বুধবার ● ৮ এপ্রিল ২০২০
প্রথম পাতা » নওগাঁ » নওগাঁয় নিজ ইচ্ছায় গ্রামবাসীর লকডাউন ঘোষণা
নওগাঁয় নিজ ইচ্ছায় গ্রামবাসীর লকডাউন ঘোষণা
সুদাম চন্দ্র, নওগাঁ :: নওগাঁ সদর উপজেলার শৈলগাছি ইউনিয়নের রামরায়পুর গ্রামের সরদারপাড়া (চেয়ারম্যান পাড়া) মহল্লাবাসিরা নিজ উদ্যোগে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মহল্লায় প্রবেশের পথে বাঁশের বেড়া দিয়ে লকডাউন করে রেখেছে। এছাড়া এলাকাবাসীর জন্য প্রবেশের মুখে হাত পরিষ্কার করা সাবান এবং পানি ভর্তি ড্রাম রেখেছেন এলাকার সরদারপাড়া যুবক সমিতির সদস্যরা। এভাবে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে সবাই নিজ নিজ এলাকায় দৃষ্টান্ত তৈরি করতে পারেন বলে মনে করেন সরদারপাড়া যুবক সমিতির সদস্যরা। তারা জানান, এই মহল্লায় প্রায় ৫০টি পরিবারের ২০০-২২০ জন মানুষের বসবাস। সবাইকে করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতন করা এবং এর থেকে প্রতিকার পাবার উপায় সম্পর্কে সব সময় সচেতন করার কাজ করে যাচ্ছে এই যুবক সমিতি।
বাঁশের বেড়া দিয়ে লকডাউন করার প্রসঙ্গে তারা বলেন, নিজ নিজ দূরত্ব বজায় রেখে এলাকাবাসী প্রয়োজন ছাড়া মহল্লা থেকে বের হচ্ছেন না। মরনঘাতি এই করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় মহল্লার প্রবেশপথে সাবান এবং পানি দেয়া আছে। তারা যাওয়া আসার সময় এটি ব্যবহার করে থাকেন। তারা বলেন- বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের গ্রামের মহল্লা সুরক্ষার্থে এসব ব্যবস্থা সরদার পাড়া যুবক সমিতির পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে।
এদিকে বিষয়টি সম্পর্কে নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে নিজ নিজ এলাকা সুরক্ষিত রাখার জন্য এ ধরনের উদ্যোগ সবার জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। প্রতিটি এলাকায় যদি এলাকাবাসী এ ধরনের উদ্যোগ নিয়ে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় এগিয়ে আসেন তবে এ মরণঘাতি ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মানুষ রক্ষা পাবে।
ইউএনও বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এই মরণঘাতি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে চেয়ারম্যানপাড়া গ্রাম থেকে শিক্ষা নিয়ে উপজেলার সব এলাকার মানুষ এ ধরনের কাজে এগিয়ে আসবেন বলে আশা করি। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সবাইকে নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করার আহ্বান জানান এই কর্মকর্তা।
নওগাঁয় ইসরাফিল আলম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে খাদ্য সহায়তা
নওগাঁ :: সারা দেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে সবকিছু। তারই ধারাবাহিকতায় নওগাঁর রাণীনগরেও সবকিছু বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। উপজেলার কর্মহীন হয়ে পড়া দিনমজুর, রিকশাচালক, অসহায়, ভবঘুরে, দুস্থদের মাঝে ইসরাফিল আলম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে চালু করা হয়েছে ‘মানবিক খাদ্য সহায়তা কেন্দ্র।
নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ইসরাফিল আলম তার নিজ উদ্যোগে সরকারের পাশাপাশি তার নির্বাচিত এলাকা জেলার রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলার কর্মহীন হয়ে পড়া হাজার হাজার মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে রাণীনগর উপজেলার রাণীনগর হাউজে চালু করেছেন এই ‘মানবিক খাদ্য সহায়তা কেন্দ্র’। এই কেন্দ্র থেকে প্রতিদিনই কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষদের খুঁজে বের করে কিংবা মোবাইলে ফোন পেয়ে অথবা ফেইসবুকের মাধ্যমে সন্ধান পাওয়া মানুষদের ঘরে ঘরে গিয়ে প্রয়োজনীয় খাবার সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
তারই ধারাবাহিকতায় রাণীনগর উপজেলা সদরের মাদারকেয়ার স্কুল এন্ড কলেজের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মরিয়ম স্বহস্তে সাংসদ ইসরাফিল আলমের কাছে চিঠি লিখে খাবার সামগ্রী সংগ্রহ করেছে। মরিয়মের লেখা চিঠি থেকে জানা যায়, যে তার বাবা ও মা ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করেন। সে তার দাদার সঙ্গে পশ্চিম বালুভরা গ্রামে থাকে। তার দাদা শামছুর শাহ উপজেলার বিভিন্ন সাপ্তাহিক হাট ও বাজারে ফেরি করে তেল বিক্রি করেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে তার দাদা কোনো হাট কিংবা বাজারে যেতে পারছেন না যার কারণে তাদের ঘরে কোনো খাবারের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। তার দাদার বাড়িতে পাঁচজন সদস্য। মরিয়ম তার আশেপাশের মানুষদের কাছে জেনেছে যে সাংসদ ইসরাফিল আলমের রাণীনগর হাউজ থেকে কর্মহীন মানুষদের মাঝে প্রয়োজনীয় খাবার সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। তাই বাড়িতে খাবার না থাকায় সে নিজের হাতে একটি চিরকুট লিখে মঙ্গলবার বিকেলে নিজে রাণীনগর হাউজে গিয়ে সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলমের হাতে তুলে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে সাংসদ ইসরাফিল আলম তার চালু করা “মানবিক খাদ্য সহায়তা কেন্দ্র” থেকে পাঁচ কেজি চাল, দেড় কেজি আলু, এক কেজি ডাল, এক লিটার তেল, লবণ, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, সাবানসহ অন্যান্য সামগ্রীর দুই প্যাকেট খাবার প্রদান করেন।
এ ছাড়াও সাংসদ মরিয়মের পরিবারের পাশে সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়ানোর জন্য উপজেলা প্রশাসনকে লিখিতভাবে নির্দেশনা প্রদান করেন।
সাংসদ ইসরাফিল আলম বলেন, সারা বিশ্ব বর্তমানেকরোনা ভাইরাসের মরণ থাবায় আবদ্ধ। দেশজুড়ে এই সংকটময় সময়ে আমি আমার নির্বাচিত এলাকার অসহায় ও কর্মহীন মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এলাকায় চলে এসেছি। সব সময় এলাকার মানুষদের সার্বিক খোঁজ খবর রাখার চেষ্টা করছি। রাত-দিন বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে গিয়ে কর্মহীন মানুষদের খোঁজ-খবর নিচ্ছি।
এরপর আমি নিজে ও ভ্রাম্যমাণ গাড়ির মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবীরা প্রয়োজনীয় খাবার সামগ্রী সেইসব মানুষদের ঘরে পৌঁছে দিচ্ছি। যতদিন এই সংকট থাকবে ততদিন এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। শুধুমাত্র আপনারা ঘরের বাহিরে বের হবেন না এবং অবশ্যই করনীয় নিয়মগুলো মেনে চলবেন। সরকারকে আরো কঠোর হতে বাধ্য করবেন না।