রবিবার ● ৮ মার্চ ২০২০
প্রথম পাতা » কুষ্টিয়া » যে কারণে মাদক মুক্ত হয় না লালনের অনুষ্ঠান
যে কারণে মাদক মুক্ত হয় না লালনের অনুষ্ঠান
শামসুল আলম স্বপন :: মরমী সাধক লালন শাহ গাঁজা কিংবা মাদক দ্রব্য সেবন করতেন এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। বরং তিনি গাঁজা সেবনের বিরুদ্ধে কঠোর ছিলেন তার গানের একটি কলিতে উল্লেখ রয়েছে । তিনি বলেছিলেন, “ গাজায় দম চড়িয়ে মনা বোম কালি আর বলিস নারে ।” যা লালন একাডেমি কর্তৃপক্ষ খোদায় করে লালন মাজারের প্রবেশ পথে স্থাপন করেছিলেন । অথচ বর্তমানে লালন শাহের এমন কোন শিষ্য-ভক্ত খুঁজে পাওয়া যাবে না যারা গাঁজা কিংবা মাদকে আসক্ত নন।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারে এবার অনুষ্ঠান গাঁজা ও মাদক মুক্ত রাখতে বদ্ধ পরিকর। নাশকতা এড়াতে ও মাদকমুক্ত করতে প্রশাসনের ব্যাপক কড়াকড়ি রয়েছে এবার।
এলাকাবাসী বলছে নজরদারি সত্ত্বেও লালন শাহের স্মরণোৎসব উপলক্ষে ছেঊড়িয়ার লালনের মাজার সংলগ্ন মাঠে গোপনে বসেছে গাজা বিক্রি ও সেবনের আখড়া। যেখানে সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স সেখানে লালনের মাজারের মত পবিত্র স্থানে গাঁজা ও অন্যান্য মাদকের ভয়াবহ ব্যবসা ও সেবন হয় কি ভাবে তা জনগণের প্রশ্ন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে মাজার প্রাঙ্গণে মাদকের প্রতুলতা থাকায় তরূণ, যুবক ও সব বয়সের মাদক সেবীরা এখানে মাদক সেবন ও ব্যবসা করছে অবাধে । তাই গাঁজার ধুয়ায় ধুসরিত ও অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে লালনের মাঠ।
লালন একাডেমির একজন সদস্য নাম না প্রকাশ করার শর্ত-এ জানান যারা ষ্টেজের সামনে রাত দিন ২৪ ঘন্টা লালন ভক্ত সেজে বসে থাকে মুলত এরাই গাঁজা ব্যবসায়ী । এরা স্থানীয় কেউ নন। বেশীর ভাগ এরা ঢাকা থেকে আসে । অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার ১/২ দিন আগে এসে জায়গা দখল করে পাটি পেড়ে বসে পড়ে । এদের সাথে লালন একাডেমির কতিপয় অসাধু সদস্য, স্থানীয় কিছু শিল্পী ও কর্মকর্তা -কর্মচারির যোগসাজস আছে। তাদের সহযোগিতায় গাঁজার পুরিয়া বানিয়ে বিক্রি করে । প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকার গাঁজা ও মাদকদ্রব্য বেচা -কেনা হয় এখানে। গাঁজা ও মাদক বিক্রির টাকা পর্যায় ক্রমে অনেকেই ভাগ পায় । অসাধু পুলিশ ও সাংবাদিক লেবাসধারী কিছু ব্যক্তিও ওই টাকার অংশ পায় বলেই মাদক মুক্ত হয় না লালনের অনুষ্ঠান।
শুরু হয়েছে লালন স্মরণোৎসব
কুষ্টিয়া :: “মিলন হবে কত দিনে আমার মনের মানুষের সনে। চাতক প্রায় অহর্নিশি, চেয়ে আছে কালশশী,হব বলে চরণ দাসী ও তা হয় না কপাল গুণে ।” কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের বিখ্যাত গানের মাধ্যমে শুরু হয়েছে স্মরণোৎসব ২০২০। চলবে আগামী ১০ই মার্চ মঙ্গলবার পর্যন্ত । প্রতি বছরের মত এবারো তিন দিনের এ লালন স্মরণোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। করোনা ভাইরাসের কারণে এবার জেলা প্রশাসন বিদেশী দর্শকদের অনুষ্ঠানে আসা নিষিদ্ধ করেছে । যে কারণে অনুষ্ঠানের বাড়তি আর্কষণের ঘাড়তি পড়েছে ।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির সভাপতি মো: আসলাম হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাংস্কৃতিক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি,বিশেষ অতিথি ছিলেন কুষ্টিয়া -৪ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিষ্টার সেলিম আরতাফ জর্জ, কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী রবিউল ইসলাম। কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব সদর উদ্দিন খান, এ্যাড. অনুপ কুমার নন্দী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আজাদ জাহান প্রমুখ ।
প্রধান অতিথি সাংস্কৃতিক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি বলেন, বাউল স¤্রাট লালন সাঁই ছিলেন অসাম্প্রদায়িক । জাতি ধর্ম নির্বিশেষে তিনি ছিলেন মানবতার কবি । তাঁর অনুশ্রিত নীতি অনুস্মরণ করলে সমাজে মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ থাকবে না । থাকবে না হিংসা দেষ । তিনি লালন একাডেমির উন্নয়নে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
আলোচনা শেষে রাত ভর লালন একাডেমি ও লালন শিল্পীদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত হয় সঙ্গীত অনুষ্ঠান ।
লালন মাজারে এবার অনুসারীদের উপছে পড়া ভীড় । আখড়াবাড়ীর বাইরে কালি নদীর তীরে বাউল মেলাতের লোকের সমাগম চোখে পড়ার মত ।