বুধবার ● ২ সেপ্টেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » করোনা আপডেট » মায়ের মরদেহ আটকে ছেলেকে পুলিশে দিল রাজশাহীর ইন্টার্নী চিকিৎসক
মায়ের মরদেহ আটকে ছেলেকে পুলিশে দিল রাজশাহীর ইন্টার্নী চিকিৎসক
মাইনুল হাসান, রাজশাহী প্রতিনিধি :: রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় পারুল বেগম নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা একজোট হয়ে ওই নারীর ছেলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মারধর করে।
মৃত পারুল বেগম ও ভুক্তভোগী রাকিবুল হক লিটন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার আটরশিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ইসাহাক আলীর স্ত্রী-সন্তান। ১ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার ভোরের এ ঘটনার পর মায়ের মরদেহ আটকে রেখে ছেলেকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করে। এমনকি এ দৃশ্য মোবাইলেও ধারণ করে। শেষে রাকিবুলকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়। পাঁচ ঘণ্টা পর মুচলেকা দিয়ে স্ত্রীর মরদেহ রামেক হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে আনেন ইসাহাক আলী।
ভুক্তভোগী বাবা-ছেলে জানান, সুচিকিৎসা নিশ্চিতে সরকারের বারবার নির্দেশনার পরও ইন্টার্নদের বেপরোয়া আচরণ একটুও কমেনি। উল্টো নিরাপত্তার কথা বলে তারা রামেক হাসপাতালে বিক্ষোভ করেছে।
সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ইসাহাক আলী জানান, তার স্ত্রী পারুল বেগম ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। মঙ্গলবার ভোরের দিকে মাথায় প্রচণ্ড ব্যথায় প্রায় অচেতন হয়ে পড়েন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়, মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে। সকাল ৭টার দিকে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। পৌনে ৮টার দিকে প্রথমে পারুল বেগমকে পাঠানো হয় ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে। সেখানে তখন কোনো চিকিৎসক ছিল না। রোগী বেশ কিছুক্ষণ মেঝেতেই পড়ে ছিলেন। আধা ঘণ্টা পর পারুল বেগমকে ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়। ওই সময় ওয়ার্ডে দায়িত্বরত ইন্টার্ন চিকিৎসক শোভন সাহার কাছে গিয়ে মাকে দেখার অনুরোধ জানান শিক্ষা কর্মকর্তা রাকিবুল হক লিটন। শোভন সাহা বলে দেন তার ডিউটি শেষ। পরের চিকিৎসক এসে দেখবেন। এরপর লিটন যান আরেক ইন্টার্ন চিকিৎসক আব্দুর রহিমের কাছে। তিনিও জানিয়ে দেন রোগী দেখতে পারবেন না। এভাবেই কেটে যায় আধ ঘণ্টা। চিকিৎসা ছাড়াই পারুল বেগম মারা যান।
রোগীর স্বজনরা জানান, চিকিৎসা ছাড়াই মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় ছেলে রাকিবুল ওয়ার্ডের ভেতরেই উচ্চস্বরে কান্নাকাটি করছিলেন আর চিকিৎসকদের দোষারোপ করছিলেন। ওই সময় ইন্টার্ন চিকিৎসক শোভন সাহা ও আব্দুর রহিম রাকিবুলের সঙ্গে ধ্বস্তাধস্তি করেন। এরপরই দুই ইন্টার্ন অন্যদের ফোন করে ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে ডেকে এনে রাকিবুলকে আটক ও মারধর করে। পরে রোগীর স্বজনদের ওয়ার্ড থেকে বের করে দিয়ে পারুল বেগমের মরদেহ আটকে পাহারা বসায় তারা। দুপুর সোয়া ১টায় ইসাহাক আলী লিখিত ক্ষমা চেয়ে হাসপাতাল থেকে স্ত্রীর মরদেহ নিয়ে যান। তবে পুলিশ ডেকে তার ছেলে রাকিবুলকে রাজপাড়া থানার ওসির কাছে হস্তান্তর করে ইন্টার্নরা।
ইসাহাক আলী বলেন, আমরা হাসপাতালের ডাক্তারদের যে ভয়ংকর চেহারা দেখলাম; তা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভুলবার নয়। যেখানে মানুষ বাঁচার জন্য আসে সেখানে জনগণের সঙ্গে কি দুর্ব্যবহারটাই না করলো। আমার ছেলেকে অন্যায়ভাবে পুলিশে দিয়েছে। সে তার মায়ের মরা মুখটাও দেখতে পারবে না। এরা কোন সমাজের মানুষ? এ অরাজকতার প্রতিকার কী?
রাজপাড়া থানার ওসি শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ইন্টার্ন ডাক্তাররা ঘটনার পর থেকে হাসপাতালের সব ওয়ার্ডে চিকিৎসা বন্ধ করে বসে ছিল। খবর পেয়ে আরএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থলে যান। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। দুপুরের পর পারুল বেগমের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ছেলে রাকিবুলকে পুলিশ আটক করেছে। ইন্টার্নরা অভিযোগ দিলে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।
রামেক হাসপাতাল ইন্টারর্ন চিকিৎসক পরিষদের নেতা মিজান বলেন, পারুল বেগমের ছেলে রাকিবুলের হামলায় ইন্টার্ন ডাক্তার শোভন ও রহিম আহত হয়েছে। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে হয়েছে।