সোমবার ● ২৭ এপ্রিল ২০২০
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » করোনার প্রকোপে প্রাণের বিদ্যাপীঠে যাওয়া বন্ধ : বিষন্ন মন, বিষন্ন মুখ
করোনার প্রকোপে প্রাণের বিদ্যাপীঠে যাওয়া বন্ধ : বিষন্ন মন, বিষন্ন মুখ
অর্ণব মল্লিক, কাপ্তাই প্রতিনিধি :: বিশ্ব আজ এক অদৃশ্য শক্তির কবলে পড়ে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে। চীনের উহান রাজ্য থেকে মরনঘাতি করোনা ভাইরাস আজ প্রায় বিশ্বের প্রতিটি দেশে মহামারিতে রূপ নিয়েছে। এখনো পর্যন্ত এই ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারে ব্যর্থ হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে এই ভাইরাসকে প্রতিরোধ করার একটি উপায় সেটি হলো নিজ নিজ বাড়িতে সামাজিক দুরত্ব রক্ষা করে অবস্থান করা। বাংলাদেশেও এই ভাইরাসের প্রভাব চোখে পড়ার মতো কেননা প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছে বহু মানুষ এবং তার সাথে অনেক মানুষ এই ভাইরাসের প্রকোপে মৃত্যুকে বরণ করে নিচ্ছে। তবে এই মহামারি করোনা ভাইরাস যখন থেকে বাংলাদেশে এসেছে তখন থেকেই বাংলাদেশ সরকার করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যত লগডাউন ঘোষনা করেছে। করোনা মোকাবেলায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তৎক্ষনাৎ বন্ধ ঘোষনা করে দিয়েছে। বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ। এই ছাড়াও অনির্দিষ্ট কালের জন্য সকল পরীক্ষা স্থগিত করার সিন্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশের সর্ব বৃহৎ শিক্ষাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশের যেই ২টি জেলা এখনো করোনামুক্ত রয়েছে তার মধ্যে একটি রাঙামাটি পার্বত্য জেলা। রাঙামাটির জেলার কাপ্তাই উপজেলা শিক্ষা সমৃদ্ধে ভরপুর একটি উপজেলা। প্রতিবছর এই উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের পাবলিক পরীক্ষা, জাতীয় পুরষ্কার, মেধা অন্বেষন সহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মেধাতালিকায় অবস্থান করে। কিন্তু করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় কাপ্তাই উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ প্রায় ১ মাস হতে চললো। স্কুল কলেজ গুলো বন্ধ হওয়ার ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে যেমনটা মিস করছে তেমনটা মিস করছে তাদের বন্ধু বান্ধবীদের।। বন্ধুদের সঙ্গে হৈ-হুল্লোড় আর আড্ডা নেই। ক্লাসে বসে ঘণ্টা পর ঘণ্টা নেই পড়াশুনা। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সব কিছু বদলে দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন জীবনে এনেছে ব্যাপক পরিবর্তন। তারপরও থেমে নেই জীবন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকলেও অনেক শিক্ষার্থী অনলাইনে ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন, পরিকল্পনা মাফিক সময়কে কাজে লাগাচ্ছেন। আবার কাছের মানুষদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে সচেতন করে তুলছেন।
কাপ্তাই উপজেলা কয়েকটি স্কুল এবং কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থীদের কেমন কাটছে এই গৃহবন্দী জীবন তাদের অনুভুতি গুলো তুলে ধরেছেন এই প্রতিবেদকে:
কর্ণফুলী কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মাসাসিং মারমা, একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী জাফরিন জানান, দীর্ঘ ১ মাসেরও অধিক সময় ধরে প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছি না, খুব মিস করছি সহপাঠীদের। ঘরে বসে একগেঁয়েমী লাগছে।
কাপ্তাই নৌবাহিনী কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সায়েমা তাসনিম বলেন, কতদিন হয়ে গেলো এলার্মের আওয়াজে ঘুম থেকে উঠে প্রাণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া হয়না। কি এক সময় এল, এমনটা কি কেউ ভেবেছিলো! পুরো পৃথিবী আজ থমকে গেছে, নেই কোন কোলাহল, নেই কোন ব্যস্ততা। সর্বশ্রেষ্ট মানুষ হয়েও আমরা আজ একটি ক্ষুদ্র অনুজীবের কাছে পরাস্ত। তবে একমাত্র বাড়িতে থেকে এই করোনা ভাইরাস মোকাবেলা সম্ভব। তাই আমি বাড়িতে থেকে এইসময় লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি। আর আমাদের কাপ্তাই বিএন স্কুল এন্ড কলেজ ভার্চুয়াল ক্লাস চালু করায় আমরা অনলাইনে ক্লাসে অংশগ্রহন করতে পারছি। এই ভার্চুয়াল ক্লাসে অংশ নিতে পেরে অনেক ভালো লাগছে। এখন প্রত্যাশা শুধু একটায় নির্মল, সুস্থ বাতাসের। যেন আমরা সবাই প্রাণভরে নিশ্বাস নিয়ে আবার পথ চলতে পারি। সবাই সুস্থ থাকুন, নিরাপদে থাকুন এটাই কামনা।
এদিকে কাপ্তাই নৌবাহিনী স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র মো ইহসানুল আলম বলেন, সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের প্রকোপে অস্থির পুরো বিশ্ব। দেশে চলছে কার্যত লগডাউন। আমরা সবাই করোনা মোকাবেলায় নিজ নিজ বাড়িতে অবস্খান করছি। অনেক দিন বিদ্যালয়ে যেতে না পেরে বন্ধুদের সাথে দেখা না হওয়ায় খুব বিরক্তিবোধ করছি। এই লগডাউন অবস্থায় বাসায় থেকে লেখাপড়া করছি। এছাড়া আমাদের বিদ্যালয় ভার্চুয়াল ক্লাস চালু করায় সেখানে অংশ নিয়ে ভালো লাগছে। সোসাল মিডিয়ার কল্যাণে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে। এইভাবে বাসায় সময়টা কাটছে। এ মহামরি দুর্যোগে সবাইকে সচেতন হতে হবে। বাড়িতে অবস্থান করতে হবে। নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধোঁয়া ও মাস্ক পরে চলাফেরা করতে হবে। আশা করছি খুব শীঘ্রই আমরা আবার এই সংকট কাটিয়ে সুস্থ সুন্দর জীবন ফিরে পাবো।
কেপিএম স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী শ্রাবন্তী ঘোষ বলেন, এরকম দুর্যোগ পরিস্থিতি আগে কখনো দেখিনি। অনেকদিন বিদ্যালয়ে যেতে না পারায় খুব মিস করছি প্রিয় শিক্ষক এবং বন্ধুদের।বাড়িতে লেখাপড়া এবং আনুসাঙ্গিক কাজ করে সময়টা কাটছে। এই ভাইরাস প্রতিরোধে আমাদের সবাইকে সচেতন হয়ে কাজ করতে হবে। পরিবারের অন্যদের, আশে-পাশের মানুষকে সচেতন করতে হবে। একমাত্র সবাইকে বাড়িতে থেকেই আমাদের সবাইকে এই ভাইরাস মোকাবেলা করতে হবে। সাথে এই সময়টাকে সকল শিক্ষার্থীকে কাজে লাগিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হবে।। আমরা যেন আবার সুস্থ সুন্দর জীবনে ফিরে যেতে পারি আমাদের সবার শ্রষ্টাকে স্মরণ করতে হবে।
একদিন মুখরিত হবে প্রিয় ক্যাম্পাস, আবারোও নিয়ম করে ঘুম থেকে উঠে স্কুল কলেজে যাবো- সকলের সেই প্রত্যাশা।।
কাপ্তাই উপজেলায় প্রায় ১০ হাজার হতদরিদ্র পরিবার পেলো প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার
কাপ্তাই :: মহামারি করোনার কারনে গত ২৬ মার্চ হতে রাঙামটি জেলার কাপ্তাই উপজেলায় সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক জরুরী সেবা খাত ছাড়া সব কিছু বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে খেঁটে খাওয়া মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এমতা অবস্খায় সরকারের ত্রান মন্ত্রনালয় হতে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার স্বরুপ দফায় দফায় ত্রান বিতরণ করা হচ্ছে। কাপ্তাই উপজেলা প্রশাসন এবং রাঙামাটি জেলা পরিষদ হতে এই পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার হতদরিদ্র পরিবারকে চাল, ডাল, তেল, লবন সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি প্রদান করা হয়েছে।
কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফ আহমেদ রাসেল জানান, রবিবার (২৬ এপ্রিল) ৬ষ্ট ধাপ পর্যন্ত কাপ্তাইয়ের ৭৭৫০ টি পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে, এছাড়া বিতরনের অপেক্ষায় আছে আরোও ১৫০০ পরিবার।
তৎমধ্যে ১নং চন্দ্রঘোনা ইউপিতে ১৫৫০ পরিবার, ২ নং রাইখালী ইউপিতে ১৯৫০ পরিবার, ৩ নং চিৎমরম ইউপিতে ১১৫০ পরিবার, ৪ নং কাপ্তাই ইউপিতে ১৯৫০ পরিবার এবং ৫ নং ওয়াগ্গা ইউপিতে ১১৫০ পরিবার পেলো প্রধানমন্ত্রীর উপহার। এইছাড়া কাপ্তাই উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ২৮০ টি পরিবারকে শিশু খাদ্য প্রদান করা হয়েছে এবং আরোও ৭০ টি পরিবারকে বিতরণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফ আহমেদ রাসেল আরো জানান, সরকার হতে প্রাপ্ত ৫ লাখ টাকার নগদ অর্থ দিয়ে প্রত্যেকটি ইউনিয়নে চাল, ডাল, আলু এবং লবন সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয় করে স্ব স্ব ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে হতদরিদ্রের ঘরে পৌঁছানো হয়েছে।
এদিকে রাঙামটি পার্বত্য জেলা পরিষদের পক্ষ হতে এই পর্যন্ত কাপ্তাইয়ের ৫ টি ইউনিয়নে ১৮৫০ টি পরিবারকে ত্রান সহায়তা প্রদান করা হয়েছে বলে জানান, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য প্রকৌশলী থোয়ইচিং মারমা ও সান্তনা চাকমা। তৎমধ্যে ১ নং চন্দ্রঘোনা ইউপিতে ৩৫০, ২ নং রাইখালী ইউপিতে ৪০০, ৩ নং চিৎমরম ইউপিতে ৩৫০, ৪ নং কাপ্তাই ইউপিতে ৪০০ এবং ৫ নং ওয়াগ্গা ইউপিতে ৩৫০ টি পরিবারকে ত্রান সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
এই ছাড়া কাপ্তাই উপজেলায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী সহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত উদ্যোগ, সামাজিক সংগঠন এবং রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ হতে নানা ভাবে কর্মহীন মানুষক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।