মঙ্গলবার ● ২৬ মে ২০২০
প্রথম পাতা » সকল বিভাগ » করোনা জয় করলেন বিশ্বনাথ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা
করোনা জয় করলেন বিশ্বনাথ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা
মো. আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: ১৪ দিনে করোনা জয় করেছেন সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবদুর রহমান মুসা। গেল ১০ মে কোন উপসর্গ ছাড়াই নমুনা পরীক্ষায় দিলে করোনা শনাক্ত হয় তাঁর। এর পর থেকে নিজ কর্মস্থল উপজেলা হাসপাতালের আইসোলেশনে ছিলেন তিনি। আইসোলেশনের এই ১৪ দিনেও তাঁর শরীরে ছিলনা উপসর্গের কোন উপস্থিতি। সেখানে স্বাভাবিক দিন যাপন করছিলেন তিনি। পাশাপাশি উপসর্গহীন করোনা থেকে মুক্তি পেতে নিয়েছেন নিয়মিত চিকিৎসা সেবা। পরে গেল ২১ মে আবারো নমুনা পরীক্ষায় পাঠান তিনি। ২৪ মে পাওয়া রিপোর্টে করোনা নেগেটিভ এলে আশঙ্কামুক্ত হন তিনি।
সূত্র জানায়, বিশ্বনাথ উপজেলায় ৩৩ জন করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ৩য় করোনা পজেটিভ হিসেবে গেল ১০ মে শনাক্ত হন তিনি। উপসর্গ আছে, এমন ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্রহ, আক্রান্তদের বাড়ি লকডাউনসহ করোনা সংকটে মাঠে দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই আক্রান্ত হন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. আবদুর রহমান মুসা বলেন, নিজের দৃঢ় মনোবল ও সকলের দোয়ায় আমার এখন করোনা নেগেটিভ। সেবাই আমার ধর্ম। আমি ভেঙ্গে পড়িনি, শুরু থেকেই নিয়মিত চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি আইসোলেশনে স্বাভাবিক দিন যাপন করেছি। নেগেটিভ রির্পোট পাওয়ার পর বর্তমানে নিময়মানুযায়ী আরো ১৪ দিন হোম কোয়ারাইন্টানে আছি।
বিশ্বনাথে সাদা পোষাকে র্যাব সদস্য লাঞ্চিত : ব্যবসায়ীর ঘরে ভাংচুর-লুটপাটের অভিযোগ
বিশ্বনাথ :: সাদা পোষাকে আসামী ধরতে গিয়ে সিলেটের বিশ্বনাথে লাঞ্চিত হয়েছেন র্যাব-৯’র দুই সদস্য।
গত রবিবার দুপুরে উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের পেছি খুরমা গ্রামের ব্যবসায়ী বেলাল মিয়ার বাড়িতে ঘটনাটি ঘটে।
এসময় ব্যবসায়ী ও তার আত্মীয়-স্বজনের বসত ঘরে ব্যাপক ভাংচুর-লুটপাট করার ঘটনা ঘটেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
একই সময়ে র্যাবের হাতে আবদুস ছালাম নামের স্থানীয় এক সাংবাদিক লাঞ্চিত হয়েছেন ও লাঠির আঘাতে ভেঙ্গে গেছে সাংবাদিকের ক্যামেরা।
এদিকে দুই র্যাব সদস্য লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনায় সিলেট র্যাব-৯’র এসআই প্রনব রায় বাদী হয়ে সোমবার বিশ্বনাথ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং ১৫ (তাং ২৫.০৫.২০ইং)।
ব্যবসায়ী বেলাল মিয়াকে প্রধান অভিযুক্তসহ ১৬ জনের নাম উল্লেখ ও আরো ৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা অভিযুক্ত করে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। এঘটনার পর থেকে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে এলাকা। ফলে গ্রামে মহিলা ও শিশুদের মনে বিরাজ করছে এক অজানা আতংঙ্ক। এদিকে গত কয়েক দিন ধরে এলাকায় অজ্ঞাতনামা যুবকদের মোটর সাইকেল মহড়াও বেড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসীর।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রাম্য বিরুদ্ধের জের ধরে ব্যবসায়ী বেলাল গংদের অভিযুক্ত করে থানায় মামলা দায়ের করেছে একটি পক্ষ। সেই মামলায় বেলালকে গ্রেপ্তার করতে গত রবিবার দুপুরে তার (বেলাল) বাড়িত সাদা পোষাকে র্যাবে ওই সদস্য যান। ওই বেলালের বাড়িতে একটি শিন্নি থাকায় গ্রামের ৪০/৫০ জন লোকের সাথে তিনিও বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন। এসময় বেলালকে হাতের কাছে পেয়ে গ্রেপ্তার করতে গেলে শুরু হয় ধস্তাধস্তি। তখনও র্যাবের সদস্যরা নিজেদের পরিচয় দেন নি। এর পূর্বের দিন (শনিবার) একদল বহিরাগত মোটর সাইকেলে মহড়া দিয়েছেন। আর তাই বেলালের সাথে র্যাব সদস্যদের ধস্তাধস্তির ফলে বাড়িতে থাকা লোকজন ওই দুই র্যাব সদস্যকে পূর্বের দিনের বহিরাগত মনে করে ধাওয়া করেন। গ্রামবাসীর ধাওয়া খেয়ে র্যাবের ওই দুই সদস্য বেলাল মিয়ার বাড়ির দক্ষিণের খালে পাড়ি দিয়ে গ্রামের দক্ষিণ দিকে পালানোর চেষ্টা করেন। এসময় একই গ্রামের জুনেদ মিয়া (২৫) ও আরিফ আলী (২৩) এর সম্মুখিন হয়ে তারা নিজেদেরকে র্যাবের সদস্য বলে পরিচয় দেন। র্যাবের পরিচয় পাওয়ার পর পরই তাদের দুজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখেন গ্রামবাসী। বিষয়টি সিলেট র্যাব-৯’র উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলে সিলেট থেকে র্যাব ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই দু‘জনকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। সেই সাথে বেলাল মিয়ার বাড়ির দক্ষিনের কাল থেকে তাদের ফেলে যাওয়া একটি পিস্থলও উদ্ধার করেন র্যাব সদস্যরা। এসময় ব্যবসায়ী বেলাল ও তার আত্মীয়-স্বজনদের বসত ঘরে (মোট ৪টি) থাকা মোটর সাইকেল, আসবাবপত্র ব্যাপক হারে ভাংচুর এবং নগদ টাকা ও স্বর্ণালংঙ্কার লুটপাঠ হওয়া ঘটনা ঘটে। ভাংচুরের ছবি তুলতে গেছে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার বিশ্বনাথ প্রতিনিধি আবদুল সালাম র্যাব সদস্যের হাতে লাঞ্চিত হন। এসময় র্যাবের লাঠির আঘাতে ভেঙ্গে যায় সেই সাংবাদিকের ক্যামেরা।
এব্যাপারে ব্যবসায়ী বেলাল মিয়ার স্ত্রী আম্বিয়া বেগম (৩৫) অভিযোগ করেন, রবিবার বিকেলে দুজন অজ্ঞাতানা ব্যক্তি আমার স্বামীকে খোঁজে বাড়িতে এলে তিনি (বেলাল) ঘর থেকে বের হওয়া মাত্রই তাকে মারধর শুরু করেন তারা। এরপর শনিবারের মোটর সাইকেলের বহিরাগত মনে করে বাড়িতে থাকা লোকজন এগিয়ে এলে তারা পালিয়ে যায়। এরপর বিকেলে মাতায় হেলমেট পরিহিত ২০/৩০ জন লোক আমাদের বাড়িতে প্রবেশ করে বসত ঘরে থাকা মোটর সাইকেল ও আসবাবপত্র ব্যাপকহারে ভাংচুর করে আমার স্ট্রীল আলমিরাতে থাকা ৩/৪ ভরি স্বর্ণালংঙ্কার ও নগদ ৩/৪ হাজার টাকা লুটকরে নিয়ে যায়। এরপর জানতে পারে প্রথমে আসা দুজন র্যাবের সদস্য ছিলেন। তবে ভাংচুর ও লুটপাঠকারীদের তিনি ছিনতে পারেন নি।
একই সময়ে ব্যবসায়ী বেলাল মিয়ার দক্ষিণ পার্শ্বের ঘরের সাজ্জাদ আলী মুতায়াল্লির ঘর ও সামনের বাড়ির লিলু মিয়ার বসত ঘরে হামলা ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়। তবে সাজ্জাদ আলী মুতায়াল্লির ঘরে শুধু ভাংচুরের অভিযোগ থাকলেও লিলু মিয়ার ঘরে ভাংচুরের পাশাপাশি তার ঘরে থাকা নগদ ১ লাখ টাকা লুটপাট করা হয় বলে অভিযোগ করেন তার স্ত্রী রেজিয়া বেগম (৬০)।
তবে মাতায় হেমরেট থাকায় অজ্ঞাতনামা হামলাকারীদের তারা ছিনতে পারেন নি বলে জানিয়েছেন।
স্থানীয় মেম্বার রিয়াজ আলী বলেন, পরিচয় পাওয়া সাথে সাথেই দুই র্যাব সদস্যকে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখেন গ্রামবাসী। এরপর গ্রামের লোকজনের মোবাইলের মাধ্যমেই উনারা বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। শনিবার একদল বহিরাগতের মোটর সাইকেল মহড়ার আতংঙ্ক থেকে এবং প্রথমেই নিজেদর পরিচয় না দেওয়ায় ওই দিন আসলে র্যাব সদস্যদের সাথে দুঃখজনক ঘটনাটি সংগঠিত হয়েছে।
অলংকারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল হোসেন রুহেল বলেন, প্রথমেই নিজেদের পরিচয় না দেওয়ায় দুই র্যাব সদস্যের সাথে যা হয়েছে তা অনাখাঙ্খিত। আমরা এর জন্য লজ্জিত। এসুযোগকে কাজে লাগিয়ে যে বা যাহারা পরবর্তিতে তাদের বসত ঘরে ভাংচুর ও লুটপাঠের করেছে সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে এর সাথে জড়িতদের বের করে আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।
এঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের সত্যতা স্বীকার করেছেন বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) শামীম মুসা। এদিকে বিষয়টির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় এমপি মোকাব্বির খান ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম নুনু মিয়া।
সরকারি কাজে বাঁধা প্রদানের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে জানিয়ে সিলেট র্যাব-৯’র অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্ণেল আবু মুসা মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, ভাংচুর-লুটপাঠের ব্যাপারে আমাদের কিছুই জানা নেই। এখানে ওই ধরনের কোন ঘটনা ঘটে নি। আর সাংবাদিক লাঞ্চিত হওয়ার বিষয়টিও সঠিক নয়।