মঙ্গলবার ● ১১ আগস্ট ২০২০
প্রথম পাতা » অর্থ-বাণিজ্য » করোনার মধ্যেও কর্মচঞ্চল মোংলা সমুদ্র বন্দর
করোনার মধ্যেও কর্মচঞ্চল মোংলা সমুদ্র বন্দর
শেখ সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট প্রতিনিধি :: করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও কর্মচঞ্চল রয়েছে মোংলা সমুদ্রবন্দর। স্বাভাবিক রয়েছে বন্দরে জাহাজ আগমন-নির্গমনসহ পণ্য আমদানি ও রফতানি বাণিজ্য। কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিশেষ ঝুকি ভাতা প্রদান করে,স্বাথ্যবিধি মেনে পন্য উঠা নামার কাজ স্বাভাবিক রেখেছে বন্দর কতৃপক্ষ। বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানী-রপ্তানী কার্যক্রমের চলমান ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে যে কোন দূর্যোগকালীন সময়েও দেশের অর্থনীতিতে বড় ভুমিকা রাখবে মোংলা সমুদ্র বন্দর। আর জন প্রতিনিধিরা বলছেন,মহামারিকালে বন্দরে কর্মচঞ্চলতায় বেকার হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে এখানকার কর্মজিবীরা।
করোনার প্রভাবে ধবস নেমেছে সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে। কর্মহীন হয়ে পড়ছে হাজার হাজার মানুষ। তবে একেবারে ভিন্ন চিত্র মোংলা সমুদ্র বন্দরে। বাংলাদেশে যখনি করোনা রোগী সনাক্ত হয়,এরপর ওই ভাইরাসের সংক্রমন ঠেকাতে ছুটিসহ নানা নির্দেশনা জারি করে সরকার । এতে স্থবির হয়ে পড়ে দেশের আমদানী-রপ্তানীসহ অনেক কার্যক্রম। আর তখনি বিশেষ তদারকির মাধ্যমে আমদানী-রপ্তানী কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে নানা উদ্যোগ নেয় মোংলা বন্দর কতৃপক্ষ। এতে স্বাভাবিক কার্যক্রমের থেকেও বেড়ে যায় বন্দরে বানিজ্যিক জাহাজের আগমন আর কর্মচাঞ্চল্যতা।
মোংলা বন্দর কতৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাজাহান বলেন,মার্চ মাসে বাংলাদেশে যখন সড়ক পথে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় গাড়ী চলাচলের উপর নানা নির্দেশনা দেয়া হয়। তখন আমরা ঢাকা-চট্রগ্রাম থেকে মোংলা বন্দরে পন্য আসা যাওয়ার জন্য বিশেষ তদারকি শুরু করি। মাওয়া ঘাটে মোংলা বন্দররের পন্য বহনের জন্য বিশেষ ফেরি চালু রাখার ব্যবস্থা করি। একই সাথে সমুদ্র পথে আসা বিদেশি বানিজ্যিক জাহাজ গুলোর নাবিকরা করোনায় আক্রান্ত কিনা পরিক্ষার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের বিশেষ টিম গঠন করি। বন্দরের সিমানায় প্রবেশের সাথে সাথে ওই জাহাজ গুলোর নাবিকদের সকল পরিক্ষা সম্পর্ণ করে পন্য খালাসের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে জাহাজে উঠতে দেয়া হয়েছে। একই সাথে মোংলা বন্দরে কর্মরত সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর পরও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন,তাদের বন্দর কতৃপক্ষের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। বন্দরের রাজস্ব আয়ের লক্ষমাত্রা অর্জনের ধারা অব্যাহত রাখতে সকল ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। একই সাথে করোনার ঝুকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করায় নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে বন্দরের সকল কর্মকর্তা -কর্মচারীদের বিশেষ ঝুকি ভাতা প্রদান করা হয়েছে। এর ফলে গেল ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে বন্দরের রাজস্ব আয় লক্ষ মাত্রার চেয়ে বেশি আদায় হয়েছে।
মোংলা বন্দর কর্মচারী সংঘ(সিবিএ) এর সাধারন সম্পাদক মোঃ ফিরোজ আলম জানান,করোনার মহামারীতে দায়িত্ব পালনে উৎসাহ দিতে বন্দরে কর্মরত প্রায় এক হাজার ২শ” কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দেয়া হয়েছে মুল বেতনের আড়াইগুন ঝুকি ভাতা। এজন্য বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে সকল কর্মচারীদের সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সিবিএর পক্ষ থেকে। বন্দরের কর্মচারীদের করোনার দূর্যোগ কালীন সময়ে বিশেষ ঝুকি ভাতা প্রদানের উদ্যোগ নেয়ায় সিবিএর পক্ষ থেকে বন্দর চেয়ারম্যানের নিকট কৃতঞ্জতা প্রকাশ করেন সিবিএর এ নেতা।
মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী মের্সাস নুরু এন্ড সন্স এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এইচ এম দুলাল জানান, করোনাকালীন সময়ে পন্য বোঝাই ও খালাসে কোন বেগ পেতে হয়নি তাদের। করোনার দূর্যোগে পন্য উঠানামায় বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ায় তিনি ধন্যবাদ জানান,মোংলা বন্দরের উপদেষ্টা ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আবদুল খালেক ও মোংলা বন্দর কতৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাজাহান কে। ওই ব্যবসায়ী বলেন, সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে যখন করোনার প্রভাবে ভাটা দেখা দিয়েছে। তখন মোংলা বন্দর তাদের পন্য উঠা-নামা স্বাভাবিক রেখে রাজস্ব আয় লক্ষমাত্রার চেয়ে বেশি আদায় করে রেকর্ড় সৃষ্টি করেছে। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে দেশের অর্থনীতিতে বড় ভুমিকা রাখতে সক্ষম হবে মোংলা সমুদ্র বন্দর বলে মনে করেন এ ব্যবসায়ী। ।
স্থানীয় জন প্রতিনিধি মোংলা পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব মো. জুলফিকার আলী ও মোংলা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. ইকবাল হোসেন জানান,করোনার প্রভাবে সারা বিশ্বে অর্থনীতিতে ধবস নেমেছে। বেকার হয়ে পড়েছে অনেক মানুষ। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক উৎপাদন মুখি প্রতিষ্ঠানও। কিন্তু একেবারে ভিন্ন্ চিত্র ছিলো মোংলা সমুদ্র বন্দরে। এখানে পন্য উঠানামা স্বাভাবিক থাকায় বেকার হয়নি বন্দরের কোন কর্মকর্তা কর্মচারী। একই সাথে ব্যবসায়ীরা তাদের পন্য নিদিষ্ট সময়ে ছাড় করাতে পেরেছেন। এর ফলে বন্দরের আমদানী-রপ্তানী বানিজ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট কয়েক লক্ষ মানুষ করোনা কালিন সময়েও তাদের উপার্জন স্বাভাবিক রাখতে পেরেছেন। সর্বপরি করোনার দূর্ভোগে পড়ার কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে দক্ষিনাঞ্চলের কয়েক লক্ষ মানুষ। তাই শুধু করোনার দূর্যোগে নয়,বছরের ১২ মাসই পন্য-উঠানামায় বিশেষ ব্যবস্থায় নিতে মোংলা বন্দর কতৃপক্ষ ,উপদেষ্টা পরিষদ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের নিকট আহবান তাদের।