রবিবার ● ১৯ জুলাই ২০২০
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » আমাগের ঘরডা যদি কেও ভাল করে দিত
আমাগের ঘরডা যদি কেও ভাল করে দিত
মো. জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: ঝিনাইদহ সদর উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামে জঙ্গলে ঘেরা খালের ধারে নড়বড়ে বাড়িতে ৭ সন্তান নিয়ে বসবাস হতদরিদ্র রাবেয়া খাতুনের। বাড়িতে প্রবেশের রাস্তা নেই। নেই বাড়িতে বিদ্যুৎ সযোগ। অনিরাপত্তায় বসবাস। একে একে ছয় মেয়ে সন্তানের পর এক ছেলে সন্তান যেন এই দুঃখি পরিবারের সব কষ্ট ভুলিয়ে দিয়েছে। এই পরিবারের বসবাস। স্বামী শামসুল ইসলামের কিছুই নেই। পিতার দেওয়া ভিটেবাড়িতে ৭ সন্তান নিয়ে থাকেন রাবেয়া খাতুন। অতি কষ্টের সংসার তার। প্রায় দিন ঘরে খাবার থাকে না। ৭ সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে হিমশিম খান দিনমজুর শামসুল। সকালে কাধে গামছা, হাতে দা নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে নারকেল গাছ সাফ করেন। কোন দিন কাজ হয় আবার কোন দিন হয় না। এদিকে স্ত্রী রাবেয়া খাতুন পিতার বাড়িতেই বাচ্চাকাচ্চা সামলান। কখনো সন্তানের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দিতে পরের বাড়িতে ঝি এর কাজ করেন। রাবেয়া খাতুন জানান, আগে লক্ষিপুর আবাসন প্রকল্পের ঘরে বসবাস করতেন। এখন আর করেন না। এদিকে আম্ফান ঝড়ে তাদের বসবাস করার একমাত্র ঘরটি ভেঙ্গে গেছে। সন্তান নিয়ে নিজ ঘরে বসবাস আর বেঁচে থাকার লড়াই করতে করতে পরিবারটি এখন ক্লান্ত। তাদের দূরাবস্থার জানতে পেরে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গান্না ইউনিয়ন বিচিত্রা রাবেয়ার দুগ্ধপোষ্য শিশুকে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও খাবার পৌছে দিয়েছে। তবে এই সহায়তা পরিবারটির জন্য খবুই অপ্রতুল। বেঁচে থাকার জন্য তাদের সরকারী সহায়তা প্রয়োজন। রাবেয়া খাতুন জানান, “আমাগের ঘরডা যদি কেও ভাল করে দিত, আর কিছু নগদ টাকা পাইতাম তবে ৭ সন্তান নিয়ে বাঁচতে পারতাম। এ ব্যাপারে গান্না ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাছির উদ্দীন মালিথা জানান, এমন পরিবারের খোঁজ আমাকে কেও দেয়নি। কারণ আমি গান্না ইউনিয়নের প্রতিটি অসহায় দুস্থ পরিবারকে সরকারী কার্ড করে দিয়েছি। তিনি পরিবারটি খুজে বের করে আর্থিক সহায়তা করবেন বলে জানান।
মহেশপুর বিআরডিবি অফিসে কর্মরত যুবকের করোনায় মৃত্যু
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বিআরডিবি’র ফিল্ড অর্গানাইজার আলাউদ্দীন (৩০)। তিনি কোটচাঁদপুর উপজেলার কুশনা ইউনিয়নের মামুনশিয়া গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে। আলাউদ্দীন মহেশপুর বিআরডিবি অফিসে এলআরপি প্রকল্পের ফিল্ড অর্গানাইজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এই নিয়ে ঝিনাইদহে করোনায় ১২ ব্যক্তির মৃত্যু হলো। ঝিনাইদহ ইসলামিক ফাউন্ডেশন ঝিনাইদহ উপপরিচালক মো: আব্দুল হামিদ খান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, করোনা উপসর্গ নিয়ে গত ১৫ জুলাই আলাউদ্দীন ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ছিলেন। তার করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে শনিবার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার আগেই শনিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ইন্তিকাল করেন। ঝিনাইদহ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক মো: আব্দুল হামিদ খানের তত্ত্বাবধানে কোর্টচাদপুর উপজেলার ফিল্ড সুপারভাইজার মো: আসাদউল্লাহর নেতৃত্বে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ঝিনাইদহ দাফন কমিটির সদস্যগণ ঝিনাইদহ হাসপাতাল থেকে মৃতের লাশ গ্রহণ করেন এবং গ্রামের বাড়ীতে নিয়ে জানাযা শেষে শনিবার দুপুরে পারিবারিক গোরস্থানে আলাউদ্দীনের লাশ দাফন করেন। এই নিয়ে ঝিনাইদহ ইসলামী ফাউন্ডেশনের লাশ দাফন কমিটি এ পর্যন্ত ২৬টি লাশ দাফন করেছে।
করোনা মহামারির দাপটেও বদলায়নি ঝিনাইদহের মানুষ
ঝিনাইদহ :: করোনা নিয়ে মানুষের মাঝে বিন্দু মাত্র কোন মৃত্যু ভয় নেই। পরিবেশ দেখে বোঝার উপায় নেই ঝিনাইদহের উপর দিয়ে করোনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সরকারী বেসরকারী প্রচার প্রচারণায় মানুষ বদলায়নি। নির্বিঘেœ ঘুরছে শহরে। আড্ডা দিচ্ছে চায়ের দোকানে। হাটে বাজারে উপচে পড়া ভীড়। কোথাও কোন সাাজিক দুরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে না। সব খানেই হ-য-ব-র-ল দশা। এদিকে ঝিনাইদহবাসীর সামনেই ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনা ভাইরাসে। ঝিনাইদহের অনেক মানুষ ঢাকাসহ বিভিন্ন হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। সব মিলিয়ে ঝিনাইদহের ১৭/১৮ জন মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এ পর্যন্ত করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত ঝিনাইদহ ইসলামী ফাউন্ডেশন ২৫ জনের লাশ দাফন করেছেন। প্রতিদিন ৩০/৪০ জন করে আক্রান্ত হচ্ছে। দিনকে দিন শহর থেকে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে এই মরণঘাতি ভাইরাস। জেলা প্রশাসন, পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনী মানুষকে ঘরে থাকার জন্য নতুন নতুন কৌশল ও পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু তাদের সব কিছুই যেন বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরোর মতো। মানুষ কারো কথাই শুনছে না। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে বাইরে বেরিয়ে ভীড় জমাচ্ছে। এদিকে ঝিনাইদহে নতুন করে ৩৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ঝিনাইদহ সদর থানায় ২২ জন, কালীগঞ্জে ৬, কোটচাঁদপুরে ৪ ও শৈলকুপা এবং হরিণাকুন্ডুতে একজন করে আক্রান্ত হয়েছেন। এই নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৬২১ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ১৯৮ জন। সুস্থ হওয়ার চেয়ে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি। নতুন করে আক্রান্ত এলাকা হচ্ছে ঝিনাইদহ শহরের উপশহরপাড়া, আরাপপুর, হামদহ, পাগলাকানাই, নিত্যানন্দপুর, পার্কপাড়া, ক্লিক মোড়, সিদ্দিকীয়া সড়ক, ব্যাপারীপাড়া শাপলা চত্বর, বাঘাযতিন সড়ক, সার্কিট হাউস, পুলিশ লাইনস ও পবহাটী। কালীগঞ্জের সুন্দরপুর, আড়পাড়া, কলেজপাড়া, ফয়লা ও উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র। শৈলকুপার ত্রীবেনি, হরিণাকুন্ডুর সড়াবাড়িয়া ও চাঁদপুর, কোটচাঁদপুরের মামুনশিয়া, তালসার, ভবানীপুর ও উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র। ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ও মূখপাত্র করোনা সেল ডাঃ প্রসেনজিৎ বিশ্বাস পার্থ তার ফেসবুক পেইজে করোনা আক্রান্ত ও মৃত ব্যক্তির তথ্য দিয়েছেন।
ঘাপলা কাজ বন্ধ করে দিলেন ইউএনও,গায়ের জোরে করছেন ঠিকাদার
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহের ডাকবাংলাবাজার ত্রীমোহনী থেকে কালীগঞ্জ পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার সড়ক ও ২১২ মিটার আর,সি,সি পাকা ড্রেন নির্মাণে চরম অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নি¤œমানের কাজের খবর পেয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বদরুদোজা শুভ রাস্তা ও ড্রেনের নির্মান কাজ বন্ধ করে দেন। কিন্তু একদিন না যেতেই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেষ অমান্য করে সেই কাজ শুরু করেছে ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ বিভাগ ও ঠিকাদার। এ নিয়ে এলাকায় চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। খবরের সত্যতা নিশ্বিচত করে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শুভ জানান, সরোজমিন পরির্দশনে দেখেছি অত্যান্ত নিন্মমানের রড, পাথর, বালি সিমেন্ট ব্যবহার করে সড়কটির পাশে ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে আমি ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউল হায়দারের মোবাইল ফোন করে বিষয়টি জানালে তিনি আমাকে সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর সাথে কথা বলতে বলেন। ইউএনও বলেন, আমি তাৎক্ষনিক ভাবে নির্মান কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। ইউএনও অবিযোগ করেন, আমার নির্দেষ অমান্য করে সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মুকুল জ্যতি বসু ও ঠিকাদার মিলে আবারো নিন্মমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ শুরু করেছেন। এদিকে ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মুকুল জ্যতি বসু অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সিডিউল মোতাবেক নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, পিএমপি প্রকল্পের অধিন ঝিনাইদহের ডাকবাংলাবাজার-কালীগঞ্জ সড়কের ২৩ কিলোমিটার মজবুতি করণসহ ওয়ারিং কোর্সের কাজ চলছে। খুলনার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লিমিটেড কাজটির প্রকৃত ঠিকাদার। তবে কাজটি করছেন ঝিনাইদহের ঠিকাদার মিজানুর রহমান মাসুম। এ সড়কটির নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ কোটি টাকার উপরে। তিনি বলেন সড়কের পানি নিস্কাশনের জন্য ডাকবাংলা বাজার এলাকায় ২১২ মিটার আরসিসি পাকা ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। এ কাজের জন্য আলাদা ভাবে প্রায় ২৯ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। ড্রেনটি নিমার্ণ কাজের জন্য আমিনুল হক এন্টার প্রাইজ নামের অপর এক ঠিকাদারকে নিয়োগ করা হয়েছে। উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মুকুল জ্যতি বসু জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজ বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তবে তার দাবি সড়কের পাশে স্তুপ করে রাখা নিন্মমানের পাথরসহ নির্মাণ সামগ্রী আগে থেকেই বাতিল ঘোষনা করা হয়েছে। ডাকবাংলা বাজারের মানুষ অভিযোগ করেছেন, ডাকবাংলা ত্রীমোহনি থেকে কালীগঞ্জ সড়ক নির্মানের সময় ট্রাকটর দিয়ে রাস্তায় চাষ করা হয়েছে। সড়কে ব্যবহার করা হচ্ছে নিন্মমানের রাবিস ইটের খোয়াসহ ধুলা-বালি। গত ( ২০১৯-২০) অর্থ বছরে কাজটি শুরু করা হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায় ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের ওর্য়াক চার্জ (অস্থায়ী) হিসেবে এক কর্মচারীকে দিয়ে এসও এর কাজ করানো হচ্ছে। এ কারণে সড়ক বিভাগের প্রায় সব কাজ দুই নাম্বারী ভাবে করা হচ্ছে।