রবিবার ● ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » পিতৃত্বের অধিকার বঞ্চিত এক পিতার আকুতি
পিতৃত্বের অধিকার বঞ্চিত এক পিতার আকুতি
শেখ সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট প্রতিনিধি :: “কাটে না সময় যখন আর কিছুতে,বন্ধুর টেলিফোনে মন বসেনা, জানালার গ্রিলটাতে ঠেকাই মাথা, মনে হয় বাবার মত কেউ বলেনা,আয় খুকু আয়”। এমনি আকুতি নিয়ে এক পিতা তার একমাত্র কন্যার বাবা ডাক শোনার প্রহর গুনে চলছে। মেয়েকে কাছে না পাবার যন্ত্রনায় তার হৃদয় কুঁড়ে কুঁড়ে ক্ষত বিক্ষত হচ্ছে।
এমনই এক পিতা ঢাকার এমএ মুহিত । ঢাকার মোহাম্মদপুর শ্যামলী খিলজী রোডের বাসিন্দা। পাশাপাশি একজন সরকারি চাকুরী ছিলেন। ২০১৩ সালে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার জিউধরা ইউনিয়নের লক্ষীখালী গ্রামের শাহজাহান মীরের কন্যা শাহনাজ পারভিন(২৭)কে বিয়ে করেন। স্ত্রী শাহনাজ পারভিন মোরেলগঞ্জের একটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রের এফডব্লিউভি হিসেবে কর্মরত আছেন। এসএসসি পাশের পর ঢাকায় এক সূত্রের মাধ্যমে মা ফাতেমা বেগম ও শাহনাজ পারভিনের পরিচয়। এ পরিচয় থেকেই পরিনয় । এরপর তিনি স্ত্রী শাহনাজ পারভিনকে ঢাকার আলহাজ¦ মকবুল হোসেন কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি করান। স্বামী মুহিত নিজের তদবিরেই চাকুরীর ব্যবস্থা করে দেন। তিনি লিখিত অভিযোগে জানান, তাদের দাম্পত্য জীবন চলাকালীন ২০১৪ ও ২০১৬ সালে শাহনাজ একাধিক গর্ভের সন্তান নানা অজুহাতে নষ্ট করে। এ নিয়ে ও স্ত্রী বেপরোয়া জীবন যাপনের কারনে দুজনার মনোমালিন্য চরমে উঠে । ফলে স্বামী মুহিত বাধ্য হয়ে ৯০ দিনের শর্তে স্ত্রীকে উকিল নোটিশ প্রদান করে। এরপরে পারিবারিক আপোষ মিমাংসার মাধ্যমে পুনরায় তারা দাম্পত্য জীবন শুরুর ২০১৮ সালে কন্যা সন্তানের পিতা হন মুহিত। নাম মুসফিকা মেহেনাজ চৌধুরী। মেয়ের বতর্মান বয়স ২ বছর ৭ মাস। উকিল নোটিশ, পারিবারিক সমঝোতা ও সন্তান জন্ম নেয়ার পরও স্ত্রী শাহনাজ পারভিন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। এরই প্রেক্ষিতে ২০২০ সালে ২৭ জানুয়ারী খোলা তালাকের মাধ্যমে দাম্পত্য জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে।
নিয়মানুযায়ী তিনি মেয়ের যাবতীয় খরচ বহন করছেন। তারপরও তার মেয়ে নানা অপুষ্টি ও অবহেলায় দিন যাপন করছে। শাহনাজের বেপরোয়া জীবন -যাপন, কন্যাকে নিজের কাছে না রাখা, সরকারী চাকুরী সব মিলিয়ে মেয়ে তার মায়ের আদর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। চাকুরীর সুবাধে বিভিন্ন টেনিং বাইরে থাকছে। অপরদিকে মেয়ে বঞ্চিত হচ্ছে তার অধিকার থেকে। । পিতা এমএ মুহিত বলেন, আমি একজন জন্মদাতা পিতা হিসেবে মেয়ের অবহেলা ও অযন্ত্রে ভীষনভাবে ব্যথিত। তার ভবিষ্যত জীবন নিয়েও শঙ্কিত । শাহনাজ মেয়েকে নিজের কাছে না রেখে মায়ের কাছে রেখে নিজে বেপরোয়া জীবন যাপন করছে। তিনি মেয়েকে ফিরে পেতে স্থানীয় অনেকের শরণাপন্ন হয়েছেন। এ অবস্থায় মেয়ের সুস্থ -সুন্দর জীবন ও ভবিষ্যত গড়তে তিনি তার মেয়েকে কাছে পেতে চান। তাই তিনি এ ব্যাপারে সকলের সহযোগীতা কামনা করেন।
এ ব্যাপারে শাহনাজ পারভিন বলেন, দাম্পত্য জীবন সুখকর না হওয়ায় পারিবারিকভাবে তার সাথে খোলা তালাক হয়। আইননানুযায়ী মেয়ে আমার কাছে থাকবে। মুহিত আসলে মেয়েকে নিতে চায়না। সে চায় আমাকে একনো নানাভাবে হয়রানি করছে । বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করছে। আমি যাতে চাকুরী করতে না পারি সেজন্য ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে।
করোনার মধ্যেও এবার আগাম টমেটো চাষে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন
বাগেরহাট :: প্রকৃতি জানান দিচ্ছে শরতের উপস্থিতি। কিন্তু দেরি সইছে না চাষিদের। করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা লোকসান পুষিয়ে নিতে আগাম টমেটো চাষে ঝুঁকছেন। ভালো বাজারদর পেতে শীতকালীন টমেটো বাজারে তুলতে এখনই মরিয়া হয়ে উঠেছেন বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার চাষিরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গত মাসের বন্যায় সবজিক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। বর্ষাকালীন সবজি লাউ, কুমরা, করলা, শশা চাষ করে লোকসান গুণতে হয়েছে তাদের। এ বছর বন্যায় তাদের সর্বশান্ত করে রেখে গেছে। নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য আগাম টমেটো চাষ করে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন এসব চাষিরা। এলাকার চিংড়ি ঘেরের পাড়ে শত শত হেক্টর জমিতে টমেটো লাগিয়েছেন তারা। রাত-দিন সমান তালে ক্ষেতের পরিচর্যায় সময় পার করছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগাম টমেটো চাষের মাধ্যমে বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।
উপজেলার চরবানিয়ারী পশ্চিমপাড়া গ্রামের টমেটো চাষি আশীষ গাইন জানান, অতি বৃষ্টির কারণে এ বছর সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষি কাজে নির্ভরশীল এলাকার মানুষ। এখানকার চাষিদের আবাদকৃত সবজি থেকে দেশের বড় চাহিদা মেটানো হয়ে থাকে। চট্রগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা ও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এখানকার সবজি চালান হয়ে থাকে।
কৃষ্ণনগর গ্রামের আরেক টমেটো চাষি কানাই মজুমদার জানান, তিনি ৮ বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছেন। এলাকার ৭টি ইউনিয়নের কয়েক হাজার চাষি এ বছর ব্যাপক ভাবে জমিতে আগাম উচ্চফলনশীল জাতের টমেটো আবাদ করেছেন। এসব জমিতে উচ্চফলনশীল জাতের লাভলী, বিউটি, হাইটম, বিপুলপ্লাসসহ নানা জাতের টমেটোর চারা লাগিয়েছেন তারা। অবহাওয়া ভালো থাকলে আগাম টমেটো বাজারে তোলা সম্ভব হবে। এসব টমেটোর ভালো বাজার দর পাওয়া যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
উপজেলা কৃষি অফিসার ঋতুরাজ সরকার জানান, কৃষিকাজে এখানকার চাষিরা বেশ তৎপর। বিশেষ করে সবজি চাষে চাষিরা বেশ সাফল্য এনেছেন। আগাম টমেটো চাষের প্রতি দিনদিন চাষিরা ঝুঁকছেন। স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে চাষিদের মাঝে বিনা মূল্যে বীজ, সার, কীটনাশকসহ নানা কৃষি উপকরণ দেওয়া হয়। পাশাপাশি টমেটো চাষের জন্য সবধরণের পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়া হয়ে থাকে।