মঙ্গলবার ● ২৮ জুলাই ২০২০
প্রথম পাতা » অপরাধ » নিখোঁজ ধর্ষণ মামলার আসামী বাদশা
নিখোঁজ ধর্ষণ মামলার আসামী বাদশা
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: থানায় ধর্ষণ মামলা দায়েরের পর নিখোঁজ রয়েছেন সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের টেংরা বাঘমারা গ্রামের মৃত রিফাত উল্লাহর পুত্র আছলাম উদ্দিন ওরফে বাদশা মিয়া (১৬) নামের কিশোর ৫ মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করার জন্য ৫ মাস ধরে খোঁজলেও পরিবারের সদস্যরাও জানেন না নিখোঁজ বাদশা কোথায় আছেন।
চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারিতে টেংরা বাঘমারা গ্রামের (১৫) বছরের এক কিশোরী বাদী হয়ে আছলাম উদ্দিন ওরফে বাদশা মিয়াকে একমাত্র অভিযুক্ত করে বিশ্বনাথ থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর ছোট ভাই নিখোঁজ হয়েছে মর্মে বিশ্বনাথ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন ধর্ষণ মামলায় আসামী আছলাম উদ্দিন ওরফে বাদশা মিয়ার বড় ভাই ‘মরহুম হাজী জবান উল্লাহ হাফিজিয়া মাদ্রাসা’ প্রধান শিক্ষক হাফিজ হাফিজ আকবর আলী।
এদিকে পুত্র নির্দোষ দাবী করে অভিযুক্ত আছলাম উদ্দিন ওরফে বাদশা মিয়ার মা আছিয়া বেগমের বলেন, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সাজানো মামলায় তার পুত্র বাদশাকে ফাঁসানো হয়েছে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে পুত্র বাদশা মিয়াকে পাশের বাড়ির রাসেল মিয়া মোবাইলে কল দিয়ে বাড়ি থেকে ওরসে যাবার জন্য ডেকে নিয়ে মিথ্যা ধর্ষণের অভিযোগ তুলে। থানায় পুত্র নিখোঁজ (২১ ফেব্রুয়ারি) হওয়ার পর থানায় জিডি (২২ ফেব্রুয়ারি) দায়েরের ৩দিন পর থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে ২৫ ফেব্রুয়ারি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মামলা দায়েরের ওই ভোর রাতে তার (আছিয়া) বড় পুত্র মরহুম হাজী জবান উল্লাহ হাফিজিয়া মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক হাফিজ আকবর আলী (৩০) ও মেঝো পুত্র রাজমিস্ত্রীর ঠিকাদার আছকর আলীকে (২৫) আটক করান প্রতিপক্ষের রাসেল মিয়া। তবে ওই দিন দুপুরে গ্রামবাসী ও এলাকাবাসী তার পুত্র আকবর আলীকে ছাড়িয়ে আনেন। কিন্তু মামলায় নিখোঁজ আছলাম উদ্দিন ওরফে বাদশা মিয়াকে একমাত্র অভিযুক্ত করা হলেও পুলিশ তার মেজো পুত্র আছকর আলীকে ধর্ষণের ঘটনার তারই ছোট ভাই বাদশার সহযোগী বানিয়ে আদালতে পাঠিয়েছে বলে অভিযোগ আছিয়া বেগমের।
সূত্র জানায়, টেংরা বাঘমারা গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী ফারুক মিয়ার বসত বাড়িতে বিল্ডিং নির্মাণ কাজ করতেন ঠিকাদার আছকর আলী। সহযোগী হিসেবে তার সঙ্গে কাজ করতেন তারই ছোট ভাই আছলাম উদ্দিন ওরফে বাদশা মিয়া (১৬) ও চাচাতো ভাই জুবেল আহমদ (২৫)। আর নির্মাণ কাজের তদারকির দায়িত্বে ছিলেন প্রবাসীর ভাতিজা রাসেল মিয়া (২৫)। ওই বাড়িতে কাজ করতেন প্রবাসীর আরেক আত্মীয় ও একই গ্রামের (১৫) বছরের এক কিশোরী। নির্মাণ কাজের কিছুদিন পর ঠিকারদার আছকর আলীর কাছে উৎকোচ দাবি করেন রাসেল। এ নিয়ে ঠিাকাদার ও রাসেলের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। বাকবিতন্ডার বিষয়টি জানতে পেরে প্রবাসী তার ভাতিজাকে কাজের তদারকির দায়িত্ব থেকে বাদ দিয়ে ঠিকাদার আছকর আলীর কাছে নির্মাণ কাজের তদারকির দায়িত্বও দিয়ে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রাসেল মিয়া গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে রামধানা ওরুসে যাবার কথা বলে আছকর আলীর ছোট ভাই আছলাম উদ্দিন ওরফে বাদশা মিয়াকে মোবাইলে ডেকে প্রবাসীর বাড়িতে নিয়ে বন্ধি করে রাখে।
এসময় রাসেল তার সহযোগীদের নিয়ে কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ এনে বাদশা মিয়াকে নির্যাতন করেন। পরের দিন ২১ ফেব্রুয়ারি প্রতিপক্ষ রাসেল ও হামিদার বাবার সাথে এক বৈঠকে বসেন বাদশা মিয়ার বড় ভাই। আর ওই বৈঠক থেকে বাদশা মিয়া বাড়িতে গিয়ে তার মাকে প্রতারণার শিকার হচ্ছে জানিয়ে বাড়ি থেকে চলে যায়। এর পর ২২ ফেব্রুয়ারি ভাই নিখোঁজের ঘটনায় থানায় জিডি করেন বাদশার বড় ভাই হাফিজ আকবর আলী। এর ৩ দিন পর ২৫ ফেব্রুয়ারি কিশোরী বাদী হয়ে আছলাম উদ্দিন ওরফে বাদশা মিয়াকে আসামী করে থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারী থেকে ২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ১৩ মাস হামিদাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছে বাদশা।
এ ব্যাপারে কিশোরী পিতা আবুল মিয়া বলেন, আমার দারোগা স্যার ছাড়া আমি কিছুই বলতে পারছি না। তবে, তার স্ত্রী রেখা বেগম এঘটনার ন্যায় বিচার দাবি করেছেন।
বাদশা মিয়ার বড় ভাই ইমাম ও মাদ্রাসা শিক্ষক আকবর আলী বলেন, তাকে ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক প্রতিপক্ষের লোকজন স্টাম্পে স্বাক্ষর নিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে জানতে রাসেলের বাড়িতে গিয়েও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা কিংবা বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
টেংরা বাঘমারা জামে মসজিদের মোতায়াল্লী হাজী নেছার আলী কটু মিয়া বলেন, ২৫ ফেব্রুয়ারি মসজিদে ফজরের নামাজে গিয়ে জানতে পারেন ইমাম হাফিজ আকবর আলী ও তার ভাইকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। পরে ওই দিন দুপুরে পঞ্চায়েত ও এলাকাবাসী মিলে ইমাম আকবর আলীকে ছাড়িয়ে আনেন। তবে ধর্ষণের ঘটনা সম্পর্কে তিনি অবগত নন বলে জানান।
একই গ্রামের মুরব্বী আলকাছ আলী ও মাসুক মিয়া বলেন, ঠিকাদার আছকর আলী ও রাসেলের মধ্যে প্রবাসীর বাড়ি নির্মাণ কাজ নিয়ে দ্বন্ধের কথা শুনেছেন। তবে ধর্ষণের ঘটনা সম্পর্কে তারাও কিছুই জানেন না।
মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ফজলুল হক বলেন, হাফিজ আকবর আলী তার ভাইকে সরিয়ে দিয়ে থানায় জিডি করেছেন। আর অভিযুক্ত বাদশাকে গ্রেফতারে পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
মামলার তদন্ত কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শামীম মুসা বলেন, কয়েক দিনের মধ্যেই এই মামলার চার্জশিট আদালতে প্রদান করা হবে।
বিশ্বনাথে প্রবাস ফেরত যুবকের আত্মহত্যা
বিশ্বনাথ :: সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় প্রবাস ফেরত এক যুবক আত্মহত্যা করেছেন। তার নাম বাবলা মিয়া (৩৫)। তিনি উপজেলার সদর ইউনিয়নের কারিকোনা গ্রামের ফিরোজ মিয়ার ছেলে। সোমবার রাতে নিজ শয়নকক্ষের সিলিং ফ্যানের সাথে ফাঁস দেন তিনি।
খবর পেয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে থানা পুলিশ।
সূত্র জানায়, বাবলা মিয়া ৬/৭ বছর ধরে ওমান প্রবাসী ছিলেন। করোনা প্রাদুর্ভাবের পূর্বে জানুয়ারি মাসে ছুটি নিয়ে দেশে ফেরেন তিনি। পরে ২৭ জুলাই রাত ৯টার দিকে পরিবারের সবার অগোচরে নিজ বসত ঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে লুঙ্গি দিয়ে ফাঁস নেন বাবলা।
এক পর্যায়ে পরিবারের লোকজন তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন। পরে
পুলিশ তার নিথর দেহ উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় বাবলার ছোট ভাই নাঈম মিয়া বাদী হয়ে বিশ্বনাথ থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছে।
এ বিষয়ে কথা হলে বিশ্বনাথ পুলিশ স্টেশনের উপ-পরিদর্শক (এসআই) গোপেশ দাস সাংবাদিকদের জানান, পরিবারের লোকদের ভাষ্যানুযায়ী তিনি ডিপ্রেশনেপ ভুগছিলেন। আমরা তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্যে সিলেট ওসমানী হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছি।