সোমবার ● ২৭ এপ্রিল ২০২০
প্রথম পাতা » গাজিপুর » কাপাসিয়ায় রিকশা চালকের জমানো টাকায় কিনে দিলেন ১২০ কর্মহীন পরিবারের জন্য খাদ্যসামগ্রী
কাপাসিয়ায় রিকশা চালকের জমানো টাকায় কিনে দিলেন ১২০ কর্মহীন পরিবারের জন্য খাদ্যসামগ্রী
মামুনুর রশিদ, বিশেষ প্রতিনিধি :: কথায় আছে, মানুষ মানুষের জন্য। মানবতারই সেবাই আল্লাহর এবাদত। মানবিক ও সাদা মনের আলোকিত মানুষেরাই বিপদে আপদে অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়ায়। অন্যের দুঃখ দেখলে এগিয়ে আসে। মানব প্রেম ও সেবার কাছে হারমানে বিত্তহীনতা। অর্থ, বিত্তবৈভব নয়, মানব সেবার জন্য প্রয়োজন ভালোবাসা ও আকাশ ছোঁয়া একটি হৃদয়।
পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছে যাদের মন পৃথিবীর চেয়ে অনেক বেশি বড়। এ সব মানুষ স্বপ্নের চেয়ে বড়। মানব প্রেম, মানবিকতার কাছে হার মানে শ্রমজীবী মানুষের দারিদ্রতা। অন্যের মুখে হাসি ফুটাতে বিসর্জন দেয় নিজের বুননকরা স্বপ্নকে। এসব মানুষের সংখ্যা পৃথিবীতে খুব বেশি নেই, একদমই হাতে গোনা। প্রচারবিমুখ এসব মানুষগুলোর সমাজপতি হওয়ারও ইচ্ছে নেই।
কাপাসিয়া উপজেলার টোক ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের দিনমজুর সোহরাব উদ্দীন তাদেরই একজন।
সোহরাব উদ্দীন পেশায় একজন রিক্সাচালক হলেও মহানুভবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। প্রতিদিন কাকডাকা ভোরে কাঁচা লংকা আর পেঁয়াজ দিয়ে এক প্লেট পান্তা খেয়েই রিকশা নিয়ে বের হোন তিনি। দিন আনে দিন খায় সোহরাব। ৫ সদস্যের সংসার নিয়ে অতি কষ্টে জীবন চলে তাঁর। সারাদিনে রোজগার হয় মাত্র ৩শ থেকে ৪শ টাকা। এ টাকা দিয়ে সংসারের খরচ সামলে সঞ্চয় করেন কিছু টাকা। স্বপ্ন তার ভাল একটি ঘর বানানোর। দুই মেয়ে, ১ ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে মাথাগোজারই ঠাই নেই তার । তাই কোনরকম বেঁচে থাকার জন্য একটি ঘর খুব প্রয়োজন সোহরাব উদ্দীনের। বাড়ি ভিটাছাড়া জায়গা জমি বলতে তেমন কিছুই নেই তার । ১৫ বছর ধরে রিকশা চালিয়ে ঘর বানানোর জন্য জমিয়েছেন ২৬ হাজার টাকা। রিক্সাচালক সোহরাবের স্বপ্নের মাঝখানে বাধা হয়ে দাড়ালো করোনা। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ঘরবন্ধী কর্মহীন মানুষ। হতদরিদ্র মানুষের কষ্ট বেড়ে গেলো। তিনিও কর্মহীনদের মতো অসহায় হয়ে গেলেন । তার মতো কর্মহীন অসহায় হয়ে পড়েছেন গ্রামের আরো অনেকে। তাদের ঘরে দেখা দিয়েছে খাদ্যাভাব। এলাকায় দিন আনে দিন খায় এমনসব মানুষকে তিনি চিনেন জানেন। তাদের দুঃখ, দুর্দশা সম্পর্কে তিনি খুবই অবহিত। কর্মহীন এ সব দিনমজুর হতদরিদ্র মানুষের অনেকের ঘরে চাল নেই, ডাল নেই। নেই নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী।অনেকের ঘরে ছোট্ট শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা অভুক্ত । মানুষের এ ক্রান্তিলগ্নে, মানুষের এ দুঃসময়ে স্থির থাকতে পারেননি মানব দরদী রিকশাওয়ালা সোহরাব। নিজের কোন আয় অবলম্বন না থাকলেও অন্যের দুঃখে তার চিন্তার যেন শেষ নেই। এমন অবস্থায় টিনের ঘর বানানোর জন্য জমানো ২৬ হাজার টাকা দিয়ে অসহায় ১২০ পরিবারকে খাবার কিনে দিলেন রিকশাচালক সোহরাব উদ্দীন।
গাজীপুরের কাপাসিয়ার টোক ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের অসহায় ১২০ টি পরিবারে চাল, ডাল, আলুসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী শুক্রবার রাতে তিনি নিজেই বহন করে পৌঁছে দেন। এমন ঘটনায় উপজেলার বিভিন্ন মহল থেকে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি।
রিকশাচালক সোহরাব উদ্দীন বলেন, আমার ঘর হয়তো পরেও করা যাবে। অসহায় মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছে দিতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। তাদের জন্য ১০ বস্তা চাল কিনেছি। টাকা থাকলে আরো বেশি পরিবারকে খাবার দিতাম। আমার কাছে টাকা থাকলে আমার গ্রামের মানুষ না খেয়ে থাকবে কেন? তিনি বলেন, রিজিকের মালিক মহান আল্লাহ।
এ দিকে বিভিন্ন পত্রিকায় রিকশা চালক সোহরাবের এ ধরনের মহানুভবতা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর রোববার এ বিষয়টি নজরে আসে কাপাসিয়া উপজেলা প্রশাসনের ।
জানাযায়, বিষয়টি মিডিয়ায় প্রকাশের পরই রিকশাচালকে একটি ঘর করে দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছেন কাপাসিয়া উপজেলা প্রশাসন।
এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসমত আরা।
কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসাঃ ইসমত আরা জানান, বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের পর কাপাসিয়ার টোক ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের রিকশাচালকের বিষয়টি আমরা জানতে পারি। ওই রিকশা চালক ঘর করার জন্য টাকা সঞ্চয় করছেন। জামানো টাকায় ১২০টি পরিবারের মাঝে তিনি খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন বিষয়টি জানতে পেরেছি। লোকটির মহানুভবতা দেখে ওনার বাড়িতে একটি ঘর করে দেওয়ার বিষয়টি ভাবা হচ্ছে ।’
কাপাসিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোঃ আমানত হোসেন খান এ বিষয়ে বলেন, ‘রিকশাচালক সোরহাব উদ্দীনের জায়গা থাকলে আমরা ঘর করে দিব। রিকশা চালক সোহরাব উদ্দীনকে উপজেলা পরিষদে আসতে বলা হয়েছে।
স্থানীয় টোক উজুলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমতাজ উদ্দীন আহমেদ জানান, সুলতানপুর গ্রামের রিকশা চালক সোহরাব একজন দিনমজুর হতদরিদ্র মানুষ। আমার জানামতে, সে বিগত ১৫ বছর যাবত একটি টিনের ঘর বানানোর জন্য২৬ হাজার টাকা সঞ্চয় করেছিলো। করোনা ভাইরাসের এহেন পরিস্থিতিতে ‘দিন আনে দিন খায় ‘- এলাকার এমনসব ঘরবন্দী অসহায় মানুষের খাদ্য সংকট দেখে সে নিজের জমানো টাকায় ১২০ টি পরিবারের মাঝে চাল, ডাল, তেল সহ প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন। আমার জানামতে সে সুনাম বা কোন কিছু পাওয়ার আশায় এ কাজ করেনি। তার এ মহানুভবতা নজিরবিহীন।