বুধবার ● ২০ মে ২০২০
প্রথম পাতা » ঢাকা » আর্মি রেটে গ্রামীণ রেশনিং চালু, বাজেটে কৃষি ও গ্রামীণ প্রকল্পে সর্বোচ্চ বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে কৃষক ও ক্ষেতমজুর সংগ্রাম পরিষদ
আর্মি রেটে গ্রামীণ রেশনিং চালু, বাজেটে কৃষি ও গ্রামীণ প্রকল্পে সর্বোচ্চ বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে কৃষক ও ক্ষেতমজুর সংগ্রাম পরিষদ
ঢাকা :: কৃষক ও ক্ষেতমজুর সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে আজ ২০ মে বুধবার সকাল এগারটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে মানববন্ধন-বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
কৃষি ফসলের লাভজনক দাম নিশ্চিত; প্রতি ইউনিয়নে ক্রয় কেন্দ্র খুলে সরকার নির্ধারিত দামে খোদ কৃষকের কাছ থেকে উৎপাদিত বোরো ধানের কমপক্ষে ২৫% ক্রয় করা; ধান ক্রয়ে লটারী প্রথা বাতিল, মিল-চাতাল মালিক সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম বন্ধ; দিনমজুর-ভূমিহীনসহ গ্রামীণ শ্রমজীবীদের জন্য আর্মি রেটে রেশনিং চালু, ২৫০০ টাকা করে দেয়া অর্থসহায়তার ৫০ লাখ পরিবরের তালিকা প্রকাশ, ভূয়া তালিকা প্রণয়নের সাথে যুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি; কৃষি প্রণোদনা প্যাকেজের নীতিমালা সংশোধন করে বর্গাচাষী ও ভূমিহীনদের ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করা; ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ঋণ নয়, নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান এবং আগামী বাজেটে কৃষি ও গ্রামীণ প্রকল্পে - সামাজিক সুরক্ষা খাতে অগ্রাধিকার দিয়ে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবিতে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়ক, কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ জহির চন্দনের সভাপতিত্বে মানববন্ধন সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, ক্ষেতমজুর সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আনোয়ার হোসেন রেজা, ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আকবর খান, ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্টের নেতা মানস নন্দী।
মানববন্ধন সমাবেশে কৃষক ক্ষেতমজুর নেতৃবৃন্দের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন জুলফিকার আলী, জাহিদ হোসেন খান, আবিদ হোসেন, সুকান্ত শফি কমল, মানবেন্দ্র দেব, অর্ণব সরকার প্রমুখ।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, বোরো মৌসুম চলছে, সরকার ধানের দাম মণপ্রতি ১০৪০ টাকা নির্ধারণ করে ৮ লাখ টন ধান এবং সাড়ে এগারো লাখ টন চাল সংগ্রহের ঘোষণা দিয়ে ২৬ এপ্রিল থেকে ধান কেনার কথা। হাওরের বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে। এখনও অনেক জেলায় ধান কেনা শুরু হয়নি। লটারি, তালিকা তৈরি হয়নি ইত্যাদি আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কথা বলে। অথচ সরকারের ধান ক্রয় নীতিমালা প্রণয়নে মিল মালিক, চাতাল মালিক, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের প্রভাবের কথা কারো অজানা নয়। ফলে ধান ক্রয়ে বিলম্ব হলে কৃষক কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হয়, সেচ খরচ, কামলা খরচ, মহাজনের ঋণ শোধ করার জন্য এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ক্ষুদ্র ও ভূমিহীন কৃষক আর লাভবান হয় ফড়িয়া মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা।
নেতৃবৃন্দ বলেন, মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয়নি, কৃষি উপকরণের দাম বেড়েছে, করোনার কারণে কামলা খরচও বেড়েছে তাই গত বছরের চেয়ে কৃষকের উৎপাদন খরচ এবারে বেড়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সরকার ধানের ক্রয়মূল্য বাড়ায়নি, গতবারের সমানই রেখেছে। সরকার মাত্র ৮ লাখ টন ধান কিনবে, আর চাল কিনবে সাড়ে ১১ লাখ টন। কিন্তু কৃষক চাল উৎপাদন করে না, ফলে চাল নয় সরকারকে প্রতি ইউনিয়নে ক্রয় কেন্দ্র খুলে খোদ কৃষকের কাছ থেকে মোট উৎপাদিত বোরো ধানের ২৫% অর্থাৎ ৫০ লাখ টন ধান ক্রয় করতে হবে। নাহলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে লাভবান হবে চাতাল ও মিল মালিকেরা। তাছাড়া যে কৃষি কার্ডের মাধ্যমে ধান ক্রয় করা হয়, কৃষি উপকরণ দেয়া হয় সেই কার্ড তো ভূমিহীন ও বর্গাচাীদের নাই ফলে বর্গাচাষী-ভূমিহীন চাষীদের কৃষি কার্ড প্রদান, ধান ক্রয়ে লটারি প্রথা বাতিল এবং পর্যাপ্ত খাদ্য গুদাম নির্মাণের দাবি জানান নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, সারাদেশে মোট শ্রমশক্তির ৫৪% কৃষিতে নিয়োজিত। ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ৬ কোটি মানুষ দিনমজুর, ভূমিহীন ক্ষুদ্র চাষী। এদের হাত চললে পেট চলে। করোনা সংকটের এই সময়ে তাদের অনেকেই কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। সরকার সারাদেশে ৫০ লাখ পরিবারকে ২৫০০ টাকা করে নগদ সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। সেখানে দুর্নীতি, দলীয়করণ হয়েছে দেদারছে। গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে তালিকার মাত্র সাড়ে ৭ লাখ নামে কোন অভিযোগ নাই, বাকী সবই ভূয়া। নেতৃবৃন্দ ৫০ লাখ সুবিধা প্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ ও ভূয়া তালিকা প্রণয়নের সাথে যুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।
নেতৃবৃন্দ বলেন, শুধু ৫০ লাখ নয়, গ্রাম-শহরের শ্রমজীবী সাড়ে ৫ কোটি মানুষের জন্য করোনা সংকটের এই সময়ে আগামী ৬ মাস পর্যন্ত প্রতি মাসে কমপক্ষে ৮০০০ টাকা করে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করতে হবে এবং গ্রাম-শহরের শ্রমজীবীদের জন্য আর্মি রেটে রেশনিং চালু করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনা সংকটে যে কৃষি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার তাও ধনি কৃষক ও মধ্যসত্বভোগী ব্যবসায়ীদের স্বার্থে। ভূমিহীন-বর্গাচাষী এর সুফল পাবে না। এতে বলা আছে ১৫ বিঘা জমির মালিক পাবে ১০ হাজার টাকা ঋণ, আর কৃষি পণ্য ব্যবসায়ী প্রতিজন পাবে ৫ কোটি টাকা। তাছাড়া গার্মেন্টস মালিকদের ঋণের সুদ ২% আর কৃষি প্রণোদনা ঋণের সুদ ৫%। ভূমিহীন, লীজ চাষী ও বর্গাচাষীদের ঋণ পেতে হলে তাদেরকে চুক্তিপত্র দেখাতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের কোথাও বর্গাচাষী, লীজ চাষীদের সাথে জমির মালিকের কোন লিখিত চুক্তিই হয় না। ফলে কৃষি ঋণ প্রণোদনা প্যাকেজের নীতিমালা পরিবর্তনের দাবি জানান নেতৃবৃন্দ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, আগামী ১০ জুন বাজেট অধিবেশন হওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশের জিডিপিতে এখনও পর্যন্ত কৃষি খাতের অবদান ১৪%। অথচ স্বাধীনতা পরবর্তীকালে প্রতিটি সরকারের আমলেই বাজেটে কৃষি খাত অবহেলিত থেকেছে। এবারেও করোনাকালে যে বাজেট প্রণীত হতে যাচ্ছে তাতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে গতবারের চেয়ে মাত্র ৩ হাজার কোটি টাকা বেশী বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে বেরিয়েছে যা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ কৃষি প্রধান বাংলাদেশে ৮০% মানুষ এখনও কৃষি ও গ্রামীণ জীবনের সাথে যুক্ত। আর বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছে যে ৪টি খাত তার মধ্যে কৃষি অন্যতম। করোনা সংক্রমণের এই সময়ে বিশ্ব খাদ্য সংস্থাসহ অনেকেই বলছে করোনা পরবর্তীতে বিশ্বে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকীতে পড়তে পারে। ফলে কৃষি খাতকে গুরুত্ব না দিলে বাংলাদেশেও খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে বাধ্য। তাই আসন্ন বাজেটে অগ্রাধিকার দিয়ে কৃষি ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি তথা উন্নয়ন বরাদ্দের ৪০% কৃষি খাতে বরাদ্দের দাবি জানান নেতৃবৃন্দ।