রবিবার ● ২২ মার্চ ২০২০
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » নবীগঞ্জের হাঁস খামারী দুলালকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ
নবীগঞ্জের হাঁস খামারী দুলালকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ
উত্তম কুমার পাল হিমেল,নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি :: নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের আলমপুর গ্রামের ৩ সন্তানের জনক ও হাঁস খামারী দুলাল মিয়া (৩০) নামের ব্যক্তিকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দুলালের পরিবার। নিহত দুলাল ওই গ্রামের মৃত আনফর মিয়া (গেদা) মিয়ার পুত্র। রবিবার বিকেলে সরেজমিনে নিহত দুলাল মিয়ার বাড়িতে গেলে তার পরিবারের লোকজন জানান- উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের বকশিপুর গ্রামের আছমত মিয়ার পুত্র ও মাদক ব্যবসায়ী লালন মিয়া (৩৫) ও তার সহযোগীরা গত শুক্রবার বাদ জুম্মা আলমপুর গ্রামে দুলাল মিয়ার হাঁস খামারে এসে তাকে হাঁসের বাচ্চা স্বল্প মূল্যে ক্রয়ের প্রলোভন দেখিয়ে নগদ ৬০ হাজার টাকাসহ দুলালকে একটি সিএনজি যোগে গ্রামের বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। এরপর তার পরিবারের লোকজন বিভিন্ন জায়গায় ফোন দিয়ে খোঁজাখুঁজি করলেও দুলালের আর সন্ধান পাওয়া যায়নি। ওইদিন দিবাগত রাত অনুমান ১০টায় দুলালের পরিবারের কাছে অজ্ঞাত একটি মোবাইল নাম্বার থেকে কল আসে দুলাল মিয়া সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন। তাৎক্ষণিক দুলালের পরিবারের লোকজন খবর পেয়ে ঘটনাস্থল মৌলভীবাজার সদর মডেল থানাধীন লামুয়া বাজারের নিকটে চলে যান। সেখানে গিয়ে দুলালকে না পেয়ে দুলালের বড় ভাই আলাল মিয়া, সিতার মিয়া সহ তার আত্মীয় স্বজন মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে গিয়ে পৌঁছালে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুমূর্ষ অবস্থায় দেখতে পান। এসময় দুলালের অবস্থার অবনতি ঘটলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন, তবে পথিমধ্যেই রাজনগর থানার পাশে যাওয়ার আগেই দুলাল চলে যায় না ফেরার দেশে। পরে মৌলভীবাজার মডেল থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্ত শেষে পরদিন গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টয় তাকে দাফন করা হয়। এদিকে দুলাল নিহতের ঘটনায় দুলালের বড় ভাই আলাল মিয়া, তার মাতা সুন্দরী বিবি ও দুলালের স্ত্রী ফাতেহা বেগম অভিযোগ করে বলেন- দুলাল মিয়াকে ঘটনার দিন বাদ জুম্মা ২টার দিকে তাদের পাশ্ববর্তী বকশিপুর গ্রামের মাদক ব্যবসায়ী লালন মিয়া, দুধু মিয়া ও তার সহযোগীরা তাকে হাঁসের বাচ্চা পাইকারী দরে কেনার প্রলোভন দেখিয়ে নগদ ৬০ হাজার টাকা মোবাইল সহ রূপার চেইনসহ লুটে নিয়ে তাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে। লালনের সাথে ওই গাড়ীতে থাকা সিএনজি চালক কাটারাই গ্রামের তুরন দাসের পুত্র রিংকু দাশ নামের যুবক জানায়, ওইদিন দুলাল মিয়া ও লালন মিয়ার সাথে সেও ছিল। লালন মিয়া দুলালকে রোকন পুর চা-বাগানে নিয়ে মদ্যপান করিয়ে অজ্ঞান করার চেষ্টা করিলে সে ওই সিএনজি থেকে পানিউমদার নিকট সে রাস্তায় নেমে য়ায়। এর পর এলাকায় গিয়ে লোকমুখে শুনে যে সিএনজি দিয়ে লালনসহ হাঁসখামারী দুলাল গোরারাই, কাটারাই বাজরের ওপর দিয়ে সিএনজি যোগে যাচ্ছিলেন এই সিএনজির পেছন থেকে কে যেনো বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করেছিলো। ওই চিৎকার গোরারাই গ্রামের বেলালসহ কাটারাই গ্রামের রিপু, বাচ্চু এবং আরো অনেকেই শুনেছেন। এর কিছুক্ষণ পরেই সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ পান এলাকাবাসী। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় দুলালকে উদ্ধার করে স্থাণীয়রা মৌলভী বাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। এর আগেই লালনসহ তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। লালনসহ অন্যরা এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছে। এ ব্যাপারে আউশকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিবুর রহমান হারুন বলেন, এই ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। হাঁসখামারী দুলাল মিয়া নিহতের সংবাদ পেয়ে আমি সহ আরো অনেকেই নিহতের বাড়িতে যাই। আমাদের কাছে এটি রহস্যজনক মৃত্যু বলে মনে হচ্ছে। প্রশাসন সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জোর দাবী জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে মৌলভীবাজারসদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আলমগীর হোসেন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দুলাল মিয়ার লাশ আমরা উদ্ধার করে (ময়নাতদন্ত) শেষে তার পরিবারের নিকট লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো থানায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। অভিযোগ দায়ের করলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।