রবিবার ● ১২ এপ্রিল ২০২০
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » অবশেষে টুম্পার লকডাউনেই জয়
অবশেষে টুম্পার লকডাউনেই জয়
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ :: লকডাউন,হোম কোয়ারেন্টাইন আর নিষেধাজ্ঞা কোনটাই দমিয়ে রাখতে পারেনি কিশোরী টুম্পা (১৪) খাতুনের।দেশব্যাপী যখন করোনা ভাইরাসে আতংকিত মানুষ, ঠিক তখন সে বিয়ের দাবীতে অনশন শুরু করে প্রেমিক ইজিবাইক চালক জাহিদের (১৭) বাড়িতে। তিনদিন অনশন চলার পর বিজয়ী হয় টুম্পা। অবশেষে গোপনে তাদের বিয়ে হয় ঝিনাইদহ শহরে। বয়স না হওয়ায় টুম্পা ও জাহিদ বিয়ের পর আপাতত আত্মগোপনে আছে। গ্রামবাসি জানায়, জাহিদ ঝিনাইদহ শহরে ইজিবাইক চালাতো। সেই সুত্র ধরে তার সাথে ঝিনাইদহ পৌরসভার খাজুরা গ্রামের শহিদ মিয়ার মেয়ে টুম্পার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। টুম্পা ঝিনাইদহ মুক্তিযোদ্ধা মশিউর রহমান বালিকা বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী। জাহিদের সাথে সম্পর্ক গড়ে ওঠার পর ধীরে ধীরে তা গভীর হতে থাকে। জাহিদ বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে টুম্পার সাথে একাধিকবার শারীর সম্পর্কে লিপ্ত হয়। কিছু দিন পর জাহিদ টুম্পার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। বেগতিক দেখে টুম্পা পিছু নেয় জাহিদের। উপায় না পেয়ে করোনা আতংকের মধ্যেই বিয়ের দাবীতে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামে জাহিদের বাড়িতে ওঠে। জাহিদ কাশিপুর গ্রামের শাহাজান মালিতার ছেলে। তিন দিন ধরে অপ্রাপ্ত বয়স্ক এক কিশোরীর অনশন চাউর হয়ে পড়লে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। জাহিদের পিতা শাহাজান মালিতা শনিবার দুপুরে জানান, মেয়েটি আমাদের বাড়িতে আসার পর বুঝিয়ে শুজিয়ে খাজুরা গ্রামে তার বাপ মার হাতে তুলে দিয়ে আসি। কিন্তু সে আবার আমাদের বাড়িতে ফিরে আসে। ছেলে মেয়ে দুজনাই অপ্রাপ্ত বয়স্ক বলে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। অবশেষে একেবারে বাধ্য হয়েই শুক্রবার রাতে তাদের বিয়ে দিয়েছি। হলিধানী ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বিয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, টুম্পার সাথে জাহিদের ঝিনাইদহে বিয়ে হয়েছে শুনেছি। তারা এলাকায় নেই। এ বিষয়ে কাতলামারি পুলিশক্যাম্প ইনচার্জ আনিচুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। যেহেতু ছেলে মেয়ে দুজনেই অপ্রাপ্তবয়স্ক সেহেতু এটা পারিবারিক ভাবে সুরাহা করার কথা বলেছি।
ঝিনাইদহে কর্মহীন হয়ে পড়া নিন্মে আয়ের মানুষের মাঝে জেলা পুলিশের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহে করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া খেটে খাওয়া নিন্ম আয়ের মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। শনিবার সকালে সদর উপজেলার ডাকবাংলা আব্দুর রউফ ডিগ্রী কলেজ মাঠে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এ খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে গোল বৃত্ত একে আগতদের কাছে খাবার পৌঁছে দেন পুলিশ সুপার মো: হাসানুজ্জামান। ৫ কেজি চাল, ১ কেজি আলু, তেল, ডাল ও সাবান পেয়ে খুশি হতদরিদ্র ৬০টি পরিবার। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) তারেক আল মেহিদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবুল বাশার, সদর থানার ওসি মিজানুর রহমান, ডাকবাংলা ক্যাম্পের ইনচার্জ মকলেসুর রহমানসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
“আসসালামু ওয়ালাইকুম বাসায় কেউ আছেন ? এই প্যাকেটটা রাখুন”
ঝিনাইদহে মধ্যবিত্তের ঘরে “বোকা সংঘ” পৌছে দিচ্ছে খাদ্য সামগ্রী
ঝিনাইদহ :: “আসসালামু ওয়ালাইকুম বাসায় কেউ আছেন ? এই প্যাকেটটা রাখুন” এভাবেই রাতের আধারে মধ্যবিত্ত পরিবারের বাড়িতে পৌছে দেওয়া হচ্ছে খাবার। এ পর্যন্ত প্রায় ৬’শ ব্যক্তির বাড়িতে অত্যন্ত গোপনে খাবার পৌছে দিয়ে মানবতার এক অনন্য নজীর স্থাপন করেছে ঝিনাইদহের ফেসবুক ভিত্তিক সংগঠন বোকা সংঘ। সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যারা কারো কাছে সাহায্যের হাতপাতে না, নিজেরা না খেয়ে থাকলেও মুখ ফুটে লজ্জায় বলতে পারে না, এমন পরিবারের তথ্য সংগ্রহ করে খাদ্য সামগ্রী পৌছে দিচ্ছে “বোকা সংঘ প্রাইভেট লিমিটেড”। প্রতিদিন সন্ধার পর সংগঠনের সদস্যরা নিজেদের মোটরসাইকেলে চেপে ঝিনাইদহ শহর ও আশেপাশের এলাকায় খাদ্য সামগ্রী পৌছে দিচ্ছে। রাতের বেলা মাথায় হেলমেট, মুখে মাস্ক পরিহিত, হাতে প্লাভস পরে শহরের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যাচ্ছেন বোকা সংঘের সদস্যরা। বোকা সংঘের চ্যান্সেলর সাব্বির আহমদ জুয়েল জানান, বোকা সংঘের সদস্যরা কোন না কোন পেশার সাথে জড়িত। কেউ প্রভাষক, ব্যাবসায়ী, কেউ সফল উদোক্তা, সরকারী, বে-সরকারী চাকরীজিবী, সফল ফ্রিল্যান্সার, শিক্ষক, ডাক্তার, প্রকৌশলী। করোনার এই মহা দুর্যোগে “বোকা সংঘ” মানুষের পাশে দাড়ানোকে নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করছেন। তিনি বলেন,‘সমমনা ফুর্তিবাজ মানুষদের সংগঠন বোকা সংঘ মানুষকে দান সহায়তা করাকে এখন মানবিক বলে মনে করেন। যে কেও তাদের এই তহবিলে সহায়তা করতে পারেন।বোকা সংঘের তহবিলে সাহায্য পাঠাতে চাইলে, সাব্বির আহমদ ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, ঝিনাইদহ শাখা, একাউন্ট নং- ২২৮১৫১০০৩৮৮০৫
ঝিনাইদহে ট্রাক ভর্তি দেড়শ ইট ভাটা শ্রমিককে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার নির্দেশ
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহের বিষয়খালী বাজার এলাকায় টাঙ্গাইল জেলা থেকে সাতক্ষীরা জেলায় যাওয়ার পথে ট্রাক ভর্তি ১৫০ জন শ্রমিককে আটকের পর সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ ও জেলা প্রশাসকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার জন্য বলা হয়েছে। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে ঝিনাইদহের বিষয়খালী একটি তেল পাম্পে ৪ ট্রাকে দেড়শ জন শ্রমিককে আটক করা হয়। তারা সকলে ইট ভাটার শ্রমিক বলে জানা গেছে। তাদের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলায়। ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান জানান, করোনা ঝুঁকি এড়াতে চলাচলের উপর প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে টাঙ্গাইল জেলা থেকে কয়েকটি ট্রাকে বিপুল সংখ্যক মানুষ সাতক্ষীরায় যাচ্ছিল। সংবাদ পেয়ে বিষয়খালী বাজার এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে পুলিশ ট্রাক ভর্তি নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ১৫০ জনের বেশী ভাটা শ্রমিককে আটক করে। পরে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে এসব শ্রমিকদের কোয়ারেন্টিনে রাখা এবং ট্রাক চালকদের আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়। পরে তাদেরকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সাতক্ষীরা জেলার উদ্দেশ্যে। তিনি আরো জানান, ট্রাক চালকরা ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে এসব শ্রমিকদের বহন করছিল। পুলিশ ট্রাকগুলোর চালকদের কাগজ পত্র জব্দ করে।
ঝিনাইদহে সেনাবাহিনী স্বাস্থ্য সেবা দিতে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের ঔষধ হস্তান্তর
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহে করোনায় ঘরে থাকা মানুষকে বিনামুল্যে স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার জন্য সেনাবাহিনীর কাছে ঔষধ হস্তান্তর করা হয়েছে। শনিবার সকালে যশোর ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের লে.এনামুল হাসানের হাতে ঔষধ হস্তান্তর করেন ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল হাই। এসময় ব্যক্তিগত অর্থায়নে ১ লাখ ২৫ হাজার মুল্যের ৫৮ প্রকার ঔষধ প্রদাণ করা হয়। আগামীকাল দিনব্যাপী জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার চাপরাইল গ্রামে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বিনামুল্যে স্বাস্থ্য সেবা প্রদাণ করা হবে। সেখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগিদের এই ঔষধ দেওয়া হবে। ঔষধ হস্তান্তরের সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এম হাকিম, জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম শিমুল, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আওয়াল, যুবলীগ নেতা হেলাল উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
ঝিনাইদহের ভারতীয় সিমান্তের ইছামতি নদীতে ভেসে আসা লাশ বিএসএফ নিয়ে গেছে
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তের ইছামতি নদীতে অজ্ঞাত পরিচয় যুবকের (২৭) ভেসে ওঠা একটি লাশ উদ্ধার করে নিয়ে গেছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষি বিএসএফ। লাশটি মহেশপুরের খোসালপুর ও মাইলবাড়িয়া এলাকার ভারতীয় অংশ পাখিউড়া ইছামতি নদীতে ভাসছিল। শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে পাখিউড়া বিএসএফ ক্যাম্পের জওয়ানরা উদ্ধার করে নিয়ে যায়। তবে লাশটি বাংলাদেশী না ভারতীয় নাগরিকের তা নিশ্চিত করতে পারেনি ঝিনাইদহের খালিশপুর ৫৮ বিজিবি। এদিকে মহেশপুর উপজেলার শ্যামকুড় কলোনী পাড়া গ্রামের আমির হোসেন (২৭) নামে এক যুবক গত সোমবার থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। যুবক আমির হোসেন ওই গ্রামের কালু মন্ডলের ছেলে। গ্রামবাসির ধারণা ইছামতি নদীতে পাওয়া লাশটি আমির হোসেনের বলে তারা সন্দেহ করছে। স্থানীয় ইউপি মেম্বর খোন্দকার আব্দুল করিম অভিযোগ করেন, ঘটনার দিন রাতে শ্যামকুড় পুর্বপাড়া গ্রামের ইদু শেখের ছেলে মোমিনুর ও সাদেক আলীর ছেলে শাহানুরের নেতৃত্বে একটি চোরাকারবারী দল ভারতে গরু আনতে যায়। ওই দলে আমির হোসেন ছিল। ইউপি মেম্বরের ভাষ্যমতে নিখোঁজ আমির হোসেন তার শ্যালকের ছেলে। সীমান্তে গরু চোরাকারবারী মোমিন ও শাহানুর আমিরকে ফুসলিয়ে ভারতে নিয়ে যায় গরুর রাখাল হিসেবে। তারা আমির হোসেন ফিরে আসবে আসবে জানালে এখন দুজনাই গাঁঢাকা দিয়েছে। সীমান্তের একটি সুত্র জানায়, ভারতে গরু আনতে গিয়ে বিএসএফ’র হাতে ধরা পড়ে আমির হোসেন। এ নিয়ে শুক্রবার রাতে উদ্ধার হওয়া লাশটি শ্যামকুড় কলোনীপাড়ার আমিরের কিনা তা নিয়ে বিজিবির দায়িত্বশীল সুত্রগুলো তথ্য দিতে পারেনি। ঝিনাইদহের খালিশপুর ৫৮ বিজিবির কমান্ডার লেঃ কর্ণেল কামরুল আহসান শনিবার এ প্রতিবেদককে জানান, ইছামতি নদীর ভারতীয় অংশে অজ্ঞাত একটি লাশ ভাসতে দেখে তারা বিএসএফকে খবর দেন। এরপর বিএসএফ লাশটি উদ্ধার করে। তিনি জানান, লাশটি বাংলাদেশী কারো কিনা সে বিষয়ে তাদের কাছে কোন তথ্য নেই। কেও অভিযোগও করেনি। মহেশপুরের শ্যামকুড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমানুল্লাহ হক জানান, “তার এলাকার আমির হোসেন নামে একটি ছেলে গত ৪/৫ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছে। শুনেছি লাশটি তারই। কিন্তু এখনো আমরা দায়িত্বশীল সুত্র থেকে নিশ্চেত হতে পারেনি। আমি আমিরের পিতা কালু মন্ডলকে থানায় জিডি করতে বলেছি”।
করোনা ভাইরাসের কারনে ফুলচাষিরা চরম বিপদে
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের শাহপুর ঘিঘাটি গ্রামের ফুলচাষি আনোয়ার হোসেন বলছিলেন তিন বিঘা জমিতে গাঁদা, রজনী ও গ্লাডিয়াস ফুলের চাষ করেছিলেন কৃষক আনোয়ার হোসেন। দু’সপ্তাহ হলো ফুল বেচাকেনা বন্ধ। ফলে জমিতেই ফুল নষ্ট হচ্ছে। এদিকে ফুল তুলে ফেলে না দিলে গাছ মরে যায়। গাছ থেকে একবার ফুল তুলে ফেলে দিতে প্রায় চার হাজার টাকা খরচ হয়। দু’সপ্তাহে দু’বার ক্ষেত থেকে ফুল তুলে ফেলে দিয়েছেন। এদিকে কবে ফুলের বাজার শুরু হবে তাও অনিশ্চিত। পকেটের টাকা খরচ করে এভাবে ফুলগাছ বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব না। তাই বাধ্য হয়ে এখন ফুল গাছ তুলে ফেলে দিতে হচ্চে। এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে করোনা ভাইরাসের কারনে। এ ভাইরাসের কারনে সারাদেশে চলছে অঘোষিত লকডাউন। ফলে দেশের সব ফুলের বাজার বন্ধ হয়ে গেছে। এ বছর প্রায় দুই লক্ষাধিক টাক খরচ করে এই চাষ করেছিলাম। যা করোনার কারনে সবই মাটি হয়ে গেল। একই রকম অবস্থা জেলার হাজার হাজার ফুলচাষিদের। এবছর ঝিনাইদহের ছয় উপজেলায় ২০৪ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়েছিল। গেল বছর এ জেলায় চাষ হয়েছিল ২৪৫ হেক্টর। প্রতিবছর সব থেকে বেশি ফুলের চাষ হয় জেলা সদর উপজেলার গান্না ও কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নে। ১৯৯১ সালের কথা। ভারতীয় সীমান্তবর্তী জেলা ঝিনাইদহে কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের সৌখিন কৃষক ছব্দুল শেখ সর্বপ্রথম ফুল চাষ করেন। ওই বছর মাত্র ১৭ শতক জমিতে ফুল চাষ করে ৩৪ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেন। এরপর থেকে এলাকায় বিভিন্ন জাতের ফুল চাষের বিস্তার লাভ করতে থাকে। সেখান থেকে শুরু হয়ে বর্তমানে জেলার হাজার হাজার কৃষক ফুলচাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বি হচ্ছে। সাথে সাথে কর্মসংস্থান হয়েছে হাজার হাজার ফুলকর্মী নারী-পুরুষের। কিন্তু চলতি মৌসুমে বৈশি^ক মহামারি করোনা ভাইরাসের কারনে ফুলচাষি ও ফুলকর্মীদের সে স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে। ২৩ মার্চ থেকে ফুলের বাজার বন্ধ। প্রতিবছর এ জেলার ফুলচাষিরা বসন্ত বরণ, বিশ^ ভালোবাসা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস এবং বাংলা নর্ববর্ষ উদযাপন সহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে ফুলের যোগান দিয়ে থাকে। এ সময়ে ভালো লাভ পান কৃষকরা। এবছর স্বাধীনতা দিবসের আগে থেকে ফুল বেচাকেনা বন্ধ। এখনো সামনে রয়েছে বাংলা নববর্ষ। কিন্তু কৃষকের সব স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে করোনা ভাইরাস। ফুল বেচাকেনা না থাকায় চরম লোকসানের মুখে পড়েছে এই স্বাম্ভানাময় ফুলচাষের সাথে জড়িতরা। বেশি বিপদে পড়েছে ফুলকর্মীরা যারা ফুল তোলা ও গাথার কাজ করে সংসারের খরচ যোগান দিত। সব থেকে বেশি ফুলচাষ হওয়া এলকা বালিয়াডাঙ্গা ও গান্না ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা পকেটের টাকা খরচ করে ক্ষেত থেকে ফুল তুলে ফেলে দিচ্ছে। অনেকে ফুল গবাদি পশুর খাবার হিসাবে ব্যবহার করছেন। অনেক স্থানে দেখা গেলো কৃষকরা ফুলসহ গাছ তুলে ফেলে দিচ্ছে। ক’দিন আগে মাঠের পর মাঠ দোল খাচ্ছিল লিলিয়াম, গাঁদা, রজনীগন্ধ্যা, গোলাপ ও গ্লাডিয়াসসহ নানা জাতের ফুল। ক’দিন আগেও এসব এলকার কৃষকরা ফুলের রঙে রঙিন স্বপ্নে বিভোর ছিল। তারা এখন জানালে ফুল নিয়ে চরম হতাশা আর দুঃস্বপ্নের কথা। এ কালীগঞ্জ উপজেলার শাহপুর ঘিঘাটি গ্রামের স্কুল শিক্ষক খলিলুর রহমান জানান, এবছর আট বিঘা জমিতে ফুল চাষ করেছিলাম। অনেক জমিতে ফুল তোলা শুরু হয়েছিল। এখন ফুল বেচাকেনা বন্ধ। জমিতে ফুল পচে নষ্ট হচ্ছে। কিছু বাড়ি গবাদি পশু দিয়ে খাওয়াচ্ছি। অনেক জমির ফুল গাছ তুলে দিচ্ছি। ক’দিন আগেও ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে বালিয়াডাঙ্গা, লাউতলা ও কালীগঞ্জ মেইন বাসস্টান্ড দুপুর গড়ালে ফুলে ফুলে ভরে যেত। এসব বাজারে প্রতিনিদন দূর-দূরান্ত থেকে ফুল কিনতে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা আসতেন। ফুলচাষি, ব্যাপরী আর ফুল কর্মীদের হাকডাকে মুখরিত থাকতো। সকাল থেকেই বিভিন্ন রুটের বাসের ছাদে স্তুপ করে সাজানো হতো ফুল। ঢাকা-চট্রগ্রামসহ দেশের বড় বড় শহরে ট্রাক-পিকআপ ও ভ্যান ভরে ফুল যেত। সেখানে এখন আর কাউকে দেখা যাচ্ছে না। একই রকম অবস্থা জেলার বড় ফুলের হাট গান্না বাজারের। গান্না বাজার ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দাউদ হোসেন জানালেন, ফুলের ভরা মৌসুমে করোনার হানায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। কবে নাগাদ ফুলের বেচাকেনা হবে তাও অনিশ্চিত। ফলে কৃষকরা বাধ্য হয়ে ফুল গরু ছাগল দিয়ে খাওয়াচ্ছে। ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিপ্তরের উপ-পরিচালক কৃপাংশু শেখর বিশ্বাস জানান, করোনা ভাইরাসের কারনে ফুলচাষিরা চরম বিপদে পড়েছে। তারা ফুল বিক্রি করতে পারছেন না। আবার ক্ষেতে ফুল রাখতেও পারছেন না। বাধ্য হয়ে গরু ছাগর দিয়ে খাওয়াচ্ছে। অনেকে ফুল তুলে দিচ্ছে। ফুলচাষ দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখলেও দ্রুত পঁচনশীল হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছে এ অঞ্চলের কৃষকরা যোগ করেন এই জেলা কৃষি কর্মকর্তা।