বুধবার ● ২৯ এপ্রিল ২০২০
প্রথম পাতা » পাবনা » পাবনায় নতুন করে আক্রান্ত ৬ জন আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৮ জনে
পাবনায় নতুন করে আক্রান্ত ৬ জন আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৮ জনে
মো. নূরুল ইসলাম, পাবনা জেলা প্রতিনিধি :: পাবনায় নতুন করে আক্রান্ত ৬ জন তার মধ্যে চাটমোহরের ১ জন পাবনা জেনারেল হাসপাতালের একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক ও একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স সহ জেলায় মোট ৬ জন নতুন করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
এ নিয়ে জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো আটজনে। এর মধ্যে চাটমোহরে ৩ জন, ভাঙ্গুড়ায় ২ জন ও পাবনা সদরে ৩ জন। আর সুজানগরের একজন ঢাকায় আক্রান্ত ও নমুনা পরীক্ষায় পজেটিভ আসলেও তার হিসেব পাবনায় নেই।
পাবনার সিভিল সার্জন ডাক্তার মেহেদী ইকবাল আজ ২৮ এপ্রিল মঙ্গলবার দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, আক্রান্তদের মধ্যে পাবনা সদর উপজেলায় ৩ জন, চাটমোহর উপজেলায় একজন স্বাস্থ্যকর্মী ও ভাঙ্গুড়া উপজেলার গাজীপুর ফেরত স্বামী-স্ত্রী। এদের সবার নমুনা ২৩ এপ্রিল পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডাক্তার আবুল হোসেন জানান, একজন রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক ও সিনিয়র স্টাফ নার্স করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। করোনার উপসর্গ নিয়ে ওই রোগী গত ২২ তারিখে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। পরে তিনি ঢাকায় গিয়ে করোনা পরীক্ষা করার পর তার পজেটিভ আসে। বিষয়টি আমার জানার পর ওই দুইজনের নমুনা পাঠিয়েছিলাম, তাদের পজেটিভ আসছে। এখন যে রোগী চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন তার সংস্পর্শে কারা কারা ছিলেন তাদের তালিকা তৈরী করা হচ্ছে। তাদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিতসহ নমুনা পরীক্ষা করা হবে। আর আেক্রান্ত অন্য একজন পাবনা পৌর এলাকার বাসিন্দা। তিনি কিভাবে আক্রান্ত হয়েছেন তা তাৎক্ষনিকভাবে জানা যায়নি।
এছাড়া চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার শুয়াইবুর রহমান জানান, হাসপাতালের একজন স্বাস্থ্যকর্মী (এমটিইপিআই) করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তার বয়স ৫৩ বছর। তিনি করোনার নমুনা সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। সেখান থেকেই আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি হাসপাতালের কোয়ার্টারের মধ্যে বসবাস করতেন। যেহেতু করোনার নমুনা সংগ্রহ করতেন সেকারণে সতর্কতা হিসেবে গত ২৩ এপ্রিল তার নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল।
ডাক্তার শুয়াইবুর আরো জানান, করোনা আক্রান্ত ওই স্বাস্থ্যকর্মীর মধ্যে করোনার কোনো লক্ষণ নেই। তারপরও যেহেতু পজেটিভ এসেছে সেকারণে তাকে বাসায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।
তবে হাসপাতাল লকডাউন করার সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। তবে তার সাথে বা সংস্পর্শে যারা চলাফেরা করেছেন তাদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। আর তাদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
অপরদিকে ভাঙ্গুড়া উপজেলার স্বামী-স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের বাড়ি উপজেলার মুন্ডুতোষ ইউনিয়নের মল্লিকচক গ্রামে। তারা গাজীপুরে পোশাক কারখানায় কাজ করতেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার হালিমা খাতুন জানান, গত ১৭ এপ্রিল বাড়িতে এসে অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। এরপর ২৩ এপ্রিল ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের নমুনা সংগ্রহ করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাবে পাঠায়। ফলাফলে তাদের করোনা পজেটিভ আসে।
এদিকে গাজীপুর থেকে আসার পরে ওই দম্পতি হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। এছাড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকে সোমবার রাতেই আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য- পাবনায় প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয় গত ১৬ এপ্রিল। এদিন জেলার চাটমোহর উপজেলার মুলগ্রাম ইউনিয়নের বামনগ্রামে নারায়নগঞ্জ ফেরত এক পোশাককর্মী (৩২) এর নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজেটিভ আসে। এছাড়া গত ১৯ এপ্রিল চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল ইউনিয়নের সোনাবাজু ভিটাপাড়া গ্রামের এক ব্যক্তি (৪০) এর নমুনা পরীক্ষায় করোনা ধরা পড়ে।
পাবনার চাটমোহরে স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় শনাক্ত হাসপাতাল লকডাউন
পাবনা :: পাবনার চাটমোহর হাসপাতালের ১ জন স্বাস্থ্যকর্মী (এমটিইপিআই) করোনা আক্রান্ত হওয়ায় হাসপাতাল ও আবাসিক এলাকা লকডাউন ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন।
২৮ এপ্রিল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে বিষয়টি সাধারণ মানুষকে অবহিত করা হয়। প্রশাসনের নির্দেশ অনুযায়ী মাইকিং-এ বলা হয়, যেহেতু চাটমোহর হাসপাতালের একজন স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন সেকারণে হাসপাতাল ও আবাসিক এলাকা লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। তাই সবাইকে ঘরে থেকে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার অনুরোধ জানানো হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার মোঃ রায়হান জানান, স্বাস্থ্যকর্মীর করোনা ভাইরাস পজেটিভ হওয়ার পর হাসপাতাল ও সকল কোয়াটার লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে। একইসাথে সবাইকে ঘরে অবস্থান করার জন্য বলা হয়েছে। জরুরী স্বাস্থ্যসেবা নিতে সবাইকে হাসপাতালের চিকিৎসকদের মোবাইলে যোগাযোগ করার আহবান জানান তিনি।
চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার শুয়াইবুর রহমান জানান, আমরা সবাই এখন হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছি। যিনি আক্রান্ত তার সংস্পর্শের বাইরে যারা ছিল শুধু তারা জরুরী বিভাগে দায়িত্ব পালন করবেন। মোবাইল নাম্বারে সবাইকে সেখানে ফোনে জরুরী স্বাস্থ্যসেবা নিতে পরামর্শ দেন তিনি।