা হয়। যা কোন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়নি।
আল-ইয়াকিন সদস্যদের অত্যচার থেকে জীবনে বেঁচে থাকতে ক্যাম্প থেকে সাগরপথে মালেয়শিয়া ও ভারতে পালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা সদস্যরা। সম্প্রতি তাদের দলে যোগ না দেওয়ায় হত্যার হুমকি দিলে স্ত্রী ও সন্তানদের ক্যাম্পে রেখে ক্যাম্প-৪ থেকে ভারতে পালিয়ে গেছে কাছিম আলীর ছেলে হাছন আলী (২৬) ও আজিজুর রহমানের ছেলে জমির হোছন (২০)।
একই ভাবে আল-ইয়াকিন সদস্যদের সাথে যেতে অনিচ্ছুক মনিরুজ্জামানের ছেলে নুর ইসলাম, আলী মিয়ার ছেলে আলী আহমদ, আবুল হোছন, ছৈয়দ আলমসহ আরো বেশ কিছু রোহিঙ্গা সাগর পথে মালেয়শিয়া যেতে ব্যর্থ হওয়ায় বর্তমানে ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আছে।
এদিকে আল-ইয়াকিন সদস্যরা দেশ উদ্ধারের কথা বলে রাতের আঁধারে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে উঠতি বয়সীদের নিয়ে গেলেও মগবাগীদের সাথে যুক্ত হয়ে রাখাইন থেকে ইয়াবা নিয়ে আসে প্রতিনিয়ত। ওই সময় কখনো কখনো মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীর সাথে মুখোমুখি হলে উঠতি বয়সীদের সামনে ঠেলে দিয়ে আল-ইয়াকিন সদস্যরা মগবাদীদের সহযোগিতায় পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়। ক্যাম্পের পরিবেশ শান্ত রাখতে এধরনের চিহ্নিত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবী জানিয়েছে ভুক্তভোগী রোহিঙ্গারা। যাদের অধিকাংশই প্রাণভয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চায় না।
এ বিষয়ে জানতে ক্যাম্প-৪ এর মাঝি মোহাম্মদ হোছনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: ইকবাল হোসেন বলেছেন, ক্যাম্প কেন্দ্রিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োজিত রয়েছে। এ ধরণের তথ্য এখনো পর্যন্ত পাননি। তবে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হবে বলে তিনি জানান।