সোমবার ● ৬ জুলাই ২০২০
প্রথম পাতা » সকল বিভাগ » নগরীর মা ও শিশু হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় সাংবাদিক পুত্রের মৃত্যু
নগরীর মা ও শিশু হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় সাংবাদিক পুত্রের মৃত্যু
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: সিলেট নগরের সোবহানীঘাট এলাকার মা ও শিশু হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও গলাকাটা বিল আদায়সহ রয়েছে গুরুতর নানা অভিযোগ। এরই মাঝে খবর পাওয়া গেলো- এ হাসপাতালে ‘ভুল চিকিৎসায়’ মারা গেছে একজন সাংবাদিকের ৩ মাস বয়েসি শিশুপুত্র। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে মা-বাবা এখন দিশেহারা- শোকে পাথর।
জানা গেছে, সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চি ইউনিয়নের তেলিকোনা গ্রামের বাসিন্দা ও বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবের সদস্য নূর উদ্দিনের ৩ মাস বয়েসি ছেলে রিফাতের জন্মের পর পায়খানার রাস্তায় সমস্যা দেখা দেয়। এমতাবস্থায় কিছুদিন আগে নূর উদ্দিন তার ছেলেকে সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক শিশুসার্জন ডা. শামসুর রহমান ময়নার শরণাপন্ন হন। ডা. শামসুর রহমান রিফাতের অপারেশন প্রয়োজন জানিয়ে সিলেট নগরের সোবহানীঘাটস্থ মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি হতে পরামর্শ দেন। তাঁর পরামর্শমতেই গতকাল রোববার বেলা আড়াইটার দিকে নূর উদ্দিন ছেলে রিফাতকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করান।
রাত ৯টার দিকে রিফাতের অপারেশন করবেন বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ডা. শামসুদ্দিন ফোনে জানান এবং সবকিছু প্রস্তুত করতে বলেন। রাত ৯টার সময় অপারেশন করার কথা থাকলেও তিনি আসেন রাত সাড়ে ১০টার দিকে। দেড় ঘণ্টাব্যাপী অপারেশন শেষে হসপিটালের আয়ার মাধ্যমে নূর উদ্দিনকে লম্বা রগের মতো একটি বস্তু দেখানো হয় এবং তাকে জানানো হয়- রিফাতের পেট থেকে ওই জিনিসটি বের করা হয়েছে।
তখন নূর উদ্দিনের মনে সন্দেহের উদ্রেগ হয়। কারণ- তার এক মেয়েরও ওই সমস্যা ছিলো এবং তারও অপারেশন প্রয়োজন হয়। কিন্তু মেয়ের অপারেশনের সময় এমন কিছু ঘটেনি।
পরবর্তীতে রিফাতকে পোস্ট অপারেটিভ রুমে রাখা হয় এবং রাত দেড়টার দিকে নূর উদ্দিনকে না জানিয়ে শিশুকে আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) নিয়ে যাওয়া হয়। বিষয়টি জানতে পেরে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যান নূর উদ্দিন। ওই সময় কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে বলেন, আপনার ছেলের অবস্থা খারাপ হওয়ায় আমরা আপনাকে না জানিয়েই আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এসময় ডা. শামসুদ্দিনকে কল করার কথা বললে নূর উদ্দিনকে তারা জানান, তিনি আসতে পারবেন না। তবে তাঁর পরামর্শমতেই সব করা হয়েছে। পরে রিফাতের অবস্থা আরো খারাপ হয় এবং আজ (সোমবার) সকালে তাকে মৃত ঘোষণা করেন হাসপাতালের ডাক্তাররা।
রিফাতের পিতা নূর উদ্দিন কেঁদে কেঁদে এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি নিশ্চিত- আমার একমাত্র ছেলেটা ভুল চিকিৎসায় মারা গেছে। আমি বার বার ডা. শামসুদ্দিনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি, কিন্তু তিনি আমার সঙ্গে কথা বলেননি। এই হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে আমার ছেলেকে নিয়ে গিয়ে কী করা হয়েছে আমি জানি না। তবে রাতে আমার ছেলেকে যখন আইসিইউ-তে দেখি- তখনই আমার ছেলেকে কেমন যেন দেখা যাচ্ছিলো। আমার মনে হয়- তখনই রিফাত আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।
নূর উদ্দিন আরও বলেন, ডা. শামসুদ্দিনের কথাতেই আমরা মা ও শিশু হাসাপাতালে রিফাতকে নিয়ে এসেছিলাম। তা না হলে আমরা তাকে অন্যত্র ভর্তি করাতাম। এখানে ডাক্তার-নার্স এমনকি মাসির সঙ্গেও ঠিকমতো কথা বলা যায় না। রোগীর স্বজনদের সঙ্গে খুব বাজে আচরণ করেন তারা।
এ বিষয়ে মা ও শিশু হাসাপাতালের অ্যাডমিন ম্যানেজার মুরশেদুর রহমান বলেন, ওই শিশুর অপারেশন আমাদের ওখানে হয়েছে এবং শিশুটি মারা গেছে ঠিকই। তবে শিশুর পিতা আবেগাপ্লুত হয়ে আমাদের প্রতি ভুল চিকিৎসার অভিযোগ এনেছেন। তার ছেলের খাদ্যনালী ও পায়খানার রাস্তায় সমস্যা ছিলো। অপারেশন শেষে শিশুর নিউমোনিয়া বেড়ে যায়, যে সমস্যা ওই শিশুর আগে থেকেই ছিলো। এমতাবস্থায় আমরা শিশুকে আইসিইউতে নেই এবং তার চাচার সঙ্গে কথা বলেই নিয়েছি। ওই সময় শিশুর পিতা ওখানে উপস্থিত ছিলেন না তাই তাকে জানানো যায়নি। কিন্তু শিশুর অবস্থার উন্নতি হয়নি তাই সে মারা যায়।
মুরশেদুর রহমান বলেন, প্রয়োজনে যে কোনো মেডিকেল বোর্ড বসিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখা যেতে পারে। তবে আমাদের চিকিৎসায় কোনো ভুল নেই।
তিনি আরও বলেন, আমরা কিন্তু আজ বিলের টাকা নেইনি। বলেছি- আপনাদের শিশুর দাফন-কাফন শেষে আপনাদের সুবিধামতো সময়ে এসে বিলের টাকা দেবেন। এই ‘মানবতাটুকু’ আমারা তাদের দিয়েছি।
এ বিষয়ে জানতে ডা. শামসুর রহমান ময়নার মোবাইল ফোন নাম্বারে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।
বিশ্বনাথে যৌতুকের বলি গৃহবধু ফাতেমা
বিশ্বনাথ :: সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় গৃহবধু ফাতেমার মৃত্যু নিয়ে নানা রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। শশুর বাড়ির লোকজনের দাবী সে আত্মহত্যা করেছে। অন্যদিকে তার বাবার বাড়ির লোকজন বলছেন, যৌতুকের জন্যেই তাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজানো হয়েছে। এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে তার লাশ গ্রামের বাড়ি নিয়ে গেলে সেখানে তাকে দাফন করতে দেয়নি গ্রামবাসি। গ্রাম পঞ্চায়েতর বাঁধার মুখে সিলেট মানিকপীর টিলায় তাকে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় উপজেলা জুড়ে মিশ্রপ্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
ফাতেমা উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের শেখেরগাঁও গ্রামের জামিল আহমদের স্ত্রী। গেল ২ জুলাই দুপুরে বসতঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় তার নিথর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ময়নাতদন্ত শেষে পরদিন ৩ জুলাই শুক্রবার তার লাশ গ্রামে নিয়ে গেলে দাফনে আপত্তি জানায় গ্রামবাসি। তাদের বাঁধার মুখে ওইদিন রাত ৮টায় সিলেট মানিকপীর টিলায় তাকে দাফন করা হয়।
ফাতেমার স্বামীর দাবী, গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে সে। কি কারণে এমনটি করলো তা জানেন না তিনি।
ফাতেমার বড় ভাই রুবেল আহমদের অভিযোগ, যৌতুক লোভী ওই পরিবার পরিকল্পিত ভাবে আমার বোনকে হত্যা করে আত্মহত্যার মঞ্চস্থ করেছে। আমি তাদের অভিযুক্ত করে থানায় লিখিত দিয়েছি। আমরা এ হত্যাকান্ডের বিচার চাই।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে জামিলের সাথে বিয়ে হয় রামপাশা ইউনিয়নের আনরপুর গ্রামের ইলিয়াস আলীর মেয়ে ফাতেমার। বিয়ের পর থেকে কলহ লেগেই ছিল তাদের সংসারে। একাধিক বার এনিয়ে সালিশ বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। ফাতেমার স্বামীর পরিবার যৌতুকের জন্যই তাকে নির্যাতন করতো। এক পর্যায়ে ফাতেমার শশুর তাকে অনৈতিক প্রস্তাব দিলে সে আর ওই সংসারে থাকতে অপারগতা প্রকাশ করে। সালিশ বৈঠকে সে বিষয়টি উপস্থাপন করলে বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন মুরুব্বিরা। কিন্তু বৈঠকের পর কৌশলে জামিল তার স্ত্রী ফাতেমাকে ফুসলিয়ে নিজের বাড়ি নিয়ে যায়। এর কিছুদিন পরই এ ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে কথা হলে বিশ্বনাথ পুলিশ স্টেশনের অফিসার ইন-চার্জ শামীম মুসা বলেন, গৃহবধু ফাতেমার পরিবার একটি অভিযোগ দিয়েছেন। এ নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তে হত্যার সত্যতা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিশ্বনাথে আরও ৬ জনের করোনা পজেটিভ
বিশ্বনাথ :: সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় বেড়েই চলেছে করোনা রোগীর সংখ্যা। আক্রান্তের তালিকায় প্রতিদিন নতুন করে যুক্ত হচ্ছে নানা বয়সি বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের নাম। গেল রোববার রাতে কোভিড-১৯ পজেটিভ রিপোর্ট এসেছে আরও ৬ জনের। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা, সদরের এক ব্যাংক কর্মকর্তা, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের কর্মকর্তা, এক স্বাস্থ্যকর্মী, খাজাঞ্চি ইউনিয়নের বাকপ্রতিবন্ধি এক বৃদ্ধা ও সদরের রাজনগর রোডের ৫৭ বছর বয়সি এক বৃদ্ধ। উপসর্গ নিয়ে সকলেই গেল ৪ জুলাই নমুনা পরীক্ষায় দিয়ে ছিলেন। এ নিয়ে উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ১১০ জনে। এদের মধ্যে সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন ৭৩ জন। প্রাণ হারিয়েছেন নারী ও শিশুসহ ৩ জন।
সোমবার সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবদুর রহমান মুসা বলেন, করোনা পজেটিভ নতুন আরও ৬ জনের রিপোর্ট আমরা পেয়েছি। সংক্রমণ প্রতিরোধে সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে। মেনে চলতে হবে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব।
বিশ্বনাথ প্রেস ক্লাব সদস্য অসিত রঞ্জন দেব করোনামুক্ত
বিশ্বনাথ :: দৈনিক সিলেট বাণী’র বিশ্বনাথ প্রতিনিধি ও বিশ্বনাথ প্রেস ক্লাব সদস্য অসিত রঞ্জন দেব তাঁর স্ত্রী-সন্তানসহ করোনামুক্ত হয়েছেন। দীর্ঘদিন নিজ বাসায় হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকে ও ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসা নিয়ে তারা সুস্থ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। অসিত রঞ্জন দেব বলেন, ডাক্তারদের দেয়া সব পরামর্শ মেনে ও নিয়মিত ঔষধ খেয়ে আমরা ভাল হয়েছি। পাশাপাশি মানসিক শক্তি ছিল সবচেয়ে বেশী। তিনি অসুস্থকালীণ সময়ে সব শ্রেণী পেশার মানুষের সহযোগিতা পেয়েছেন এর জন্য তিনি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন এবং সবার দোয়া কামনা করেছেন। বিশ্বনাথ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুর রহমান মুসা বলেন, অসিত রঞ্জন দেবসহ তাঁর স্ত্রী-সন্তান এখন পুরোপুরি সুস্থ। তিনি ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে ছিলেন এবং আমাদের পরামর্শ মেনে ও নিয়মিত ঔষধ সেবন করে ভাল হয়েছে তার পরিবার।
ভুল চিকিৎসায় সাংবাদিক নূর উদ্দিনের পুত্রের মৃত্যুতে প্রেস ক্লাবের শোক, নিন্দা
বিশ্বনাথ :: সিলেট নগরীর সোবহানীঘাট এলাকাস্থ ‘মা ও শিশু হাসপাতালে’ ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেছেন বিশ্বনাথ প্রেস ক্লাবের সদস্য, দৈনিক বাংলাদেশ সময় পত্রিকার বিশ্বনাথ প্রতিনিধি ও উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের তেলিকোনা গ্রামের বাসিন্দা নূর উদ্দিনের তিনমাস বয়সী একমাত্র পুত্র রিফাত। এঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্বনাথ প্রেস ক্লাব নেতৃবৃন্দ।
দ্রুত একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ভুল চিকিৎসায় সাংবাদিক পুত্র রিফাতের মৃত্যুর ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনসহ সরকারের কাছে জোর দাবী জানিয়েছেন বিশ্বনাথ প্রেস ক্লাব নেতৃবৃন্দ। নেতৃবৃন্দ বলেন, মানুষ সুস্থ থাকার জন্যই চিকিৎসা সেবা নিতেই ডাক্তার কাছে বা হাসপাতালে যান। আর এসুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু স্বাস্থ্য সেবায় থাকা কিছু মানুষ নামের অমানুষ ‘যমরাজ’ বা ‘কসাই’-এর ভূমিকা পালন করে। এতে করে মানুষ চিকিৎসা সেবা না পেয়ে কিংবা ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেন। এসব অপকর্ম দ্রুত বন্ধ করার জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন প্রেস ক্লাব নেতৃবৃন্দ।
শোক প্রকাশ ও তীব্র নিন্দা জ্ঞাপনকারীরা হলেন বিশ্বনাথ প্রেস ক্লাবের সভাপতি কাজী মুহাম্মদ জামাল উদ্দিন, সহ সভাপতি তজম্মুল আলী রাজু, সাধারণ সম্পাদক প্রনঞ্জয় বৈদ্য অপু, যুগ্ম সম্পাদক এমদাদুর রহমান মিলাদ, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী শিপন, কার্যনির্বাহী সদস্য মিজানুর রহমান মিজান, রফিকুল ইসলাম জুবায়ের, সদস্য মাওলানা শহিদুর রহমান, অসিত রঞ্জন দেব, জামাল মিয়া, আবুল কাশেম।