রবিবার ● ১২ জুলাই ২০২০
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » যে কোন সময় ঝিনাইদহে করোনা নিয়ন্ত্রনে এলাকা ভিত্তিক লকডাউন ঘোষনা
যে কোন সময় ঝিনাইদহে করোনা নিয়ন্ত্রনে এলাকা ভিত্তিক লকডাউন ঘোষনা
মো. জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রনে যে কোন সময় জেলা শহরে এলাকাভিত্তিক লকডাউন ঘোষনা করা হবে। এর জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। আজ শনিবার সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে চলমান ত্রাণ কার্যক্রম সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা সংক্রান্ত পর্যালোচনা সভায় উপস্থিত নেতৃবৃন্দ এ সব কথা বলেন। সিনিয়র সচিব পরিকল্পনা বিভাগ ও সমন্বয়ক ঝিনাইদহ জেলা মো: আসাদুল ইসলাম ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন। আলোচনায় অংশ নেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের (কালীগঞ্জ উপজেলা) সংসদ সদস্য মো: আনোয়ারুল আজীম আনার, সেনা কর্মকর্তা ল্যা ঃ কর্ণেল নাসির উদ্দিন, পুলিশ সুপার মো: হাসানুজ্জামান পিপিএম, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কনক কান্তি দাস, সদর পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু, ইসলামী ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক আব্দুল হামিদ খান, সাংবাদিক নেতা ও ঝিনাইদহ জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মিজানুর রহমানসহ অনেকে। এসময় ৬ উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। এসভায় জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ বলেছেন, পৌরসভার মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বর, কাউন্সিলর, জেলা পরিষদের মেম্বরসহ জনপ্রতিনিধিদের কর্মকান্ড নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যেসব কৃষক সুযোগ পাওয়ার পরেও আজো সরকারি খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করেননি তাদের কার্ড বাতিল করা হবে। সেই সাথে যত্রতত্র পশু হাট বসতে দেওয়া হবেনা। এসব বিষয়ে জনসাধারণকে সচেতন করতে জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আহবান জানান তিনি। সভায় সিভিল সার্জন ডা; সেলিনা বেগম বলেন, প্রতিদিন মৃত্যু ও সংক্রমণের হার বড়ছে। আসন্ন কোরবানীর ঈদ এবং পশু কেনা বেচার সময় সংক্রমণ আরো বাড়বে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন তিনি। এ জেলায় এখন পর্যন্ত ২৮২৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৯০ জনের নমুনায় করোনা ভাইরাস সনাক্ত হয়েছে এবং মৃত্যু বরণ করেছেন অন্তত ৭জন। এ অবস্থায় কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহনের উপর জোর দেন তিনি। সদর পৌরসভার মেয়র তার বক্তব্যে বলেন, জেলা শহরের বেশ কয়েকটি মহল্লায় আক্রান্তের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। ওই সব এলাকায় শিগগিরি লকডাউন ঘোষনা করা হবে। সভার সভাপতি সিনিয়র সচিব পরিকল্পনা বিভাগ বলেন, এখন পর্যন্ত ঝিনাইদহে গৃহীত কার্যক্রম শন্তষজনক বলে মন্তব্য করেন। ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
শৈলকুপায় একই পরিবারের ৯ জনের আত্মহত্যা
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহের শৈলকুপায় স্বামী স্ত্রীর একসঙ্গে বিষপান করার ঘটনা ঘটেছে। এঘটনায় স্বামী সাইফুল ইসলাম (৬৫) এর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (১০ জুলাই) রাত ১২টার দিকে পৌর এলাকার বালিডাঙ্গা গ্রামে এঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার ছাচিলাপুর গ্রামের মৃত মইজদ্দি শেখের ছেলে। তিনি পেশায় একজন ভ্যানচালক ও বালিডাঙা গ্রামের মৃত আইন মন্ডলের জামাই। নিহতের মেয়ে মেরিনা খাতুন জানান, মায়ের সাথে পারিবারিক কলহ নিয়ে বাবার ঝগড়া হয়। এরই সুত্র ধরে রাত আনুমানিক রাত ১২টার দিকে বাবা আগে বিষপান করে। পরে বাবার দেখাদেখি মা’ও অভিমান করে বিষপান করে। তাদেরকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে শৈলকুপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে বিষমুক্ত করা অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। অপরদিকে স্ত্রী লাইলী বেগম হাসপাতালে ভর্তি আছেন। শৈলকুপা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, স্বামী-স্ত্রীর একসঙ্গে বিষপান করার ঘটনায় স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। এদিকে ঐ পরিবারের আরো কয়েকজন আত্মহত্যার চেষ্টা করেও বেঁচে আছেন। বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের আইন উদ্দীন মন্ডল, কিয়ামুদ্দিন মন্ডল ও খয়বর মন্ডল তিন ভাই। একই বাড়িতে তাদের বসবাস। বছর বিশেক আগে কিয়ামুদ্দিন মন্ডল এর স্ত্রী আত্মহত্যা করেন। একই সময়ে আইন উদ্দীণ মন্ডল এর মেয়ে ফরিদা গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যার পথ বেঁছে নেয়। কয়েক বছর আগে কিয়ামুদ্দিন এর ছোট ছেলে আয়ুব আলীর স্ত্রী সাহেরা খাতুন আত্মহত্যা করে। এরপর আয়ুব আলী সাহেরা খাতুনের ছোটবোন সোনিয়াকে বিয়ে করেন। বিয়ের কয়েক বছরের মধ্যে সোনিয়া আত্মহত্যার পথ বেঁছে নেয়। অল্প কিছুদিন পর আইন উদ্দীন মন্ডলের ছোট মেয়ে মোমেনা আত্মহত্যা করে। কিছুদিন না যেতেই আইন উদ্দীন এর বড় মেয়ে ভুরভুরি আত্মহত্যা করে। কিছুদিনের ব্যবধানে ভুরভুরির ছেলে চঞ্চলও আত্মহত্যা করে। একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে কিয়ামুদ্দিন মন্ডল বেঁচে গেলেও বছর পাঁচেক আগে ২৭ আগস্ট ২০১৫ গলায় রশি দিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে আইন উদ্দীন মন্ডল এর সেজো মেয়ের জামাই সাইফুল ইসলাম পারিবারিক কলহে বিষপান করে। তার দেখাদেখি অভিমানে তার স্ত্রী সাজু ওরফে লাইলী বিষপান করে। ঘরজামাই সাইফুল মারা গেলেও এ যাত্রায় লাইলী প্রাণে বেঁচে যায়।
ঝিনাইদহ জেলা কালচারাল অফিসারের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহ জেলা কালচারাল অফিসার জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও নীতি বর্হিভূত কাজ করা অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে ফুঁসে উঠেছে জেলার সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নেতৃবৃন্দ। সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দদের উপেক্ষা করে নিজের ইচ্ছামত কাজ করছেন তিনি বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলার একাধিক সাংস্কৃতিক কর্মী অভিযোগ করেছেন, জেলা কালচারাল অফিসার বিগত ৬ বছর ঝিনাইদহে কর্মরত আছেন। এক স্থানে দীর্ঘদিন থাকার সুযোগে নানা অনিয়মও করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাংস্কৃতিক কর্মী অভিযোগ করেন, গত মঙ্গলবার সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে করোনার কারণে অস্বচ্ছল ঝিনাইদহে ১’শ সাংস্কৃতিক কর্মীদের ৫ হাজার টাকা করে অনুদান প্রদাণ করা হয়। এই অনুদানে স্বচ্ছল ও পাওয়ার অযোগ্যদের তালিকাভুক্ত করেছেন কালচারাল অফিসার জসিম উদ্দিন। নিজের ইচ্ছামত পোষ্য কয়েকজন ও তার পছন্দের লোকদের এ তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করেছেন তিনি। যে কারণে ঝিনাইদহের প্রকৃত অস্বচ্ছল সাংস্কৃতিক কর্মীরা সরকারের এই সহযোগিতা পাননি। বঞ্চিত সাংস্কৃতিক কর্মী বিপ্লব বিশ্বাস অভিযোগ করে বলেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যন্ত্র বাজিয়ে আমার সংসার চলে। করোনার কারণে অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় এখন সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। আর্থিক সহযোগিতার জন্য কালচারাল অফিসারকে বললে তিনি তালিকায় নাম না দিয়ে উল্টো আমাকে বলেছেন, আমি নাকি শিল্পী না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো এক শিল্পী বলেন, অনেক স্বচ্ছল শিল্পী আছেন, যাদের ঢাকায় ফ্লাট আছে, ঝিনাইদহে বাড়ি আছে। প্রতি মাসে তাদের হাজার হাজার টাকা আয়। তাদের এই তালিকায় নাম দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের মত অনেক শিল্পী এই সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এদিকে বিভিন্ন সময় শিল্পকলা একাডেমীতে আয়োজিত অনুষ্ঠান ও কর্মসূচী সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের জানানো হয় না বলেও অভিযোগ উঠেছে। জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তার লাল্টু বলেন, সাংস্কৃতিক কর্মীদের সহযোগিতার ব্যাপারে আমাকে কিছু জানানো হয়নি। যারা পাওয়ার যোগ্য তারা বঞ্চিত হয়েছে। ঝিনাইদহ ঝংকার শিল্পী গোষ্টির প্রতিষ্ঠাতা শান্ত জোয়ার্দ্দার বলেন, কালচারাল অফিসার এখানে চাকুরি করে। কে স্বচ্ছল, কে অস্বচ্ছল সে কিভাবে জানবে। তার উচিত ছিল সাংস্কৃতিক সংগঠনের যারা নেতৃত্ব দেয় তাদের সাথে কথা বলে তালিকা তৈরী করা। কিন্তু তা না করে জসিম উদ্দিন নিজের পরিচিত লোক, যারা তাকে তেল দিয়ে চলেন তাদের নাম অর্ন্তভূক্ত করেছেন। এর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সদস্য একরামুলক লিকু বলেন, ১’শ জনের মধ্যে ৫০ জনের তালিকার বিষয়টি আমি জানি, কিন্তু বাকি ৫০ জনের তালিকা কিভাবে হয়েছে সেটা আমি জানি না। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রনালয় থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে জেলার ৮৯ জন সংস্কৃতিসেবীদের মাসিক কল্যাণ ভাতা প্রদাণ করা হয়। এ তালিকাভুক্ত ১০ জন গত মঙ্গলবার দেওয়া বিশেষ অনুদানও পেয়েছেন। তাছাড়াও সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত, ছাত্র, সাংস্কৃতিক কর্মী না এমন লোককে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা কালচারাল অফিসার জসিম উদ্দিন বলেন, ৫০ জনের তালিকা জেলা শিল্পকলা একাডেমীর এডহক কমিটির মাধ্যমে করা হয়েছে। বাকি ৫০ জনের তালিকা বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী থেকে পাঠানো হয়েছে। তালিকার মধ্যে স্বচ্ছল ব্যক্তিদের নাম কিভাবে আসলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে যেভাবে তালিকা দিয়েছে আমি সেভাবেই করেছি। এর বেশি আমি কিছু বলতে পারব না। তবে আমি সঠিক ভাবেই কাজটি করেছি।