সোমবার ● ২৩ মার্চ ২০২০
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » অস্ট্রেলিয়া থেকে শাহজালাল এয়ারপোর্ট এসে স্ত্রীর পাসপোর্টসহ স্বামীর পলায়ন
অস্ট্রেলিয়া থেকে শাহজালাল এয়ারপোর্ট এসে স্ত্রীর পাসপোর্টসহ স্বামীর পলায়ন
উত্তম কুমার পাল হিমেল,নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি :: নবীগঞ্জের ছেলে অস্ট্রেলিয়া থেকে বউ নিয়ে দেশে আসলেও ঢাকা শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দরে স্ত্রীকে রেখে তার পাসপোর্টসহ স্বামীর পলায়নের ঘটনাটি নবীগঞ্জ শহরে তোড়পাড় চলছে। এদিকে স্ত্রী অনুস্মিতা দেব অনু করোনা ভাইরাস পরীক্ষা শেষে গত ১৯ মার্চ বৃহস্পতিবার স্বামী ধলঞ্জয় চন্দ্র দেব এর বাড়ি নবীগঞ্জ শহরের গয়াহরি গ্রামে আসলে শশুড় বাড়ির লোকজন তাকে ঘরে না তোলে গেইট তালাবদ্ধ রেখে তাকে আটকে রাখে। এ সময় গৃহবধু ঘরে ঢুকার চেষ্টাকালে শশুরবাড়ির লোকজন তাকে ও তার মা’কে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে আহত গৃহবধু অনুস্মিতা দেব অনুর মা সঞ্চিতা ধর বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(গ)/৩০ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। উক্ত মামলায় পুলিশ রবিবার দিবাগত গভীর রাতে অনুস্মিতা দেব এর দেবর দিপংকর দেব (২৭)কে গ্রেফতার করেছেন। আজ সোমবার ধৃত দিপংকর দেবকে জেল হাজতে প্রেরণ করেছেন। এ ঘটনায় নবীগঞ্জ শহরে তোলপাড় চলছে।
সুত্রে জানাযায়, নবীগঞ্জ পৌরসভার গয়াহরি গ্রামের ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেব এর অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ছেলে ধনঞ্জয় চন্দ্র দেব এর সাথে বিগত ২০১৮ইং সালের ১৪ নভেম্বর বিয়ে হয় উপজেলার বদরদী গ্রামের বাসিন্দা হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ রথীন্দ্র চন্দ্র দেব এর উচ্চ শিক্ষিত কন্যা অনুস্মিতা দেব অনু’র। বিয়ের পর ধনঞ্জয় দেব ও তার পরিবার অস্ট্রেলিয়া যেতে হলে যৌতুক হিসেবে ১০ লাখ টাকা দাবী করেন স্ত্রী অনু’র কাছে। তার আংশিক দাবী মানার পর বিগত ২০১৯ইং সালের ৫ ফেব্রুয়ারি নববধুকে নিয়ে অষ্ট্রেলিয়া পাঁড়ি দেয় ধলঞ্জয় দেব। বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী ঊভয়ই সুখী জীপন যাপন করছিলেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পরই আসল চেহারা ধরা পড়ে ধনঞ্জয় দেব এর। প্রায় প্রতিনিয়ত নানা অজুহাতে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন শুরু করে তার স্ত্রীকে। অস্ট্রেলিয়ায় ব্যবসা করার কথা বলে পিতার কাছ থেকে আরও ১০ লাখ টাকা যৌতুক হিসেবে আনার চাপ দেয় অনুস্মিতাকে। স্বামী কথায় রাজি না হওয়ায় অনুস্মিতা দেব অনু’র উপর নেমে আসে নির্যাতন। ঘটনাটি অস্ট্রেলিয়া প্রশাসনকে জানালে সুচতুর ধনঞ্জয় দেব গত ১৭ মার্চ স্ত্রী অনুস্মিতা দেবকে সাথে নিয়ে স্বদেশে ফিরে আসেন। ওই দিন রাত ১০.৩০ ঘটিকায় ঢাকা শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দর পৌঁছার পর স্ত্রীকে ধোকা দিয়ে স্বামী ধলঞ্জয় দেব অনুস্মিতার পাসপোর্ট, নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, লাগেজসহ অন্যান্য মালামাল নিয়ে স্ত্রীকে এয়ারপোর্ট রেখেই পলায়ন করে। এ ঘটনায় হতভম্ভ স্ত্রী অনুস্মিতা দেব। দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি। স্বামী ধনঞ্জয় দেব এর মোবাইল ফোনের সুইচ অফ থাকায় বাধ্য হয়ে ফোন দেন অনু’র পিতা-মাতাকে। এক পর্যায়ে বিমান বন্দরে স্থাপিত কোয়ারেন্টিনে করোনা ভাইরাস পরীক্ষা শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে ভাই ও মা’কে সাথে নিয়ে শশুড়বাড়ি গয়াহরি গ্রামে আসেন স্ত্রী অনুস্মিতা দেব অনু। কিন্তু শশুড় বাড়ির লোকজন পুত্রবধুকে ঘরে না তোলে গেইটে তালাবদ্ধ করে রাখে। বারবার আকুতি জানানোর পরও শশুড় বাড়ির লোকরেদর মন গলেনি। বাধ্য হয়ে অনু ঘরে ঢুকার চেষ্টা করলে শশুড় বাড়ির লোকজন তাদেরকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে বলে অভিযোগ উঠে। খবর পেয়ে পুলিশ, এলাকাবাসী, পৌর মেয়রসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। তবে পুত্রবধুকে ঘরে না তোলে শেষ পর্যন্ত পিত্রালয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এ ঘটনাটি এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ ঘটনায় স্ত্রী অনুস্মিতা দেব অনু’র মা বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় মামলা করলে পুলিশ ধনঞ্জয় দেব এর বাড়ি শহরতলীর গয়াহরি গ্রামে অভিযান চালিয়ে তার ভাই দিপংকর দেবকে গ্রেফতার করে। মামলার অপর আসামীরা বাড়িঘর ছেড়ে পলাতক রয়েছে বলে জানাগেছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) উত্তম কুমার দাশ জানান, আসামীদের গ্রেফতারে জোর তৎপরতা অব্যাহত আছে। এ ব্যাপারে ধনঞ্জয় দেব এর বড় ভাই দীপক দেব জানান, আমাদের বাড়িতে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগটি মিথ্যা ও সাজানো। এদিকে ধনঞ্জয় পলাতক থাকায় সে করোনা ভাইরাস বহন করছে কি না এ নিয়েও জনমনে রয়েছে নানান আলোচনা। এছাড়া ধনঞ্জয়ের পিতা ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেবকে নিয়েও শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা।
নবীগঞ্জে বিদেশ ফেরত ৫২৭ জন, হোম কোয়ারেন্টাইনে আছে ১৭১ জন, দেশে আসা ৩৫৬ জন প্রবাসী নিরুদ্দেশ
নবীগঞ্জ :: হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ গত ১ মার্চ থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত বিদেশ থেকে এসেছেন ৫২৭ জন। তাদের মধ্যে মাত্র ১৭১ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। বাকী ৩৫৬ জন কী অবস্থায় আছেন তা জানা নেই প্রশাসনের। তবে তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে উপজেলার ১৩ ইউনিয়নে বিদেশ ফেরতদের সন্ধান করা হচ্ছে। এছাড়া উপজেলার সব ইউপি সদস্যকে প্রধান করে একটি করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। যারা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের লক্ষ্যে উপজেলা কমিটির কাছে প্রবাসী অবস্থান সহ বিভিন্ন তথ্য প্রদান করবে।
নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি বিশ্বজিত কুমার পাল এব্যাপারে বলেন, গত এক মাসে ৫২৭ জন মানুষ বিদেশ থেকে নবীগঞ্জে আসলেও হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন মাত্র ১৭১ জন। আমাদের কাছে ৫২৭ জন ব্যক্তির একটি তালিকা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু আমার গত ৭ই মার্চ থেকে যারা দেশে এসেছে তাদেরকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার ব্যাপারে জোর দিচ্ছি।যাদের পাসপোর্টে নবীগঞ্জের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে। তবে তারা সবাই নবীগঞ্জের ঠিকানা অবস্থান করছেন কিনা তা আমাদের জানা নেই। তালিকাটি সব ইউনিয়নে পাঠানো হয়েছে। নবীগঞ্জে অবস্থান করলে সব বিদেশ ফেরত ব্যক্তিকে পর্যাবেক্ষণে আনতে উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে। আবার অনেকেই যারা হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন বলে বলা হচ্ছে তারাও সঠিকভাবে নিয়ম মানছেন না। সংগত কারণে নবীগঞ্জে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এই কাজের জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে ইউপি সদস্য দিয়ে একটি করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি ওয়ার্ডের বিদেশ ফেরত ব্যক্তির হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করবে। কোনো ব্যক্তি কমিটির নির্দেশনা না মানলে উপজেলা প্রশাসন তার বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করবেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুস সামাদ বলেন, নবীগঞ্জ উপজেলা ৫০ শয্যা হাসপাতালে ০৫টি বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া আলাদা আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। হাসাপাতালে রোগীর সঙ্গে আসা স্বজনদের হাসপাতালে প্রবেশের ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। করোনা সচেতনতার ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আজিজুর রহমান জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী লুকিয়ে থাকা প্রবাসীদের সন্ধান করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, চলমান করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে বিদেশ ফেরত সব নাগরিককে ১৪দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে । অনেকে দেশে না এসে সিলেট সহ বিভিন্ন জায়গায় তথ্য গোপন করে পরিবারের সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস করছেন যে প্রবাসীদের খবর পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে গতকাল রবিবার নিয়ম না মেনে বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করায় নবীগঞ্জ উপজেলার কাজির বাজারের ময়মনা কমিউনিটি সেন্টারকে ২০ হাজার টাকা ও উপজেলার গজনাইপুর গ্রামের ইংল্যান্ড প্রবাসীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।