সোমবার ● ১ জুন ২০২০
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » প্রেমের ফাঁদে ফেলে তিন বন্ধু মিলে তরুণীকে গণধর্ষণ
প্রেমের ফাঁদে ফেলে তিন বন্ধু মিলে তরুণীকে গণধর্ষণ
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: ঈদুল ফিতরের রাতে (২৫ মে) প্রেমের ফাঁদে ফেলে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নের মাহতাবপুর ১৪ বছরের এক কিশোরীকে গণধর্ষণ করার অভিযোগে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
কিশোরীর পিতা বাদী হয়ে ৩ জনের নাম উল্লেখ করে ও আরো ৩ জনকে অজ্ঞাতনামা অভিযুক্ত করে মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলা নং ০১ (তাং ১.০৬.২০২০ইং)।
মামলার অভিযুক্তরা হলেন- উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নের বশিরপুর গ্রামের আশিক মিয়ার পুত্র মিজান মিয়া (২০), একই গ্রামের বারিক মিয়ার পুত্র ইমন আহমদ জসিম (২১) ও আবদুল মিয়ার পুত্র আফিজ মিয়া (২০)।
এদিকে থানায় অভিযোগ দায়েরের পর থেকে স্থানীয় মাতব্বরেরা বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ভিকটিমের পরিবারকে চাপ প্রয়োগ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বাদী তার লিখিত অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন, কিছু দিন পূর্বে ভিকটিম কিশোরীর সাথে অভিযুক্ত মিজানের পরিচয় হয়। সেই সুবাদে মিজানের সাথে মোবাইল ফোনে প্রায়ই কথা হতো গণধর্ষণের শিকার হওয়া কিশোরী। আর সেই সুবাধে ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে ওই (ঈদের দিন) দিবাগত রাত ১২টার দিকে কিশোরীকে ফোন করে দেখা করতে বলে মিজান। তখন সে (কিশোরী) ঘর থেকে বের হলে মিজান ও তার সহযোগী জসিম-আফিজ’সহ আরো ২/৩ জন অজ্ঞাতনামা যুবক তাকে ঝাপটে মুখ চেপে ধরে। এরপর তারা মেয়েটিকে বাড়ির পার্শ্ববর্তি নির্জন স্থানে (সরকারি পুকুরের পাড়ে) নিয়ে যায় এবং জোরপূর্বক নেশা জাতীয় দ্রব্য খাইয়ে তাকে সজ্ঞাহীন করে সারা রাত পালাক্রমে পাশবিক নির্যাতন করা হয়। ভোরে ঘটনাস্থলের পাশ্ববর্তি বাড়ির বাসিন্দা করুনা চন্দ্র মেয়েটিকে রক্তাক্ত ও সজ্ঞাহীন অবস্থায় দেখতে পেয়ে তাকে ডেকে তুলে পরিচয় জানতে পারেন। এসময় তিনি (করুনা) তার ঘর থেকে কাপড় এনে মেয়েটির শরীর ঢেকে তার নিজ বাড়িতে পৌঁছে দেন। বাড়িতে ফেরার পর মেয়েটির কাছ থেকে বিষয়টি পরিবারের লোকজন জানার পর তারা তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করেন। এরপর ভিকটিমের পিতা বাদী হয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করে বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শামীম মুসা বলেন, মামলাটি তদন্ত করবে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি। আর তদন্ত সাপেক্ষে এব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
সন্তানদের নিয়ে বিপাকে প্রবাসীর স্ত্রী
বিশ্বনাথ :: থানায় মামলা করায় অভিযুক্তদের উৎপাতে সিলেটের বিশ্বনাথে দুই সন্তানকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের গোয়াহরি গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী আবদুল করিমের স্ত্রী পপি বেগম (৩২)। করোনা ভাইরাসে থানা পুলিশের কর্মকর্তাসহ ৩৬ জন পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হওয়ার কারণে মামলা দায়েরের দীর্ঘ ২৯ দিনেও মামলার অভিযুক্তরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় আর স্বামী প্রবাসে থাকায় আরও বিপদে পড়তে হচ্ছে দুই সন্তানের ওই জননীকে। যে কারণে দিনে-রাতে প্রবাসীর বাড়িতে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করছে অভিযুক্তরা।
থানায় দায়ের করা মামলা তুলে না নিলে প্রাণনাশের হুমকির পাশাপাশি দিচ্ছে বাড়ি ছাড়ারও হুমকি! শুক্রবার (২৯মে) রাত থেকে তার ঘরের চালে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করছে। রোববার (৩১মে) রাত ১২টার পর থেকে ভোররাত ৩টা পর্যন্ত ইট-পাটকেল নিক্ষেপের কারণে দুই সন্তানকে নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়েছে। এর আগে শনিবার (৩০মে) রাতেও এভাবে তার বসঘরে ইট দিয়ে ঢিলছোঁড়েছে অভিযুক্তরা।
পপি বেগমের অভিযোগ, গত ২মে শনিবার বিশ্বনাথ থানায় মামলা দেওয়ার পর থেকে আসামিরা প্রকাশ্যে তাকে হত্যা ও বাড়ি ছাড়ার হুমকি দিচ্ছে। দিনে রাতে বসত ঘরে বড়বড় ইটের টুকরা ও পাথর দিয়ে ঢিল ছোঁড়ছে। কয়েকদিন ধরে দুই সন্তানকে নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে তাকে। বিষয়টি তিনি থানা পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও জানিয়েছেন। কিন্তু কোন ভাবেই হুমকি ও ঢিলছোঁড়া বন্ধ হচ্ছেনা।
এজাহার সূত্রে জানাগেছে, স্বামী বিদেশে থাকায় পপি বেগম তার দুই মেয়ে ও আপন ছোট ভাই আফসান আহমেদকে নিয়ে স্বামীর গোয়াহরির বাড়িতে বসবাস করছেন। বাড়ির প্রবেশ গেটের ভিতরে তাদের ছোট মোদি-দোকানটি তার ভাই আফসান পরিচালনা করলেও করোনাভাইরাসের কারণে সেটি বন্ধ রাখা হয়েছে। গত ১৯ এপ্রিল দুপুরে জুয়া খেলার জন্য তালাবদ্ধ ওই দোকান ঘর খোলে দিতে বলেন গ্রামের আবু তাহের (২৪), নজরুল ইসলাম (২৮), রাকিব উল্লাহ (২৩), সিরাজুল ইসলাম (২৪), জুবেল আহমদ (২৪) ও কয়ছর আহমদ (২২)। আর দোকান খোলে না দেওয়ায় ওইদিন রাতেই দোকানের প্রায় ৮৫ হাজার টাকার মালামাল চুরি করা হয়। এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ গ্রামের লোকজনের কাছে বিচারপ্রার্থী হলে অভিযুক্তরা তার বাড়িতে গিয়ে প্রকাশ্যে তাকে মারধর করে আহত করার পাশাপাশি শ্লীলতাহানী করেন। ঘটনার ১২ দিন পরও কোন সালিশ বৈঠক না হওয়ায় অবশেষে গত ২ মে তিনি (পপি) ওই ৬ জনের নাম উল্লেখসহ আরও ২/৩ জনকে অজ্ঞাত অভিযুক্ত করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ০২ (তাং ২.০৫.২০ইং)।
এ প্রসঙ্গে গোয়াহরি গ্রামের বাসিন্দা ও দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় ওয়ার্ডের মেম্বার গোলাম হোসেন বলেন, ঘটনার শুরু থেকেই বিষয়টি আপোষে নিস্পত্তির চেষ্টা করেলেও শেষপর্যন্ত তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। আর রাতের বেলা ইট ও পাথর নিক্ষেপ করা ও হুমকির বিষয়টি তাকে জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বিষয়টি ভোক্তভোগী পপি বেগম তাকে জানিয়েছেন মর্মে দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমির আলী এ প্রসঙ্গে বলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি দেখবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) শামীম মুসা বলেন, পপি বেগমের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ফজলুল হক করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ পর্যন্ত থানার ৩৬জন পুলিশ কর্মকর্তা আক্রান্ত। কিন্তু তারপরও বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।
বিশ্বনাথে আরও ৮ পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত
বিশ্বনাথ :: বিশ্বনাথ থানার আরও ৮ পুলিশ সদস্যের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে একজন এএসআই এবং ৭ জন কনস্টেবল। শনিবার (৩০ মে) সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে তাদের রিপোর্ট পজেটিভ আসে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবদুর রহমান।
আক্রান্তরা হচ্ছেন, এএসআই সাইফুর রহমান(৩৪), কনস্টেবল রাজিব (২৫), মাসুদ তালুকদার (২৫), মো. মুন্না (২০), আফজাল হোসেন (২০), সুজিত চন্দ্র দাস (২১), ইছহাক উদ্দিন (২১) ও সাব্বির হোসেন তন্ময় (২১)।
জানা গেছে, গত ১৮ মে তাদের নমুনা পরীক্ষায় রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। পরে ২৮ মে আবার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হলে শনিবার তাদের রিপোর্ট পজেটিভ আসে। এদিকে নতুন ৮ জন নিয়ে বিশ্বনাথে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪ জন। এরমধ্যে ৩৬ জনই পুলিশ সদস্য।